২০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১১:১৩

গৃহকর্মীর মামলায় জাতিসংঘের সেই বাংলাদেশি কূটনীতিক খালাস

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

গৃহকর্মীর মামলায় জাতিসংঘের সেই বাংলাদেশি কূটনীতিক খালাস

কূটনীতিক হামিদুর রশিদ

গৃহকর্মীকে ঠকানোর মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বাংলাদেশি কূটনীতিক হামিদুর রশিদ। জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তা ড. হামিদুর রশীদের বিরুদ্ধে তার গৃহকর্মী গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন যে, চুক্তি অনুযায়ী তাকে পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি। সাপ্তাহিক ছুটি কিংবা অভারটাইম প্রদান দূরের কথা, তাকে জিম্মি করে দিন-রাত কাজ করিয়ে নেয়া হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জুন ম্যানহাটানের বাসা থেকে হামিদুরকে গ্রেফতার করা হয়। সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্কের অধীনে ফেডারেল কোর্টে এ নিয়ে মামলার সর্বশেষ তারিখ ছিল ২০ নভেম্বর। বিচারপতি এন্ড্র্যু জে প্যাক সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ যে অভিযোগ করা হয়েছিল তা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে হামিদুর রশিদকে।

ইউএস এটর্নি অফিসের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা জেমস এম মারগলিন মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে হামিদুর রশিদকে বেকসুর খালাসের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

উল্লেখ্য, হামিদুর রশিদের গ্রেফতারের সংবাদটি মূলধারার সকল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রকাশ ও প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি কূটনীতিকসহ প্রবাসীরাও বিব্রত হয়েছিলেন। অনেকেই বলাবলি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের ক্ষেত্র তৈরির অভিপ্রায়ে এর আগেও কয়েকজন কূটনীতিকের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীরা মামলা করেন। গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার কারণে ভারতীয় কন্সাল জেনারেল দেবযানি এবং বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম ২০১৪ সালে নিউইয়র্ক ত্যাগ করলেও হামিদুর রশিদ তা করেননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণেই সচেষ্ট ছিলেন এবং অবশেষে আদালত সে প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটালেন। 

উল্লেখ্য যে, স্থায়ীভাবে বসবাসের ক্ষেত্র তৈরির অভিপ্রায়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের আরেক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে তার গৃহকর্মী মামলা করেছে। সেটি এখনও নিষ্পত্তি না হলেও হামিদুর রশিদের মতো তিনিও নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এটর্নিরা অভিমত পোষণ করেছেন। 

হামিদুর রশিদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো চার বছর আগের। এতদিন পর কেন পুলিশকে জানানো হলো? এছাড়া, অঙ্গীকার অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেননি বলে যে অভিযোগ ছিল তাও ধোপে টিকেনি। কারণ, পারিশ্রমিক প্রদানের ডক্যুমেন্ট তার কাছে ছিল। 

অভিযোগের পরই কূটনীতিককে গ্রেফতারের ঘটনা বিদ্যমান কূটনীতিক-শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলে গুঞ্জন উঠেছিল। এখন যেহেতু তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হলো, বাংলাদেশ কিংবা ইউএনডিপি তথা জাতিসংঘ অথবা ব্যক্তিগতভাবে হামিদুর রশিদ মানহানি মামলার কথা ভাবছেন কিনা জানতে চাইলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন এ সংবাদদাতাকে বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণের আগেই হামিদুরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মিডিয়ায় নেতিবাচক সংবাদে বাংলাদেশিরাও জাতিগতভাবে বিব্রতবোধ করেছেন। এখন সব দিবালোকের মত স্পষ্ট হলো যে, হামিদুর রশিদ কোন অন্যায় করেননি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আদালতে মানহানি মামলা করবেন কিনা তা নিয়ে তিনি নিশ্চয়ই তার আইনজীবী এবং কর্মস্থল জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করছেন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই খুশি যে, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের মত শক্তিশালী একটি আদালতের কাঠগড়া থেকে সসম্মানে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এটি বাংলাদেশি কূটনীতিকদের জন্য অন্য ধরনের বিজয় বলে মনে করছি।’

রাষ্ট্রদূত মাসুদ উল্লেখ করেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু আইন রয়েছে যা অনেককে অভিযোগে উৎসাহিত করে। গৃহকর্মীরা যদি ভিকটিম হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করতে পারেন, তাহলে সাথে সাথে গ্রিনকার্ড পেয়ে যান। এ অভিপ্রায়ে অনেকে কূটনীতিকদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে নিপতিত করছেন। যা খুবই দুঃখজনক।’

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘আমি স্বস্তিবোধ করছি এমন একটি অপবাদের দায় থেকে হামিদুর বেকসুর খালাস পাওয়ায়।’ 

ম্যানহাটানে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির একটি প্রকল্পের পরিচালক হামিদুর রশীদের (৫৯) বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি, বিদেশিকর্মী নিয়োগ চুক্তিতে জালিয়াতি এবং পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

হামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সপ্তাহে ৪২০ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তি করে তার ভিসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে চুক্তিপত্র দাখিল করেন। ২০১২ সালের নভেম্বরে গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে হামিদ নতুন একটি চুক্তিতে তার সই নেন, যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি ২৯০ ডলার লেখা হয়।

আরও অভিযোগ ছিল যে, হামিদুর রশীদ ওই গৃহকর্মীর পাসপোর্ট নিয়ে নেন এবং অন্য কোথাও কাজ করলে তাকে প্রথমে কারাগারে ও পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে বিভিন্ন সময় হুমকি দেওয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছিল, হামিদুর রশীদ প্রথমে গৃহকর্মীকে কোনো টাকা দেননি। পরে বাংলাদেশে তার স্বামীকে মাসে ৬০০ ডলার করে পাঠান। ২০১৩ সালের অক্টোবরে ওই মাসের কাজের জন্য তাকে ৬০০ ডলার দেওয়া হয়। ইউনডিপির এই বাংলাদেশি কর্মকর্তা কখনোই তার গৃহকর্মী বা তার স্বামীকে মূল চুক্তি অনুযায়ী সপ্তাহে ৪২০ ডলার করে দেননি বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়েছিল।

বিডি-প্রতিদিন/২০ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর