শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

গাজীপুরে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে দুই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাসসহ পাওনাদি পরিশোধ এবং বন্ধ কারখানা চালুর দাবিতে গতকাল এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় বিক্ষুব্ধরা ঢাকা-গাজীপুর সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এতে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে গরমের মাঝে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও পথচারীদের। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া চৌধুরী বাড়ি এলাকার ‘মে ফ্যাশন’ পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকায় এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খোলার কথা বলে গত ১৯ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করে। লুৎফর রহমান মালিকাধীন এ কারখানায় প্রায় ৭০০ শ্রমিক রয়েছে। বন্ধ ঘোষণার সময় শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়। মূলত লুৎফর রহমানের এক আত্মীয়ের মালিকানাধীন স্থানীয় ‘টার্গেট ফাইন ওয়াশ’ কারখানার সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে এ কারখানায় পোশাক তৈরি করা হতো। মূল কারখানায় উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকায় এ কারখানা কাজ শূন্য হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী শ্রমিকরা গত কয়েকদিন আগে লকডাউনের কারণে সরকার ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ভাগ বেতনসহ তাদের পাওনাদি পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করে। শ্রমিক অসন্তোষের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ ৪ জুন শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার তারিখ ঘোষণা দেয় এবং কয়েকজন শ্রমিকের আংশিক বেতন পরিশোধ করে। ইতিমধ্যে ভবনটি দুর্বল এবং উৎপাদন কাজের অর্ডার না থাকাসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও শ্রমিকদের মোট পাওনাদি পরিশোধের পরিবর্তে প্রতি শ্রমিককে শুধু চার হাজার ২০০ টাকা করে দিয়ে তাদের কাছ থেকে মাফমুক্তি চেয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কয়েক শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা কর্তৃপক্ষের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, কর্তৃপক্ষের পূর্ব ঘোষণানুযায়ী আলোচনার জন্য গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকরা মে ফ্যাশন কারখানার সামনে এসে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও মালিকপক্ষের কাউকে না পেয়ে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা ঈদুল ফিতরের পাওনা বোনাস, মে মাসের বেতন এবং সরকার ঘোষিত এপ্রিল মাসের শতকরা ৬০ভাগ বেতনসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানায়।

পরে শ্রমিকরা সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তার নলজানী এলাকার ‘টার্গেট ফাইন ওয়াশ’ পোশাক কারখানার সামনে এসে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি পূরণের জন্য বিক্ষোভ করতে থাকে। কিন্তু কারও কোনো সাড়া না পেয়ে শ্রমিকরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার সামনে ঢাকা-জয়দেবপুর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এতে ওই সড়কের উভয় দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সড়কের ওপর থেকে সরিয়ে দিলে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। শিল্প পুলিশের এসআই সুব্রত দেব ও শ্রমিকরা জানান, গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকারের মধ্যস্থতায় দুপুরে মালিক পক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়। বিকাল পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কারখানার লোকসান দেখিয়ে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের শুধু এপ্রিল মাসের মূল বেতন পরিশোধ এবং স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। কর্তৃপক্ষের এ ঘোষণায় সম্মতি জানিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে। সন্ধ্যায় শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের  মূল বেতন পরিশোধের কার্যক্রম শুরু হয়।

সর্বশেষ খবর