শিরোনাম
২৪ মে, ২০১৬ ১৩:২০
ধারাবাহিক উপন্যাস

অটোমান সূর্য সুলতান সুলেমান (পর্ব-১০)

রণক ইকরাম

অটোমান সূর্য সুলতান সুলেমান (পর্ব-১০)

‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ খ্যাত সুলতান সুলেমান পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা শাসক ছিলেন। ক্ষমতার টানাপড়েনে ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, সন্তান হত্যা-পিতৃহত্যা, দাসপ্রথা আর হেরেমের নানা পরিক্রমা ছাপিয়ে এগিয়ে গেছে সুলেমানের শাসনকাল। তার আমলেই আলেকজান্দ্রা নামের এক সাধারণ দাসী হয়ে ওঠেন সুলেমানের স্ত্রী ও সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় আসা সুলেমানকে নিয়ে ইতিহাস আশ্রয়ী এ উপন্যাস। এই উপন্যাসের সরাসরি কোনো উৎস নেই। তবে তথ্য-উপাত্তের মূল উৎস অটোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস বিষয়ক নানা বইপত্র। মূল চরিত্র আর গল্প ঠিক রেখে লেখক তার কল্পনায় তুলে এনেছেন সেই সময়টুকু। টিভি সিরিজ মুহতাশিম ইউজিয়েলের সঙ্গে আমাদের যেমন কোনো বিরোধ নেই, তেমনি এর অনুকরণেরও প্রশ্নই ওঠে না। এটি কেবল ইতিহাসের আশ্রয়ে আরও একটি রচনা।

 

১ম থেকে ৯ম পর্ব পর্যন্ত সুলেমান খানের গভর্নর জীবন ও সেখান থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল হেরেম জীবন, তোপকাপি প্রাসাদ, সুলতান সেলিম খানের মৃত্যু প্রভৃতি। সর্বশেষ ৯ম পর্বে এসে সুলেমান খানকে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হিসেবে দেখা গেছে। তিনি তার রাজ্যের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উজিরে আজম পীরে মেহমুদ পাশা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাইলেও সুলেমান তাকে স্বপদে বহাল রেখেছেন। রাজ্যের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খাসকামরা প্রধান হিসেবে পারগালি ইব্রাহিমকে নির্বাচিত করেছেন সুলতান। বিদেশি একজনকে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় চমকে ওঠে সবাই। কিন্তু সুলতানের সিদ্ধান্তের ওপর কারও কিছু বলার নেই। রাজ্যের আনন্দ উৎসবের এক ফাঁকে ক্রিমিয়া থেকে আনা মেয়েটা আবারও নজর কাড়ে সুলতানের। প্রতি শনিবারের এ বিশেষ আয়োজনে আজ ছাপা হলো দশম পর্ব।

 

[পূর্ব প্রকাশের পর]

অটোমান সাম্রাজ্যের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত সুলেমান। চারপাশের পুরো অংশই তার পদতলে। বাবা সেলিম খানের যোগ্য থেকে যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চান সুলেমান। সুলতান সেলিম খান তার রাজকীয় ট্রেজারি ধনসম্পদে পরিপূর্ণ করে সেটি সিলগালা করে গেছেন। এরপর ডিক্রি জারি করেন যে ‘যদি কেউ তার চেয়ে বেশি ধনসম্পদ করতে পারে তবেই কেবল সে ব্যক্তি এই সিলগালা ভাঙতে পারবে।’ সুলেমানের ভীষণ ইচ্ছা বাবার সেই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করবেন। ভেঙে ফেলবেন রাজ ট্রেজারির সিলগালা। কিন্তু সুলেমানের মূল আকর্ষণ ধন-সম্পদ নয়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে রাজ্য বিস্তার। বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে চান অটোমান পতাকা। চোখের সামনে সেই স্বপ্নীল দিনের আকাঙ্ক্ষা ছবির মতো ভাসছে সুলেমানের। তখনই দরজায় টোকার শব্দ হলো। পাশ ফিরে দেখলেন পারগালি ইব্রাহিম দাঁড়িয়ে।

চোখের ইশারায় সুলতানকে কিছু একটা বললেন পারগালি। জবাবে সুলতান কেবল ঘাড় নাড়ালেন। পারগালি বেরিয়ে গেলেন। বিশাল ঘোমটা টানা এক নারী ঝুমুর ঝুমুর নূপুরের ছন্দ তুলে কক্ষে প্রবেশ করলেন। সুলেমান একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে।

একটা তীব্র সুবাস সুলেমানকে মোহিত করে তুলল। খুব সম্ভবত রাজকীয় মূল্যবান কোনো সুগন্ধী ব্যবহৃত হয়েছে।

আপাদমস্তক সোনালি জড়োয়ায় গুটি গুটি পায়ে সুলতানের সামনে এসে দাঁড়ালো মেয়েটি। সুলেমান বিমোহিতের মতো তাকিয়ে।

হাঁটু গেড়ে মুখের কাপড় উঁচিয়ে সুলতানের কাফতান স্পর্শ করল মেয়েটি। সুলতান মেয়েটির কাঁধ স্পর্শ করে দাঁড় করালেন। জিজ্ঞেস করলেন

‘কী নাম তোমার?’

মেয়েটি নিশ্চুপ। সুলেমান স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে মেয়েটির দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ধবধবে ফর্সা গালে চোখের পানি মুক্তার মতো চিকচিক করছে।

‘তুমি কী ভয় পাচ্ছ? ভয়ের কিছু নেই। তোমার নাম বল।’

‘আ...আলেকজান্দ্রা।’

‘হুমম।’

বলেই মেয়েটির ঘোমটা নামিয়ে দিলেন সুলেমান। চিবুক উঁচু করে মেয়েটির চোখে চোখ রাখলেন। বললেন,

‘এখানে কী তোমাকে জোর করে আনা হয়েছে?’

‘জি না।’

আস্তে করে জবাব দিল মেয়েটি।

‘তাহলে কাঁদছো কেন?’

‘....এমনি।’

একটু থেমে উত্তর দিল মেয়েটি। সুলতান কী যেন ভাবলেন। তারপর মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘এখানে বস। আমরা গল্প করি।’

এই প্রথম সুলেমানের দিকে চোখ তুলে তাকাল মেয়েটি। তারপর কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি নিয়ে খাটিয়ার দিকে পা বাড়ালো। সুলেমান এর আগেই সেখানে বসে পড়েছেন। মেয়েটি সুলেমানের ঠিক পাশেই বসে পড়লেন।

‘তোমার বাড়ি কোথায়?’

‘লিথুনিয়ায়।’

‘ক্রিমিয়ার তাতারদের আক্রমণের শিকার?’

‘জি।’

মাথা নেড়ে সুলতানের কথায় সম্মতি দিল মেয়েটি। কিন্তু এই কথা সুলতান কীভাবে জানলেন। এই প্রশ্নটি মেয়েটির মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সুলেমান মুখ খুললেন,

‘দেখ তুমি যেমন ভাবছ, বিষয় কিন্তু তেমন নয়। এটা অটোমানদের নিয়ম বটে। কিন্তু এখানে কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে কিছুই করা হয় না। আমরা নারীদের সম্মান দিতে জানি। এখানে না এলে দাসী হিসেবে তোমাকে হয়তো এর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ একটা জীবন অতিবাহিত করতে হতো। আমরা তোমার মতো অনেকের জন্যই আমাদের হারেমে সুশৃঙ্খল জীবনের ব্যবস্থা করেছি। আর এই মুহূর্তে যে কারণে তোমাকে আমার কক্ষে পাঠানো হয়েছে সেই বিষয়ে তোমার আপত্তি থাকলে তুমি এখনই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে পার। তোমাকে কেউ কিছু বলবে না।’

কক্ষের দরজার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললেন সুলেমান। সুলতান কিছুটা বিচলিত। বিব্রত। হারেমের ভিতরে সাধারণত এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়।

হারেমের মেয়েগুলোকে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নাচ-গান শেখানো হয়। সেই সঙ্গে শেখানো হয় রাজ পরিবারের সবার সঙ্গে তাদের ব্যবহার কেমন হবে সে সম্পর্কেও। আবার সুলতানের খাস কামরায় এলে কী করতে হবে সে সম্পর্কেও বিস্তারিত জানানো হয়। সুলেমানের মনের ভিতর প্রশ্ন তাহলে এই মেয়েটির আচরণ এমন কেন?

‘তোমার কিছু বলার থাকলে আমাকে নির্ভয়ে বলতে পার। দেখ আমি সুলতান সুলেমান খান তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। তুমি আমাকে নির্দ্বিধায় সব বলতে পার।’

‘আমাকে আপনার আশ্রয়ে রাখুন সুলেমান।’

বলেই সুলেমানের দুই পা জড়িয়ে ধরল মেয়েটি। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সুলেমান। মেয়েটি এমন কাণ্ড করে বসবে কিছুতেই ভাবেননি তিনি। এখন কী করা উচিত সেটাও বুঝতে পারছেন না। মেয়েটিকে টেনে নিচ থেকে আবারও বিছানার ওপর বসালেন। মেয়েটির দু চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললেন,

‘কিন্তু তুমি এভাবে কান্না করলে কীভাবে হবে?’

