বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
সিপিডির সংলাপে বক্তারা

শ্রম অধিকার রক্ষায় আইএলও মানদণ্ড অনুসরণের তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শ্রম অধিকার রক্ষার বিষয়টি এই মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নীতিমালা অনুযায়ী শ্রম আইন বাস্তবায়ন ও শ্রম অধিকার রক্ষায় নজর দিতে হবে। গতকাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ এবং এসডিজি বাস্তবায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রমমান বাস্তবায়নের ক্রমবর্ধমান তাগিদ’ শীর্ষক ওই সংলাপে মূল্য প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সংলাপ অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, খাত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, কারখানা মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেবল গার্মেন্ট নয়, সব ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রম অধিকার রক্ষায় সমান গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায় এসডিজি অর্জন কিংবা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ অর্থহীন হয়ে যাবে। ফলে এর সুফল ভোগ করা যাবে না। আলোচনায় শ্রমিক নেতারা বলেন, বলা হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের অনেক সুবিধাই থাকবে না। তবে আইএলওর নীতিমালা অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধন, বাস্তবায়ন ও শ্রম অধিকার রক্ষা হলে বাংলাদেশও পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মতো জিএসপি প্লাসের আওতায় রপ্তানিতে সুবিধা পাবে। তারা বলেন, শ্রমিকের জন্য অনেক কথা হয়, কিন্তু বাস্তবতা কী তা পর্যালোচনা করা দরকার। যেসব সুবিধার কথা আলোচনা হয়, তার কতটুকু শ্রমিকের কাছে যাচ্ছে তাও দেখা দরকার। কত শ্রমিক রোগে ভুগে মারা যাচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান দরকার। শ্রমিক নেত্রী ও গার্মেন্টের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের মজুরি বোর্ডের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি বলেন, কাউকে মূল স্রোতের বাইরে রেখে এগিয়ে যেত পারব না। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এমন জায়গায় যেন না যাই, কিছু প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন বাস্তবায়ন করতে পারছে, আবার কেউ করতে পারছে না। এখন বহুপক্ষীয় শ্রমমানের ইস্যুটি আলোচনায় আসছে।

আমাদের প্রবৃদ্ধি হলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্মসংস্থার বাড়েনি। আবার যে কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, তাও শোভন নয়। শ্রম মানের উন্নয়নে কাজ করা সংশ্লিষ্ট পক্ষের সমন্বয়েরও তাগিদ দেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে শ্রম মানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি কী ধরনের অগ্রগতি করতে হবে তার ওপর আলোকপাত করা হয়। একই সঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হওয়া দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশের বর্তমান শ্রমমান পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশ আইএলওর ৮টি মূল নীতিমালার ৭টি স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া সুশাসন সংক্রান্ত ৪টির মধ্যে ২টি ও কারিগরি নীতিমালার ১৭৭টির মধ্যে ২৬টি অনুস্বাক্ষর করেছে। যেগুলো স্বাক্ষর করেছে তার বাস্তবায়ন চলমান আছে। তবে নীতিমালার আরও বেশ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশকে অগ্রগতি করতে হবে। শ্রম অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও আইএলওর নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রম আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, বিধি প্রণয়ন ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) শ্রম আইন কার্যকর করতে হবে।

সর্বশেষ খবর