বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বরিশাল বিএনপি সোজা হয়ে দাঁড়ানোর উপায় খুঁজছে

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল জেলার ৬টি আসনে সংসদীয় ভরাডুবির পর বিএনপি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের মাঠে কোনোভাবেই দাঁড়াতে না পেরে দলটির সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মীরা পর্যন্ত সবাই হতাশ। আগামী দিনগুলোতে কেমন করে কোমর সোজা করে দাঁড়াবেন সেই উপায় খুঁজছেন তারা।

গত রবিবার অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল জেলার ৬টি আসনেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৫টিতে বরিশাল-১ আওয়ামী লীগের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল-২ আওয়ামী লীগের মো. শাহে আলম, বরিশাল-৪ পংকজ নাথ, বরিশাল-৫ জাহিদ ফারুক শামীম এবং বরিশাল-৬ জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্না আমীন। শুধু বরিশাল-৩ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে জাতীয় পার্টি আর বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে। এখানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনকে ৭ হাজার ৪৯১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে ৫৪ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু।  বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগ পুলিশের সহায়তায় জবরদস্তি করে জনগণের ভোট কেড়ে নিয়েছে। এজন্য চরম মাশুল গুনতে হবে আওয়ামী লীগকে। আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং বিএনপিও কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে তিনি জানান। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের হাসানাত আবদুল্লাহর কাছে ২ লাখ ৪ হাজার ১৯৭ ভোটে হেরে ওই রাতেই পুলিশের পাহারায় নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেন বরিশাল-১ আসনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন। ওই রাতে বরিশাল নগরীতে অবস্থান করে পরদিন বিমানে ঢাকায় গেছেন তিনি। ওই আসনের গৌরনদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, পুলিশের কারণে ভোটের মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে এখন তারা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা বা তাদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে কিছুই বুঝতে পারছেন না তারা। বরিশাল-২ আসনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু নির্বাচিত এলাকা ছেড়েছেন নির্বাচনের তিন দিন আগে। নির্বাচনের আগে-পরে নেতাকে না পেয়ে নিরাশ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। ওই আসনের উজিরপুর উপজেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক শফিউল আলম সফরুল জানান, নির্বাচনের সময় নেতা-কর্মীরা একাধিক মামলার শিকার হয়েছেন। তাদের প্রার্থী নির্বাচনের ৩ দিন আগে এলাকা ছাড়লেও তারা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কী করবেন সে রকম কোনো দিকনির্দেশনা দেননি তিনি। এমনকি তাদের প্রার্থীর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো নেতা-কর্মীদের যোগাযোগও নেই।

বরিশাল-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেন নির্বাচনের পরদিন সোমবার সকালে। যাওয়ার আগে তিনি নেতা-কর্মীদের মনোবল নিয়ে এলাকায় অবস্থান  করতে এবং কোনো ধরনের ঝামেলায় না জড়ানোর নির্দেশনা দেন বলে জানান ওই আসনের বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি কামরুল আহসান হিমু।

বরিশাল-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের জে এম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীরকে ভোটের দিনও নির্বাচনী এলাকায় দেখেননি কেউ। ভোটের দিন দুপুরে বরিশাল নগরীতে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে নিরুদ্দেশ তিনি। এই আসনের নির্বাচনে নুরুর রহমানের পক্ষে কাজ করা বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখন দিশাহারা।

বরিশাল-৫ (সদর) আসনে পরাজিত বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচনের আগে থেকেই অবস্থান করছেন বরিশাল নগরীতে। নির্বাচনের আগে-পরের কয়েক দিন তার বাসার চারপাশে কড়া পুলিশ বেষ্টনীর কারণে নেতা-কর্মীরাও যেতে পারেননি তার বাসায়। তবে নির্বাচনের পরদিন বেলা ১১টার পর তার বাসার সামনে থেকে পুলিশ প্রত্যাহারের পর থেকে কিছু নেতা-কর্মীর পদচারণা পড়ছে সরোয়ারের বাসায়। কিন্তু প্রকাশ্যে রাজপথে দেখা যাচ্ছে না তাদের।

মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া বলেন, নির্বাচনের আগে একাধিক গায়েবি মামলায় বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে তারা এখনো আত্মগোপনে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি নতুনভাবে সংগঠন শক্তিশালী করতে কর্মসূচি আসছে বলে তিনি জানান।

বরিশাল-৬ আসনে পরাজিত বিএনপি প্রার্থী আবুল হোসেন খান নির্বাচন প্রাক্কালে গ্রেফতার হওয়া তার ৩৬ নেতা-কর্মীর সঙ্গে গত সোমবার সকালে সাক্ষাৎ করেন বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই আসনের অন্য নেতা-কর্মীরাও গভীর সংকটে।

তবে এই আসনে পরাজিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন খান বলেন, ভোটের আগের রাতেই সারা দেশে একই ডিজাইনে একই প্ল্যানে ভোট হয়ে গেছে। তার মতে, ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় ভোট শুরুর আগেই বিএনপির এই নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। তিনি বলেন, রাষ্ট্র্র যখন সন্ত্রাসী হয়, রাষ্ট্রযন্ত্র যখন প্রতারণা করে তখন জনগণের কী করার আছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা একটুও মনোবল হারাননি এবং সাংগঠনিকভাবে তারা অনেক শক্তিশালী। তিনি বলেন, বিএনপির ভরাডুবি হয়নি, আওয়ামী লীগের কূটকৌশলের কাছে দেশের মানুষের ভরাডুবি হয়েছে। দেশের জনগণ এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে বলে বিশ্বাস তাদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর