২১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১২:৫১

মুক্তিযোদ্ধা, তাই কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণা

অনলাইন ডেস্ক

মুক্তিযোদ্ধা, তাই কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত ঘোষণা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বলে একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধার কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের (পরমানেন্ট রেসিডেন্সি) আবেদন বাতিল করে দিয়েছে কানাডা ইমিগ্রেশন। এমনকি তাঁকে ‘দেশটির নিরাপত্তার হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্যও ঘোষণা করা হয়েছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ঊর্ধ্বতন পদে চাকুরি করা তৌফিকুল আরিফ ইমিগ্রেশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না। ফেডারেল কোর্ট এই আবেদনের শুনানি করতে পর্যন্ত সম্মত হয়নি।  

জানা যায়, অটোয়ায় বসবাসরত ফয়সাল আরিফ তার বাবা তৌফিক আরিফ এবং মা'কে স্পন্সর করে কানাডায় নিয়ে আসার জন্য ২০০৭ সালে আবেদন করেন। প্রায় ৭ বছর পর ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরে তাদের প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। সিঙ্গাপুরে ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরেন। ওই সময় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি গ্রামবাসীকে হালকা অস্ত্র চালনা শিখিয়েছেন, যাতে তারা গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিতে পারে। তিনি নিজেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তাকে জানানো হয়, তার আবেদনপত্র কানাডা ইমিগ্রেশন প্রত্যাখান করেছে। সাধারণত ইমিগ্রেশনের আবেদন নাকচ হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তৌফিকুল আরিফ কোনো আপিল করতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।

কানাডার ফেডারেল সরকারের পলিসি অ্যানালিস্ট হিসেবে চাকরিরত ছেলে ফয়সাল আরিফ এক্সেস টু ইনফরমেশন আইনের আওতায় পিতা তৌফিক আরিফের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ফাইলের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তাতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার কারণে তার স্পন্সরশিপ আবেদন বাতিল করা হয়েছে।

ইমিগ্রেশন কানাডার ফাইলে তৌফিকুল আরিফ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনকারী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি একজন বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭১ সালে দেশটির মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ইমিগ্রেশন অফিসার এই তথ্য উল্লেখ করে লিখেছেন, বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিলেন বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণ আছে।

ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে, কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাসের জন্য তার আবেদন সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ক্রিনিং ডিভিশন মূল্যায়ন করেছে। ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে তার ভূমিকার কারণে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টর ৩৪ ধারা অনুসারে তিনি কানাডায় প্রবেশের অনুপযুক্ত। ফাইলে বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘নীপিড়নমূলক আচরণের’ বিবিসির একটি সংবাদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে।

ফয়সাল আরিফ অাইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খ্যাতিমান ইমিগ্রেশন আইনজীবী ব্যারিস্টার রেজাউর রহমানকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু আদালত এই মামলায় শুনানি করতেই সম্মত হননি।

সূত্র : নতুনদেশ.কম

বিডি-প্রতিদিন/২১ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর