শিরোনাম
রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পেট্রলবোমা ও গ্রেনেড হামলাকারীদের ভোট দেবেন না

——— বিচারপতি মানিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পেট্রলবোমা ও গ্রেনেড হামলাকারী এবং যুদ্ধাপরাধীদের বর্জন করুন। তাদের ভোট দিয়ে সংসদকে অপমান করবেন না। ওদের ভোট দেবেন না।’ গতকাল দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। 

সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিনা সিমির সঞ্চালনায় এবং বোয়াফ সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিন্নাত হুদা, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্য সচিব মামুন আল মাহতাব, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, সাবেক ছাত্রনেতা লীনা পারভীন প্রমুখ।

 বিচারপতি মানিক বলেন, ওরা যেন আবারও দেশকে পাকিস্তান বানাতে না পারে সে জন্য ভোটের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে দেশ চালনার দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার হাতেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জনগণ নিরাপদ। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন আর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে ড. কামাল ‘খামোশ’ বলেছেন। প্রশ্ন করেছেন, ওই সাংবাদিক কত টাকার বিনিময়ে তাকে প্রশ্ন করেছেন। তাই নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ড. কামাল হোসেনদের চিরতরে ‘খামোশ’ করে দিতে হবে।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দুটি বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কামাল হোসেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তিনি তার পাকিস্তানি ভগ্নিপতি আমানউল্লাহর সহায়তায় পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেশপ্রেম নেই বলেই তিনি গ্রেনেড ও বোমা হামলাকারী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী নিজামী-সাঈদী ও সাকা চৌধুরীর ছেলেদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সম্প্রতি বিএনপি নেতা তারেক জিয়া ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন আইএসআইর সঙ্গে বৈঠক করে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের গ্যাস চেম্বারে যেভাবে মানুষ বিষাক্ত হয়েছিল। তেমনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতের পেট্রলবোমায় সারা দেশে মানুষ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। রাজনীতির নামে তারা মানুষ হত্যা করেছিল। আজ ড. কামাল হোসেন একাত্তরের ঘাতক পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। এটি জাতির জন্য লজ্জার। তিনি বঙ্গবন্ধুর আইনমন্ত্রী ছিলেন, আইন প্রণয়ন করেছিলেন, তিনি  কী করে স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করেন। তিনি আরও বলেন, জাতির বিবেক সর্বোচ্চ আদালত, সেই বিবেক দিয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির পক্ষে রায় দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা গ্রেনেড ও বোমা হামলা করে মানুষ পুড়িয়ে মারার দৃশ্য দেখতে চাই না। একাত্তরের চেতনা ধারণ ও লালন করে এগিয়ে যেতে হবে।

অধ্যাপক জিন্নাত হুদা বলেন, পেট্রলবোমা হামলায় আহত একজন বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের আর্তনাদের মধ্যেই ফুটে উঠেছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে খালেদা-নিজামীরা দেশজুড়ে কী ধরনের তাণ্ডব চালিয়েছিল। তারা আমাদের স্বাধীন দেশকে ঝলসে দিতে চেয়েছিল। তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনা কুিসত। তারা গণতন্ত্রকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। তিনি বলেন, আজ ড. কামাল হোসেন এই হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। এই হত্যাকারীদের হাতে দেশের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাজনৈতিক দল নয়, সন্ত্রাসী দল। রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের মানুষ মেনে নেবে না।

আলোচনায় অংশ নেওয়া পেট্রলবোমা হামলায় আহত ইডেন কলেজের ছাত্রী সাথীর বাবা খোকন মিয়া, মুন্সীগঞ্জের আল মাসুদ, কাপাসিয়ার জমির আলী, যাত্রাবাড়ীর মো. খোকন, নোয়াখালীর শামসুন্নাহার, ইডেন কলেজের ছাত্রী সালমা অনিকা, তানভীর আহমেদ, পৃথিরাজ চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন, চাঁদপুরের নাসরিন আখতার, ফেনীর মাঈনুদ্দীন, বগুড়ার সাজু মিয়া, নরসিংদীর মাসুদসহ আরও অনেকে পেট্রলবোমা হামলায় আহত হওয়ার পরে তাদের দুঃসহ যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করেন।

সর্বশেষ খবর