রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
যত্রতত্র মিলছে জ্বালানি

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে হাটবাজার

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উখিয়া-টেকনাফের হাটবাজার, রাস্তাঘাট, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরের ঝুপড়িদোকান, সড়কপাশ, গ্রামগঞ্জের মুদি ও ক্রোকারিজের দোকানসহ যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের দাহ্য পদার্থ। পেট্রল, অকটেন, কেরোসিন, ছোট-বড় গ্যাস সিলিন্ডার সবই এখানে সহজলভ্য পণ্যে পরিণত হয়েছে। টাকা দিলেই মিলছে এসব বিপজ্জনক পণ্য। কোনো রকম নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য বিক্রি করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে উখিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ফলে অগ্নিকা-জনিত ঝুঁকি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে এখানকার স্থানীয় অধিবাসী ও আশ্রিত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে। ইতিপূর্বে ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ বুধবার সকালে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন লেগে রোহিঙ্গাদের ২০টি ঘর পুড়ে গেছে। রোহিঙ্গারা জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে কেউ দগ্ধ না হলেও ঘরে থাকা বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উখিয়া সদর, কুতুপালং, কোর্টবাজার, বালুখালী, ঘুমধুম, থাইংখালী, পালংখালী, ভালুকিয়া, সোনারপাড়া, মরিচ্যা, ইনানীসহ প্রত্যন্ত জনপদে প্লাস্টিকের পানির বোতলে পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিনের মতো জ্বালানি বিক্রি হচ্ছে। রোহিঙ্গারা এসব অঞ্চলে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে নিত্যপণ্যের মতো বিক্রি করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। জ্বালানি তেল সরবরাহের নীতিমালা অনুযায়ী, যেসব দোকানে বা প্রতিষ্ঠানে জ্বালানি তেল, গ্যাস, পেট্রল ও অকটেন বিক্রি করা হবে, ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ সুরক্ষা থাকতে হবে। গ্যাস সিলিন্ডার মজুদে মজবুত ও ঝুঁকিবিহীন সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। এ ছাড়া তাদের নিতে হবে জ্বালানি অধিদফতরের অনুমোদন। অথচ উখিয়া-টেকনাফের আনাচেকানাচে বিক্রি করা হচ্ছে সব ধরনের জ্বালানি বা দাহ্য পদার্থ। উখিয়া সদর এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের মুদিদোকানে ড্রামভর্তি অকটেন-পেট্রল মজুদ রেখে খোলামেলা বিক্রি করে আসছেন অনেক দিন ধরে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের আশপাশ ছাড়াও গ্রামীণ জনপদে পেট্রল, অকটেন ও কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে।

 বিক্রেতারা বলেন, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে মুদিদোকানিরাও এসব জ্বালানি পদার্থ বিক্রি শুরু করেছেন। হাতে গোনা দু-তিনটি পেট্রল পাম্পের পক্ষে হাজার হাজার যানবাহনে অকটেন, পেট্রল ও ডিজেল সরবরাহ সম্ভব নয়। তাই রাস্তার ধারে সাধারণ মুদিদোকানিরা নেমেছেন জ্বালানি তেলের ব্যবসায়। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ডিজেল বা কেরোসিনের চুলোয় রান্না করে বিধায় এর চাহিদাও বেড়ে গেছে। এ সুযোগে উখিয়া-টেকনাফে জ্বালানি বাণিজ্য বেড়ে গেছে বলে তারা দাবি করেন।

এদিকে উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, কেউ কেউ ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স গ্রহণ করলেও অধিকাংশই করেননি। খোলামেলা অবস্থায় দাহ্য পদার্থ বিক্রি করার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের অগ্নিকা- ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, উখিয়ায় অনুমোদনহীন দাহ্য পদার্থ বিক্রির যেসব দোকান গড়ে উঠেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এর বিরুদ্ধে অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর