শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মুখ থুবড়ে পড়েছে বরিশাল জেলা পরিষদের কার্যক্রম

শুরুই হয়নি গেল অর্থবছরের উন্নয়নকাজ প্রণীত হয়নি নতুন বছরের বাজেটও

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল জেলা পরিষদের কার্যক্রম একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম নিয়মিত অফিসে না আসায় এবং পরিষদের সভা নিয়মিত না হওয়ায় থমকে গেছে অন্তত ১০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের কাজও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।

১৫ জুলাইর মধ্যে পরবর্তী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করার নিয়ম থাকলেও এখন পর্যন্ত বাজেটও তৈরি হয়নি। জুলাইর সম্মানি ভাতাও পাননি পরিষদের ২০ জন সদস্য। এমনকি জেলা পরিষদের ডাকবাংলোসহ সম্পদের কোনো খোঁজখবরও জানেন না পরিষদের সদস্যরা। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্যদের মাঝে। সবকিছু মিলিয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে বরিশাল জেলা পরিষদে।

২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মইদুল ইসলাম দলীয় মনোনয়নে বরিশাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারি চেয়ারম্যান, ৫ সংরক্ষিত ও ১৫ জন সাধারণ সদস্য— এই ২১ সদস্যের পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নতুন পরিষদ দায়িত্ব নেওয়ার পরই জেলা পরিষদের কার্যক্রম শ্লথ হয়ে পড়ে।

জেলা পরিষদ সদস্য মো. মুনওয়ারুল ইসলাম অলি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রায় ১০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ শেষ হয়নি। বিদায়ী অর্থবছরের ১০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ এখন পর্যন্ত শুরুই হয়নি। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রণীত হয়নি নতুন অর্থবছরের বাজেট। বাজেট প্রণীত না হওয়ায় এখন পর্যন্ত জুলাইয়ের সম্মানি ভাতাও পাননি পরিষদের সদস্যরা। কাজে গতি ও স্বচ্ছতা আনতে গত ২৭ মে পরিষদের মাসিক সভায় জেলা পরিষদ আইন, ২০০০-এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী ‘সহায়ক কমিটি’র প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে চেয়ারম্যান অস্বীকৃতি জানান। সর্বশেষ ২২ জুলাইয়ের সভায় সদস্যরা অংশগ্রহণ করলেও চেয়ারম্যান একতরফাভাবে প্রকল্প পাস না করায় সহায়ক কমিটি ও আর্থিক অনুমোদন ছাড়াই সভা শেষ হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাপের মুখে তাদের জুলাইয়ের বেতন-ভাতা পরিশোধ করলেও সদস্যদের সম্মানি পরিশোধ না করেই চেয়ারম্যান ঢাকা চলে যান। চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময় ঢাকাসহ দেশের বাইরে গেলেও প্যানেল চেয়ারম্যান কাউকে দায়িত্ব দিয়ে না যাওয়ায় পরিষদের দাফতরিক ও উন্নয়নকাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়।

জেলা পরিষদের সংরক্ষিত সদস্য সেলিনা বাদল বলেন, বার্ষিক মোট উন্নয়ন বরাদ্দের ৩ ভাগের ২ ভাগ চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাবলে এবং অন্য ১ ভাগ সদস্যদের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত সভায় চেয়ারম্যানের নামসর্বস্ব প্রকল্প সদস্যরা পাস না করায় তিনি সদস্যদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন এবং কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। কেন এই অচলাবস্থা— জানতে চাইলে সেলিনা বাদল বলেন, ‘চুরি’। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের ভুয়া প্রকল্প পাস না করায় তিনি সদস্যদের ওপর রাগ করে সভা থেকে চলে যান। সেলিনা বাদল আরও বলেন, জেলা পরিষদ পরিচালনাধীন মিরগঞ্জ ও গোমা ফেরিঘাটে প্রতিনিয়ত ইজারাদারের অত্যাচার ও যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেই। পরিষদের সম্পদ কোথায় কী আছে তাও তারা জানেন না। বেদখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধারেও উদ্যোগ নেই। জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ব্যবহারের নীতিমালাও মানা হচ্ছে না। চেয়ারম্যান নিয়মবহির্ভূতভাবে তার ঘনিষ্ঠদের উন্নয়নকাজ পাইয়ে দিচ্ছেন।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মইদুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, ‘জেলা পরিষদ আইন, ২০০০ পরিবর্তন করে ২০১৭ সালের ২৫ মে প্রণীত নতুন আইনে জেলা পরিষদে সহায়ক কমিটির কোনো বিধান নেই। তার পরও সহায়ক কমিটির বিষয়ে মতামত চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সহায়ক কমিটি অনুমোদন না করায় পরিষদের ২২ জুলাইয়ের গত সভায় সদস্যরা নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেননি।’ তিনি বলেন, ‘২০১৬-১৭ অর্থবছরের কিছু কাজ এখনো চলমান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের উন্নয়ন বরাদ্দের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’ উন্নয়ন বরাদ্দে বৈষম্যের বিষয়ে মইদুল ইসলাম বলেন, ‘বার্ষিক বরাদ্দের মধ্যে সবার আগে এমপিদের প্রকল্প অগ্রাধিকার পায়। এরপর বিভিন্ন নেতা, সিইওসহ অনেকেই প্রকল্পের সুপারিশ করেন।’ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, শেষে যতটুকু বাকি থাকে তার মধ্যে তিনি ও সদস্যরা সমভাবে প্রকল্পের বরাদ্দ পান। তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় সদস্যদের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করাসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মইদুল ইসলাম।

জেলা পরিষদের সচিব মানিকহার রহমান বলেন, দুই বছর আগের কিছু প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। গত বছরের বরাদ্দের বিপরীতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সহায়ক কমিটি ও নতুন অর্থবছরের বাজেটের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর