বুধবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বহিরাগত ৫ ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব দেবে ভারত

কলকাতা প্রতিনিধি

ভারতীয় লোকসভায় (সংসদের নিম্নকক্ষ) পাস হয়ে গেল বিতর্কিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬। মঙ্গলবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে বিলটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরপর শুরু হয় আলোচনা, পরে বিরোধীদের বিরোধ-বিক্ষোভের মধ্যেই বিলটি পাস করিয়ে নেয় মোদি সরকার। আজ বুধবার রাজ্যসভাতেও অধিবেশনের শেষ দিনে এই বিলটি পাস করা হতে পারে। মঙ্গলবার নাগরিকত্ব বিল উত্থাপন করে রাজনাথ সিং জানান, ‘আমি পরিষ্কার বলতে চাই যে, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) কেবলমাত্র আসাম কিংবা নির্দিষ্ট কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কল্যাণের জন্য নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র (পাকিস্তান) থেকে এসে পাঞ্জাব, দিল্লি এবং রাজস্থানে যারা বসবাস করছে এই বিল তাদেরও কল্যাণে আসবে। দীর্ঘদিন ধরেই আসাম অবৈধ অনুপ্রবেশ সমস্যায় জর্জরিত এবং আসামের এই বোঝা ভারতেরও বোঝা। এই সমস্যা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সময়ই বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা স্লোগান দিতে থাকেন, তাতে যোগ দেন উত্তর-পূর্ব ভারতে বিজেপির শরিক দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যও। একসময় অধিবেশন বর্জন করেন জাতীয় কংগ্রেসের সংসদ সদস্যরা। বিরোধিতা করেন বাম ও তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্যরাও।

তৃণমূলের অভিযোগ, এই বিলের ফলে পশ্চিমবঙ্গের শান্তি বিঘিœত হতে পারে। 

বিলটিতে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি ও খ্রিস্টান ভারতে এসেছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬-এর প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে আসাম পরিস্থিতি। এরই মধ্যে এই বিলের প্রতিবাদ করে গত সোমবারই আসামের বিজেপি জোট সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে শরিক দল অসম গণপরিষদ (অগপ)।

এদিকে সংসদে বিল পেশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টা (সকাল ৫টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) আসামসহ উত্তরপূর্ব ভারতে হরতালের ডাক দেয় নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) ও অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু)। হরতালকে সমর্থন দেয় কংগ্রেস, অসম গণপরিষদ (অগপ), অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টসহ (এআইইউডিএফ) কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন। হরতালের ফলে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। হরতালে আসামের একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সহিংসতা হয়। ডিব্রুগড়ে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষোভকারীরা, অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। গাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ। অর্ধনগ্ন হয়ে বিভিন্ন রেল লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে রেল অবরোধ করে হরতালকারীরা।

পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরাতেও হরতালের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। আগরতলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (টিটিএডিসি)-এর সদর কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করতে গেলে হরতালকারী সংগঠন নেসোর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। তাতে পাঁচজন আহত হন। এর মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর