বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘এক দফা’ দাবিতে ডাকা অসহযোগ আন্দোলন মোকাবিলায় গতকাল রাজধানীর রাজপথে অবস্থান নিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, দফায় দফায় সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’- প্রভৃতি স্লোগানে তারা মুখরিত করে তোলেন ঢাকার রাজপথ। এর ফাঁকে কয়েক দফা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীদের শক্ত অবস্থান ও পাল্টা ধাওয়ায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা। রবিবার সরেজমিনে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও ধানমন্ডির কার্যালয়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের নেতা-কর্মীরা। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আসতে থাকেন তারা। সময় বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। জয় বাংলা স্লোগান ও শোডাউনে মুখরিত হয়ে ওঠে গুলিস্তান ও আশপাশ এলাকা। সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে আসার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীরা গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতা-কর্মীরা। তাদের প্রতিরোধের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হামলাকারীরা। পরে গোলাপ শাহ মাজার, পাতাল মার্কেট, ফুলবাড়িয়া বিআরটিসি কাউন্টার, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম গেট, দোয়েল চত্বর, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয় গেট এবং পল্টন এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা।
এদিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সকাল থেকেই অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেন। ফলে সকাল থেকেই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় ও তার আশপাশের এলাকা। তবে সেখানেও কয়েক দফা হামলার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় কার্যালয়ে বাইরে উপস্থিত নেতারা তাদের প্রতিহত করেন। পরে ঝিগাতলা এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। বিকালে কয়েক দফা হামলার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। সে হামলার চেষ্টাও প্রতিহত করেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে বসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি বুঝে অবস্থান নিতে দিকনিদের্শনাও দেন তারা।
এ ছাড়াও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, রাসেল স্কয়ার, কলাবাগান, পান্থপথ, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০ নম্বর, গাবতলী, উত্তরা, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী ও শনিরআখরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে স্ব স্ব এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন দলীয় এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা।
গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। তাদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মিরপুর এলাকা। বিকাল ২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দখলে ছিল মিরপুর ১০ নম্বর এলাকা। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড ও ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অধিকাংশ স্থানেই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় তাদের।