১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১১:৫৩

বিজয়ের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার প্রবাসীদের

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

বিজয়ের চেতনায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার প্রবাসীদের

বিজয় দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছেন প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেছেন, স্বাধীনতার চেতনায় এগিয়ে চলা বাংলাদেশের ইমেজ বিনষ্টের যে কোন ষড়যন্ত্র নস্যাতে তারা এই প্রবাসে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে থাকবেন। একই অনুষ্ঠানে সমবেত কূটনীতিক, রাজনীতিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, সাংস্কৃতিক সংগঠকরাও অঙ্গীকার করেন বিজয়ের চেতনায় প্রবাস-প্রজন্মকে সম্পৃক্ত রাখার। 

১৬ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে ৪৭তম বিজয় দিবস উদযাপনে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে জুইশ সেন্টারের মিলনায়তনে সর্বস্তরের প্রবাসীর জন্য এ আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। 

এ উপলক্ষে প্রবাস-প্রজন্মের অংশগ্রহণে ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক এক রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯ মাসের রক্ষক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের আলোকে সকলেই চমৎকারভাবে রচনা লিখেছিল। সপ্তম গ্রেড থেকে একাদশ গ্রেডের ছেলে-মেয়েরা অংশ নেয়। এটি ছিল দিবসের অন্যতম একটি কর্মসূচি, যার প্রশংসা উচ্চারিত হয় সর্বমহলে। বিজয়ীদের মধ্যে সার্টিফিকেট ও পুরস্কার বিতরণ করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী সেলিনা মোমেন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, কণ্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার এবং হোস্ট সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ ও সহ-সভাপতি হারুন ভূইয়া। 

শুরুতে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকলে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করেন। সমবেত মুক্তিযোদ্ধারা অভিবাদন জানান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। এরপর জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান এবং সেক্রেটারি আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়া এবং সেক্রেটারি এটিএম রানা, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান এবং আজিমউদ্দিন অভি, বহ্নিশিখা সঙ্গী সঙ্গীত নিকেতনের প্রধান সবিতা দাসের নেতৃত্বে শিল্পীরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন স্মৃতিসৌধে। ৩০ লাখ শহীদ এবং দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকার সাথে মিলিয়ে ছোট্টমণিরাও শাড়ি পরে শ্রদ্ধাঞ্জলিতে অংশ নেয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন ৩ গেরিলা শওকত আকবর রীচি, আবুল বাশার চুন্নু এবং রেজাউল বারি। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বন্ধু ড. পার্থ ব্যানার্জিও স্মৃতিচারণ করেন শরণার্থী শিবিরে অক্লান্ত পরিশ্রমের। সে সময় তিনি ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র। এতদসত্ত্বেও বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম তাকেও আন্দোলিত-আলোড়িত করে। 

নিউইয়র্কে আকায়েদ উল্লাহ কর্তৃক আত্মঘাতী হামলার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের ধিক্কার আর ঘৃণা প্রদর্শনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “ধর্মীয় সংকীর্ণতাকে পুঁজি করে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে না পারে সেদিকে প্রবাসীদেরকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে”। রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন অর্জনের পথে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের অবদানের কথাও বাংলাদেশ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাণীতেও তা স্থান পেয়েছে স্পষ্টভাবে।’ 

রাষ্ট্রদূত ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রবাসী বাঙালিদেরর স্ব স্ব ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানী মিলিটারি যে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছিল তার বিচার হলে এবং আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি স্বীকৃত হলে তা বিশ্বে গণহত্যা বন্ধে ভূমিকা রাখবে”। 

কন্সাল জেনালে শামীম আহসান বলেন, ‘প্রতিবেশী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সির প্যাটারসন সিটি হলের সামনে আজ বাংলাদেশের পতাকাও উড্ডীন করেছেন সেই সিটির মেয়র। বিজয় দিবস উপলক্ষে এভাবেই বাংলাদেশ ঝলসে উঠতে বহুজাতিক এই সমাজেও। বাংলাদেশের ইমেজকে সমুন্নত রাখতে সকল প্রবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এবারের বিজয় দিবস বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। বাংলাদেশের এগিয়ে চলার ঘটনাবলী এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। বাঙালির এই অহংকারের সূচনা ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে।’

নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতকদের দোসরেরা এই নিউইয়র্কেও নানাভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এদেরকে সমূচিত শাস্তি প্রদানের জন্যে বিজয়ের চেতনায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

একাত্তরের দুই গেরিলার বোন এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী সেলিনা মোমেন বলেন, ‘বাঙালি বিজয় অর্জনের ইতিহাস ম্লান করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।’

আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি লাবলু আনসার বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে একাত্তরের বাঙালির শৌর্য-বীর্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে, জাতিরজনকের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের সাথেও তাদেরকে পরিচিত রাখতে হবে। কারণ, তারাই বয়ে নেবে বাঙালির বিরত্বগাঁথা অনাগত ভবিষ্যতে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস বিভাগের অধ্যাপক মতলুব আলী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে চলা অব্যাহত রাখতে সামনের নির্বাচনেও শেখ হাসিনা এবং তার দলকে বিজয় দিতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রবাস থেকে সকলকে একযোগে সোচ্চার হতে হবে। অর্থনৈতিক সহায়তার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকার সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকারের প্রয়োজনীয়তার আলোকে।’

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মো. কাদের মিয়া বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিজয় পরিপূর্ণ করতে নতুন করে শপথ গ্রহণের সময় এসেছে এ বিজয় দিবসে।’

প্রবীণ সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান বিজয় দিবস উপলক্ষে এমন একটি আয়োজনের জন্য সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামকে ধন্যবাদ জানান। 

আলোচনার ফাঁকে চলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাগানিয়া গান পরিবেশনা। বিজয়ের চেতনার কবিতা আবৃত্তি করেন প্রজন্ম একাত্তরের নেতা শিবলী সাদিক শিবলু। 

একক সঙ্গীতে অংশ নেন শহীদ হাসান, নিপা জামান, আলী মো. টুটুল, সবিতা দাস। সংগীত শেখানোর স্কুল বহ্নি শিখা সঙ্গীত নিকেতনের সমবেত সঙ্গীতে অংশ নেন সবিতা দাস, আইজা, প্রান্তি, দুর্জয়, উইলি নন্দি, সৃজন, স্মৃুতি আহমেদ, প্রিনা নন্দি, আরশা, সুলতানা আহমেদ, ইমন, রিমন আহমেদ, ইলা চৌধুরী, স্বর্ণা হালদার, স্মৃতি হালদার, মিতা কর্মকার, সোনিয়া, ইশরা, ইসপা, প্রিন্স আহমেদ, বেলাল, বুলা, নন্দীনী, মম, সেজুতি, বৈশাখী, নন্দিনী পাল, পারমিতা পাল।

সুর-ছন্দের প্রধান মো. ইমদাদুল হকের নির্দেশনা ও পরিচালনায় দেশের গান পরিবেশনকারি শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শ্রাবণী সরকার, মোহনা, সোবহা, সামিরা, মৌরিন, মৌটুসি, অনামিকা, আরিফা, সাফরিন, কারিমা, মৌসুমী, রওশনআরা প্রমুখ। 

সমগ্র অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারি, যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুল কাদের মিয়া এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহ-সম্পাদক সোলায়মান আলী। 

বিডি-প্রতিদিন/১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর