বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

চাকরি প্রার্থী হিজড়াকে এ কেমন প্রশ্ন!

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভুগোল এবং ইংরেজিতে ডাবল এমএ সুচিত্রা দে (৩০) যখন স্কুলের শিক্ষিকার চাকরির পরীক্ষা দিতে গেলেন তখন ভেবেছিলেন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তার এই ডিগ্রি যথেষ্ট। কিন্তু পরীক্ষকদের মুখোমুখি হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই ভুল ভাঙল সুচিত্রার। ডাবল এমএ করার পাশাপাশি একটি প্রাথমিক স্কুলে পড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে সুচিত্রার। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার পরিবর্তে তাকে যৌন জীবন সম্পর্কিত প্রশ্ন করলেন প্রশ্নকর্তা। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো তার স্তনযুগল আসল কিনা বা তিনি সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন কিনা। স্কুলেরই প্রধান পুরুষ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এরকম অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলেছেন সুচিত্রা দে। ২০১৭ সালে সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি (এসআরএস) করে হিরন্ময় দে তার নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন সুচিত্রা দে। এ ব্যাপারে তিনি জানান, ‘ভুগোল ও ইংরেজিতে আমার ডাবল এমএ করা আছে। ২০১৪ সালে ভারতের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট হিজড়াদের (ট্রান্সজেন্ডার) ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ ক্যাটাগরির স্বীকৃতি দিয়েছে।

 সুচিত্রা তার একটি আশ্চর্যরকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি যখন কলকাতার একটি অতি পরিচিত স্কুলে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাই, স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে পুরুষদের পোশাক পরতে বলে। কারণ আমার যাবতীয় প্রশংসাপত্রে পুরুষ নাম (হীরন্ময় দে) লেখা রয়েছে। স্কুলের পুরুষ প্রিন্সিপাল আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি সন্তান ধারণ করতে পারব কিনা? তিনি আরও জানতে চান যে, আমার স্তন আসল কিনা? আমি সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারব কিনা?’ সুচিত্রার প্রশ্ন— ‘আমি যদি একজন রূপান্তরকামী নারী না হতাম তবে আমাকে কি এ ধরনের প্রশ্ন করা হতো?’

অপমানজনক বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এখন ন্যায়বিচারের আশায় পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশন (ডব্লিউবিএইচআরসি)- এর দ্বারস্থ হয়েছেন সুচিত্রা।  সার্জারির আগে কলকাতার ঠাকুরপুকুর এলাকায় একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন সুচিত্রা।

এখনো সেখানেই শিক্ষকতা করেন তিনি। সুচিত্রা জানান, ‘এই স্কুলের প্রত্যেকেই যথেষ্ট সহায়তাকারী। সার্জারির পরেও স্কুলের ম্যানেজমেন্ট এখানে নতুন করে যোগদানের ব্যাপারে খুশি। এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াই।’ তিনি আরও জানান, ‘আমি শেষ পর্যন্ত একজন নারী হয়েই জীবন ধারণ করতে চাই।’

যদিও যে স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে সুচিত্রাকে অস্বস্তিকর প্রশ্ন করে অপমান করার অভিযোগ উঠেছে তারা প্রত্যেকেই বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

গুরুকুল বিদ্যামন্দিরের প্রিন্সিপাল অনিমেশ দে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, যদি মানবী মুখোপাধ্যায়ের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা কলেজের প্রিন্সিপাল হতে পারেন তারা শিক্ষকের চাকরিও করতে পারেন, এতে কোনো অসুবিধা নেই।’

সর্বশেষ খবর