শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজধানীতে স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ স্বামী দুই সন্তান হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি বাসা থেকে জোসনা সুলতানা (৩৮) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার স্বামী সাইদ হোসেন স্বপনকে (৪০) পাওয়া গেছে রক্তাক্ত যখম অবস্থায়। গলা কাটা অবস্থায় বিছানার ওপর কাতরাচ্ছিলেন তিনি। তাদের দুসন্তানকে উদ্ধার করা হয় অচেতন অবস্থায়। এই তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দুসন্তানকে ছেড়ে দেওয়া হলেও স্বপনের চিকিৎসা চলছে। জোসনার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বেলা সোয়া ১২টার দিকে গোলাপবাগের ২৫-খ/১ নম্বর বাড়ির ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে দুসন্তানকে অচেতন করে স্বামীকে হত্যার চেষ্টার পর স্ত্রী আত্মহত্যা করে। জোসনার স্বজনরা বলছেন, স্বামীর পরকীয়া এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় জোসনা। জোসনার চাচাতো ভাই আবদুল করিম জানান, দুপুরে খবর পেয়ে ৫ম তলার ওই বাসায় গিয়ে এক রুমে স্বপনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।

পাশের রুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলতে দেখি জোসনাকে। আর জোসনার ছেলে সাজিদ হোসেন ইফতি (১৫) ও মেয়ে সানজিদা আক্তার জোহাকে (৭) অচেতন অবস্থায় বিছানায় দেখতে পাই।

দ্রুত তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জোসনাকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বপনকে ভর্তি রাখা হলেও ইফতি ও জোহাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৮ নম্বর গোলাপবাগের স্থায়ী বাসিন্দা জোসনা। ২৫-খ/১ নম্বর গোলাপবাগের বাসায় পাঁচ বছর ধরে ভাড়া থাকছেন। স্বপন বেইলি রোডে ইনফিনিটি মেগা শপের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন।

স্বজনরা শিশু দুটির বরাত দিয়ে জানান, মা জোসনা তাদের পানি খাওয়ায়। এর পরপরই তারা ঘুমিয়ে পড়ে। আর কিছুই দেখেনি তারা। স্বামী স্বপন ১০-১২ বছর ধরে পরকীয়া এবং পরে তাকে বিয়ে করেছে এমন সন্দেহে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই ছিল। স্বপন প্রায়ই জোসনাকে নির্যাতন করত। এসব সহ্য করতে না পেরে জোসনা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, স্বপনের ঘাড়ে ৩টি, গলার নিচে একটি ও বাম হাতে একটি ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আঘাতের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, তিনি (স্বপন) নিজে এটি করতে পারেননি। অন্য কেউ তাকে আঘাত করেছে।

জোসনার বড় বোন আবিদা সুলতানা জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদীতে। পারিবারিকভাবে স্বপনের সঙ্গে জোসনার বিয়ে হয়। স্বপন দীর্ঘদিন ধরে তিন সন্তানের জননী রুমি নামে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়া করে আসছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। সম্প্রতি স্বপন ওই নারীকে বিয়ে করেছে বলে জানতে পেরেছি। এরপর পারিবারিক বিরোধ আরও বেড়ে যায়। স্বপন সপ্তাহের তিন দিন বিভিন্ন অজুহাতে রুমি নামে ওই নারীর সঙ্গে সময় কাটাতেন। এ বিষয়ে কথা বললেই স্বপন জোসনাকে মারধর করত।

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে জোসনা তার দুই সন্তানকে অচেতন এবং স্বামীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন। পরে তিনি নিজে পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জানা গেছে, ইফতি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণিতে এবং জোহা মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণিতে পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর