বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

১০ দিনেও গ্রেফতার হয়নি সেই ধর্ষক

মাহবুব মমতাজী

তখন ঘুমে ছিল ১২ বছর বয়সী সাগরিকা বেগম তৃপ্তি। সে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়ী এলাকার তেজগাঁও বিজি প্রেস প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। কাজের উদ্দেশ্যে সকালেই বাসা থেকে বেরিয়ে যান তার মা রওশন আরা ও বাবা হাসান আলী। মেয়েকে না জাগিয়ে তারা দরজা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে চলে যান। তারা চাননি মেয়ের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে। রওশন আরা ও হাসান আলীর মেয়ের ওই ঘুমই পরে চিরঘুমে পরিণত হলো। ৪ আগস্ট সকালে বেগুনবাড়ী এলাকায় রুবেলের বাড়ির দোতলার একটি কক্ষের মেঝে থেকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তৃপ্তির লাশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য তৃপ্তির লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠায় পুলিশ। স্বজনদের অভিযোগ, তাদের পাশের ঘরের মেস ভাড়াটিয়া আলম (২২) ধর্ষণের পর তৃপ্তিকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রাখে। এরপর আলম দুই ঘণ্টা লুকিয়ে থাকে ওই ঘরেরই কার্নিশে। সকাল ৯টার দিকে তৃপ্তির স্বজনরা ঘরের দরজা খুললে সবার চোখের সামনে দিয়েই পালিয়ে যায় অভিযুক্ত ওই যুবক। তার পালিয়ে যাওয়ার সেই দৃশ্য ধরা পড়ে হাতিরঝিল-সংলগ্ন একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরায়।

ফুটেজে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, গোলাপি রঙের টিশার্ট আর থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা আলম সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে তৃপ্তিদের বাড়ির গলি থেকে বেরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় হাতিরঝিলের দীপিকার মোড়ের দিকে। পরে পুলিশ আলমের পাঁচ মেস পার্টনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ঘটনার ১০ দিন পার হলেও অভিযুক্ত ধর্ষকের অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই কামাল হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, ওই বাড়ি থেকে লাফিয়ে পালানোর সময় আলম তার ব্যবহূত মোবাইল ফোনটি ফেলে যায়। তার সেই মোবাইলটি জব্দ করা হয়েছে। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সে যোগাযোগ না করায় তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আলম দীর্ঘদিন ধরে তৃপ্তিকে পছন্দ করত। কিন্তু তৃপ্তি তাকে পাত্তা দিত না। ঘটনার দিন ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আলম।

জানা যায়, উত্তর বেগুনবাড়ী সিদ্দিক মাস্টার ঢালের ৪৭ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকত তৃপ্তি। ঘটনার দিন সকালে পাশের ঘরের ভাড়াটেরা তৃপ্তির ঘর থেকে ‘ও মাগো’ একটি চিৎকার শোনেন। পরে সন্দেহ হলে তারা এসে তৃপ্তির বাসার সদর দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। ভিতরে ধস্তাধস্তির শব্দ শুনে খবর দেন তৃপ্তির বাবা হাসান আলীকে। পরে বাড়ির অন্যদের নিয়ে ভেনটিলেটর ভেঙে ভিতরে ঢুকে তারা দেখতে পান, মেঝেতে বিবস্ত্র, অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে তৃপ্তি। এ সময় দরজায় তালা মেরে স্থানীয়রা শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তৃপ্তিকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ নিয়ে যায় এবং ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। এ সময় দরজায় তালা পড়ায় তৃপ্তির কক্ষে আটকা পড়ে আলম। সকাল ৯টার কিছু সময় পরে তৃপ্তির বড় বোন কুলসুম, মুন্নিসহ আরও কয়েকজন মহিলা সেই ঘরের দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢোকেন। তখন আলম সানশেডের ওপর থেকে হুড়মুড়িয়ে লাফিয়ে পড়ে তাদের ওপর। মুন্নিসহ উপস্থিত মহিলারা পড়ে গেলে দৌড়ে পালায় আলম। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট তৃপ্তি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর