সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
অর্থনীতি সমিতির সেমিনার

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ক্ষতি সাড়ে তিন লাখ কোটি ডলার’

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ৩৬ বছরে বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত আর্থিক ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৮৯ কোটি মার্কিন ডলার। এই হিসাব কষেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। আর বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকতে বাংলাদেশ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হবে বলে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হতো বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, শূন্য গুদামঘর, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ৮ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত আর কখনো অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত “বঙ্গবন্ধু ‘বেঁচে থাকলে’ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ কত দূর যেত?” শীর্ষক সেমিনারে দুই বক্তা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। সংগঠনটির সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহর সভাপতিত্বে সেমিনার পরিচালনা করেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।

 তিনি জীবিত থাকলে তার এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার পর যারা মনে করত বাংলাদেশ টিকবে না, তারাই এখন বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে, অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের অর্জন কম নয়। মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ২৭০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার দুই মাস আগে বলেছেন, ‘আমি অনেক রাজা-উজিরের সাক্ষাৎ পাই। শুধু একজন জাতির পিতার (বঙ্গবন্ধু) সাক্ষাৎ পেয়েছি।’ তার মতে, বাঙালি বড়ই কৃপণ। শেখ মুজিবকে তার কৃতিত্ব দিতে চায় না।

বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন একজন, আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সম্মানিত। কিন্তু দেশে তার সম্মান কতটুকু তা জানি না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গণজোয়ারের সময়ও তিনি মনোনয়ন পাননি। বঙ্গবন্ধু তার তিনটি আসনের একটি থেকে তাকে পাস করিয়ে আনেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধু নিজের আসন থেকে তাকে পাস করিয়ে এনেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর আসন থেকে এককভাবে নির্বাচন করে ৬১৮৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।’

ড. কামালের সমালোচনা করে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘তিনি এখন বাংলাদেশের বিপক্ষে, বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিপক্ষে। তিনি জঙ্গিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাকে একটা দূতাবাসে দেখা গেছে। বুকে হাত দিয়ে ড. কামালের চিন্তা করা উচিত, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু তার জন্য কী করেছেন। শেখ হাসিনা তার জন্য কী করেছেন। ১৯৯১ সালে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাকে সরিয়ে মিরপুর থেকে ড. কামালকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

মূল প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্নকেই হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৯৪-৯৫ সালেই মাথাপিছু জিডিপিতে মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় দাঁড়াত ৪২ হাজার ৫১৪ কোটি ডলার। ওই সময় মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ছিল ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ডলার।

বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে ১৯৭৩ থেকে ২০১১ পর্যন্ত গড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতো জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে ১৯৭৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ তিন লাখ ৪১ হাজার ৬৮৯ কোটি ডলার। তবে তার এসব হিসাবের সরাসরি বিরোধিতা না করে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘আমি একজন হোমিওপ্যাথিক অর্থনীতিবিদ। আপনার বিশ্লেষণ আমার কাছে স্থবির। দুনিয়া কিন্তু গতিশীল!’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, যদি বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা ক্ষমতায় না আসত, তাহলে বাংলাদেশ মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেত। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু আরও উন্নয়ন হতে পারত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনের মূল বিষয় ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তার দর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলের যেখানে থাকার কথা ছিল, সেখানে যেতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর