বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হোয়াইট হাউসে ফের ঝড় তুলেছে উডওয়ার্ডের বই

প্রতিদিন ডেস্ক

বিখ্যাত আমেরিকান অনুসন্ধানী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড। তিনি ফাঁস করেছিলেন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি। সেই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি ফাঁস করে ১৯৭০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পতন ডেকে এনেছিলেন। যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য তার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। সেই বব উডওয়ার্ড এবার বই লিখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে। বইটির নাম ‘ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’। বইটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের ভিতরের বহু বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। যার মধ্যে অন্যতম ডায়ালগ হচ্ছে ‘চলো আমরা সিরিয়ায় ঢুকে বাশার আসাদকে মেরে ফেলি।’

ট্রাম্প একবার সিরিয়ায় রাসায়নিক আক্রমণের ঘটনার পর সে দেশে হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদকে হত্যা করার কথা বলেছিলেন। ‘ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ নামের এ বইয়ে বব উডওয়ার্ড এমন সব লোকদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন যারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলেছেন এবং বর্ণিত বৈঠকগুলোতে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন।

চলো আমরা সিরিয়ায় গিয়ে আসাদকে মেরে ফেলি : ২০১৭ সালের এপ্রিলে সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটল। ধরা হলো, সিরিয়ান সরকারি বাহিনীই এ কাজ করেছে।

ট্রাম্প প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসকে বললেন প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে হত্যা করার কথা। তিনি নাকি বলেছিলেন, তাদের কিছু একটা করা দরকার। চলো আমরা সিরিয়ায় যাই, আসাদকে (গালি) মেরে ফেলি, ওদের সবাইকে (গালি) মেরে ফেলি। ম্যাটিস প্রথম তা মেনে নিলেও পরে বলেছিলেন, তিনি এমন কিছু করবেন না।

আপনি হাজিরা দেবেন না, দিলে আপনাকে জেলে যেতে হবে : ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগের যে তদন্ত করছে রবার্ট মুলারের বিশেষ কৌঁসুলিরা তার সামনে হাজিরা দিতে হলে প্রেসিডেন্ট তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব ঠিকমতো দিতে পারবেন কিনা তা দেখতে একটা ‘পরীক্ষামূলক মহড়ার’ আয়োজন করেছিলেন তার আইনজীবী জন ডাউড। সেই মহড়ায় দেখা গেল, চোখা চোখা প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ট্রাম্প হয়রান হয়ে পড়ছেন, এক পর্যায়ে ক্রুদ্ধভাবে এই তদন্তকে ভুয়া বলে বর্ণনা করছেন। জন ডাউড বললেন, আপনি সাক্ষ্য দিতে যাবেন না। এটা করলে আপনাকে কমলা রঙের জাম্পস্যুট পরতে হবে (অর্থাৎ জেলে যেতে হবে)। ডাউড তখন মুলারের সঙ্গে দেখা করে বললেন তিনি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তদন্তকারীদের সাক্ষাৎকারের বিরোধী। কারণ তিনি চান না যে প্রেসিডেন্টকে ‘একটা নির্বোধের মতো’ দেখাক এবং বিশ্বের সামনে গোটা জাতিকে লজ্জা পেতে হয়। কিন্তু পরে ডাউড যখন জানলেন যে, প্রেসিডেন্ট সাক্ষ্য দেবেন বলে মন স্থির করেছেন, তার পরদিনই তিনি পদত্যাগ করলেন।

প্রেসিডেন্টের ডেস্ক থেকে কাগজ চুরি : উডওয়ার্ড বলছেন, ট্রাম্পের বিপজ্জনক প্রবণতার ধারণা পাওয়া যায় এ ঘটনায়। তিনি একটি দলিলে স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন যার মাধ্যমে উত্তর আমেরিকান ফ্রি ট্রেড চুক্তি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তিনি যাতে এতে স্বাক্ষর করতে না পারেন সে জন্য তার প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোহন এবং হোয়াইট হাউসের স্টাফ সেক্রেটারি রব পোর্টার দলিলগুলো সরিয়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলেন।  উডওয়ার্ড ঘটনাটিকে বর্ণনা করেছেন ‘একটি প্রশাসনিক ক্যু দেতার চাইতে কম কিছু নয়’ হিসেবে।

বদমেজাজি প্রেসিডেন্ট : উডওয়ার্ড লিখেছেন, বদমেজাজি ট্রাম্প সব সময়ই হোয়াইট হাউসে তার কর্মকর্তাদের বকাঝকা করেন। তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কোহনের মতে, ট্রাম্প একজন ‘পেশাদার মিথ্যাবাদী’।

ট্রাম্প সম্পর্কে অন্যরা যা বলতেন : ট্রাম্প নিজে অন্যদের নিয়ে যে রকম কটু কথা বলেন, তার স্টাফরাও পাল্টা বলতে ছাড়েন নি। উডওয়ার্ডের বইতে সে রকম কিছু তথ্যও আছে। তার চিফ অব স্টাফ কেলি একবার ট্রাম্প সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি একটি নির্বোধ (ইডিয়ট) এবং তাকে কোনো কিছু বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস বলেছিলেন, পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে ট্রাম্পের জ্ঞানবুদ্ধি ক্লাস ফাইভ-সিক্সে পড়া একটা ছেলের মতো। ট্রাম্পের বেডরুমকে ‘শয়তানের কারখানা’ বলে বর্ণনা করেছেন কেলির পূর্বসূরি রেইন্স প্রাইবাস। উডওয়ার্ড আরও লিখেছেন, ট্রাম্প নিজে মনে করেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার চেয়ে চমৎকার কাজ আর কেউ করতে পারেন নি। বিবিসি, এএফপি

সর্বশেষ খবর