এবার মেয়েটির টনক নড়ল। সুলেমানের দিকে তাকাল। সুলেমান তাকে চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে ঠিক হয়ে আসার অনুরোধ করলেন। মেয়েটি উঠে চলে গেল।

সুলেমান এবার আর মেয়েটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন না। এখনো তিনি কিছুটা বিচলিত। মেয়েটির সঙ্গে ঠিক কী করা উচিত একদম বুঝতে পারছেন না।

মেয়েটির এমন রহস্যজনক আচরণের মাহাত্ম্যও একদমই মাথায় ঢুকছে না সুলেমানের।

ইচ্ছে করছে পারগালি ইব্রাহিমকে ডেকে সমস্যাটার কথা বলি। অথবা ইচ্ছেমতো একটি ঝাড়ি দিয়ে দেওয়ার। কিন্তু আপাতত সেই সুযোগ নেই। এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুকূলে আসেনি। মেয়েটাকেও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কে জানে আবার নতুন করে কী করে?

আনমনে এসব ভাবছিলেন সুলেমান। ঠিক তখনই মেয়েটির গলা শোনা গেল।

‘সুলতান...।’

পাশ ফিরে তাকাতেই সুলেমান অবাক। মেয়েটির ঘোমটা আর মাথার ভিতরের আচ্ছাদন কোথায় গায়েব হয়ে গেছে। শরীরের পোশাকও কমে গেছে অনেকখানি। সোনালি চুলের সঙ্গে মেয়েটির অদ্ভুত চাহনি পাগল করে তুলল সুলেমানকে।

মনের অজান্তেই উঠে দাঁড়ালেন সুলেমান।

আলেকজান্দ্রা ছোট পায়ে এগিয়ে এলেন সুলেমানের দিকে।

এগিয়ে এসে সুলেমানের কানের কাছে আস্তে করে বলল,

‘সুলতান... আমি তৈরি!’

এবার আর কোনো দ্বিধা থাকল না সুলেমানের মনে। নিজের সব আবেগ দিয়ে বেশ করে জড়িয়ে ধরলেন আলেকজান্দ্রাকে। জড়িয়ে ধরে আলেকজান্দ্রার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে সুলেমান বললেন,

‘আলেকজান্দ্রা। তুমি কিন্তু বেশ সুন্দরী।’

সুলেমানের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আলেকজান্দ্রা। সুলেমান নিজেকে আলেকজান্দ্রার বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে সে হাসির দর্শক হয়ে রইলেন।

আবারো সপ্রতিভ আলেকজান্দ্রা। সুলেমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলেন। সুলেমান যখন আদরের আশায় অধীর অপেক্ষায়, তখনই সুলতানের কানে ‘ফুঁ’ দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আলেকজান্দ্রা। অন্যসময় হলে সুলতানের প্রচণ্ডরকম মেজাজ খারাপ হতো। কিন্তু এখন হচ্ছে না। মেয়েটার এমন বাচ্চামির মধ্যে কী যেন একটা মায়ার ছোঁয়া পাচ্ছেন সুলেমান।

একটু থেমে বসে পড়লেন সুলেমান। পাশেই রাখা টেবিল থেকে ফল এগিয়ে দিলেন আলেকজান্দ্রার দিকে।

আলেকজান্দ্রার মনোযোগ তখনো সুলতানের দিকেই। সুলতানকে অবাক করে দিয়ে এবার সুলতানের ওপর রীতিমতো চড়াও হলো আলেকজান্দ্রা।

বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ার পর সুলতানও আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। কনস্টান্টিনোপলের রাত তখন গভীরতার দিকে ঝুঁকছে। একইভাবে গভীরতার দিকে এগোচ্ছেন সুলেমান ও আলেকজান্দ্রা।

দুজনেই সমান সপ্রতিভ।

দুজনেই আন্তরিক।

দুজনেই উদ্বেলিত।

দুজনেই একে অন্যতে মোহিত।

দুজনেই নিমজ্জিত আদিমতায়।

তাই ঝড় না এসে উপায় থাকল না।

বিচলিত নির্জীব সুলতানও কেমন যেন চঞ্চল-পাশবিক হয়ে উঠলেন।

আর একটু আগেও যে মেয়েটি চোখের পানিতে কক্ষ ভাসাচ্ছিল সেই এখন কক্ষ কাঁপাচ্ছে কামনার শীৎকারে।

সব ঝড় এক সময় থামে। সব নৌকাই কখনো না কখনো গন্তব্যে পৌঁছায়। কাজেই সুলেমান আর আলেকজান্দ্রা চলতেই থাকবে তাতো আর হতে পারে না। থামলেন তারাও।

দুজন দুদিকে ফিরে শুয়ে আছেন।

ক্লান্ত-শ্রান্ত।

এর মধ্যেই সুলতানের দিকে তাকিয়ে একটু হাসল আলেকজান্দ্রা।

এরপর সুলতানকে বলল,

‘মহান সুলতান... আপনি খুশিতো?’

সুলতান নিশ্চুপ। আলেকজান্দ্রার দিকে তাকিয়ে হাসলেন একটু। তারপর বললেন

‘তুমি কী খুশি নও?’

এবার আলেকজান্দ্রা সুলতানের দিকে এগিয়ে এলেন। নিজেকে সঁপে দিলেন সুলতানের বাহুতলে। সুলতানও পরম মমতায় জড়িয়ে রাখলেন আলেকজান্দ্রাকে।

এতো রাতে মাহিদেভরানের কক্ষ থেকে ডাক পেয়ে চমকে উঠল সারা খাতুন। দ্রুত ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন

‘কী হয়েছে মালিকা? কোনো সমস্যা?’

‘আমাকে একটু পানি দাও...।’

ক্লান্ত-শ্রান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন মাহিদেভরান। বিছানায় হেলান দিয়ে মেঝেতে দুপা ছড়িয়ে দারুণ হতাশার ভঙ্গিতে বসে আছেন তিনি।

পানি এনে মাহিদেভরানের হাতে দিল মাহিদেভরানের একান্ত সহকারী সারা খাতুন। এরপর মাহিদেভরানের কাছ থেকে একটু দূরে সরে মেঝেতেই বসে পড়ল সে।

‘মালিকার কি মন খারাপ?’

‘মন ভালো হওয়ার কোনো উপায় কি আছে সারা খাতুন?’

‘কি বলছেন মালিকা? সুলতান সুলেমান খানের গর্বিত স্ত্রী আপনি। সমগ্র অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানা। এই গৌরবের অংশীদার হতে পারাটা কী কম সৌভাগ্যের?’

‘হুমম। সুলতানা, নাকি ছাই?’

‘একথা কেন বলছেন মালিকা?’

মাহিদেভরানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন সারা খাতুন।

‘এতদিন বাদে আমি মানিসা থেকে এলাম। অথচ সুলতানের কোনো খোঁজ নেই। সারা খাতুন আমিতো তার স্ত্রী নাকি?

‘চিন্তিত হবেন না মালিকা। এখন তিনি অটোমান সুলতান। তার ব্যস্ততা থাকতেই পারে।’

‘ব্যস্ততা নয়, সারা। সুলতান এখন অন্য মেয়ের সঙ্গে তার খাস কামরায় রাত কাটাচ্ছেন। আর আমি এখানে বসে বসে তার প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি।’

এবার চুপসে গেলেন সারা খাতুন। বিষয়টা টের পেলেন মাহিদেভরান।

‘কী ব্যাপার সারা? চুপ হয়ে গেলে যে?’

‘না মালিকা। বিষয়টা আপনাদের ব্যক্তিগত।’

‘কিন্তু এ ধরনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কতবারইতো তোমার সঙ্গে আলাপ হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে ছাড়া আর কার কাছে বলব?’

‘তা ঠিক...’

মাহিদেভরানকে সমর্থন করলেন সারা। এরপর বললেন,

‘আপনি অনুমতি দিলে আমি কিছু বলতে পারি।’

‘আমিতো তোমাকে বলার জন্য সেই কখন থেকে অনুরোধ করে যাচ্ছি। তুমিইতো ব্যক্তিগত বিষয় বলে চেপে যেতে চাচ্ছ।’

‘মালিকা, অটোমান সাম্রাজ্যের কর্ণধার এখন সুলতান সুলেমান। তিনি একদিকে যেমন আপনার স্বামী ঠিক তেমনি অন্যদিকে অটোমানদের স্বপ্ন সারথী— প্রধান অভিভাবক। তার দায়িত্ব আর ব্যস্ততা যেমন আপনাকে মেনে নিতে হবে তেমনি অটোমানদের রীতি রেওয়াজের বাইরে কেউ নেই। আপনি যে কারণে মন খারাপ করে বসে আছেন সেটি কিন্তু অটোমানদের নিয়মের কারণেই। হারেমের খাসকামরায় কঙ্কুবাইনদের সঙ্গে রাত কাটানো এটাই প্রথম নয়। সব অটোমান সুলতানই এর অনুসারী ছিলেন। আপনার উচিত বিষয়টিকে সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা।’ ‘কিন্তু কীভাবে সারা। এও কি সম্ভব?’

‘অসম্ভবের কিছু নেই মালিকা। নিয়তিকে মেনে নিতেই হবে। আর আপনাকে কেবল খেয়াল রাখতে হবে আপনার প্রতি যেন সুলতানের ভালোবাসা এতটুকু না কমে।’

সারা  খাতুনের কথাগুলো কানের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল মাহিদেভরানের। কিন্তু ভিতরটা তখনো পুড়ছে।

চলবে... পরবর্তী পর্ব আগামী শনিবার


বিডি-প্রতিদিন/২৪ মে, ২০১৬/মাহবুব

সর্বশেষ খবর