শনিবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

চুক্তি না থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি বিরল স্থলবন্দর

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

বেসরকারি পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ করলেও সড়ক, রেল যোগাযোগ এবং বাণিজ্য চুক্তি না থাকায় বিরল স্থলবন্দর এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি। অথচ ভারত, নেপাল, ভুটান রেলপথ ও সড়কপথে বিরল স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য পরিবহনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটি চালু হলে ভারত, ভুটান, নেপাল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বার হতে পারে। বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে একদিকে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বেকারত্ব দূর হবে, পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। এ ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে এই অঞ্চলে। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। অন্যদিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে এই স্থলবন্দর।

প্রায় এক যুগ বন্ধ থাকার পর গত বছরের মে মাস থেকে দিনাজপুরের বিরল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে আজও সড়কপথে শুরু হয়নি। তবে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে। সড়ক নির্মাণের পর থেকে ওই এলাকার রাস্তার দুই পাশের জমির মূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন্দরটি চালু না হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দীর্ঘসূত্রতাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বিরল স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ দ্রুত চালুর দাবি এ অঞ্চলের মানুষের। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আজহার ইসলাম জানান, বর্তমানে রেলপথে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। তাই বিরল স্টেশনেই বিরল ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন এবং বিরল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট অফিস রয়েছে।

জানা যায়, দিনাজপুর শহর থেকে হিলি স্থলবন্দরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। সেখানে বিরল স্থলবন্দরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। এরপর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও অধিগ্রহণকৃত জমির ওপর কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল কয়েকবার বিরল স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছে। গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর নেপালের রাষ্ট্রদূত প্রফেসর ড. চোপলাল ভুষাল বিরল-রাধিকারপুর রেলপথের পাকুড়া চকশংকর এলাকার বিডি সাইটও পরিদর্শন করে গেছেন।

এ ব্যাপারে বেসরকারি বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিমিটেডের এমডি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, চুক্তি অনুযায়ী সংযোগ সড়কসহ সড়কপথ এবং স্থলবন্দরের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে রেললাইন এবং ভারত-বাংলাদেশে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানির চুক্তি হলেই বিরল স্থলবন্দর চালু হবে। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে এটি পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপ পাবে। আর বিরল পোর্ট ল্যান্ড লিংক লিমিটেডও কাজ শুরু করতে পারবে। জিরো পয়েন্ট থেকে পাকা সড়ক নির্মাণ করা দরকার। তবে স্থলবন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। ২০০৬ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সরকারের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরল স্থলবন্দর লিংক লিমিটেডের চুক্তি হয়। এর মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, অবিভক্ত ভারত এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মিটার গেজ রেলপথে নেপাল, ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যে সীমিত সংখ্যক পণ্যবাহী ট্রেন চলত বিরল রেলপথ দিয়ে। ২০০৬ সালে ভারত রাধিকাপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপন করায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ব্রডগেজ রেললাইন হওয়ায় বাংলাদেশে আর মালবাহী ট্রেন আসতে পারত না। এতে ২০০৫ সালের মে মাস থেকে রেলপথে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৬ সালে বিরল স্থলবন্দর অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিরল সীমান্ত লাগোয়া চক শংকরপুর মৌজার মানিকপাড়া গ্রামের পাশে স্থলবন্দরের সংরক্ষিত সাড়ে ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ডুয়েল গেজ রেলপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর