২২ নভেম্বর, ২০১৫ ১৪:২০

কী চমক দেখাবেন খালেদা জিয়া?

কাজী সিরাজ

কী চমক দেখাবেন খালেদা জিয়া?

এ লেখা যখন পাঠকের হাতে পৌঁছবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তখন দেশে থাকার কথা। ১৯ নভেম্বর ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তেমনটাই জানিয়েছেন পার্টির মুখপাত্র ও অন্যতম আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। ২০ নভেম্বর লিখতে বসে ভাবছি রিপনের ঘোষণার ওপর আস্থা রাখা যায় কি না! এ সন্দেহ ঢোকার দুটি কারণ আছে।  এক. ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনের পথে যাত্রার আগে বলা হয়েছিল চোখের চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করে দুই সপ্তাহ পর তিনি ফিরে আসবেন। আসেননি। বিলাতি বিএনপির মাধ্যমে দেশে খবর এলো, ৩ অক্টোবর তিনি ফ্লাই করবেন। করেননি। এরপর আরও তিনবার তার দেশে ফেরার দিনক্ষণ বদলেছে; দুই. ১৯ নভেম্বর রাতে চ্যানেল একাত্তরের টকশোতে যখন তার দেশে ফেরা নিয়ে কথা বলছিলাম, তখনই আমাদের হাতে বিলাত থেকে পার্টির অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের পাঠানো ক্ষুদে বার্তার একটি কপি এলো। তাতে নিশ্চিত করে বলা হয়নি যে, উল্লিখিত দিনে তাদের পার্টি চেয়ারপারসন দেশের পথে রওনা হবেনই। বার্তায় উল্লিখিত May return শব্দটি আবারও খটকা লাগায়। শোনা গিয়েছিল দেশে ফেরার আগে তিনি আমেরিকা যাবেন। ইতিমধ্যে কিন্তু এ সংক্রান্ত জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে! বেগম জিয়া লন্ডন থেকে রওনা দেওয়ার প্রাক্কালে তারেক রহমানের সঙ্গে একটি আবেগমাখা ছবি আমাদের হাতে পৌঁছেছে ২১ নভেম্বর দুপুরে।অন্য যে কোনো একজন নাগরিকের দেশে ফেরা না ফেরা থেকে বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন। তিনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং দলটি বর্তমানে বিপন্ন দশায় পতিত। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এম কে আনোয়ারসহ বেশ ক’জন কেন্দ্রীয় নেতা, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতা এবং সারা দেশে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এখন জেলে। যৌথ অভিযানের নামে এখনো গ্রেফতার অব্যাহত আছে। মামলা-মোকদ্দমার অন্ত নেই। দৌড়ের ওপর আছেন দলের প্রায় সব অ্যাকটিভ নেতা-কর্মী। তৃণমূল স্তরেও কোনো নিস্তার নেই। দল চলে প্রায় আল্লাহর ওয়াস্তে। গুলশান অফিসের কিছু ‘রাজগোলাম’ (Henchman)  মাঝে মাঝে ‘চাবি ঘোরায়’। এমতাবস্থায় পার্টি চেয়ারপারসন সোয়া দুই মাস দেশের বাইরে থাকলে তার দেশে ফেরা নিয়ে আলোচনা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

দীর্ঘদিন পুত্র তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও কন্যা এবং পরলোকগত পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হয় না। তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এবং একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য যদি স্বল্পকালীন হতো এই সফর, তাহলে আলোচনা এত ডালপালা মেলত না। সফরটা অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে এই কারণে যে, পার্টির পক্ষ থেকেই ধারণা দেওয়া হয়েছিল, ‘খাদের কিনারা’ থেকে দলকে কীভাবে উদ্ধার করা যায় সে কৌশল নির্ধারণের জন্য ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সলাপরামর্শ করার জন্যই মূলত তিনি বিলাত গেছেন। চোখের চিকিৎসাটা ছিল পাশ্বকর্ম। দলের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার চোখের চিকিৎসা শেষ হয়নি। এরপরও দেশের সংকট ও ক্রান্তিকাল বিবেচনা করে তিনি দেশে ফিরে আসছেন।’ যাওয়ার সময় চিকিৎসাটাকে যেভাবে মুখ্য বিষয় হিসেবে দেখানো হয়েছিল, ফেরার সময় তা গৌণ হয়ে গেল। বিলাতে অবস্থানকালে তার পায়ের চিকিৎসার কথাও বলা হয়েছিল। এখন আর সেই ব্যাপারেও কিছু বলা হচ্ছে না। এসব অবশ্য এখন আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বেগম খালেদা জিয়ার ঘরে ফেরার খবরটাই আলোচনার কেন্দ্রে। এরও কারণ আছে। বিলাত থেকেই আওয়াজ দেওয়া হয়েছিল যে, দেশে ফিরে চমক দেখাবেন তিনি। আলোচনা হচ্ছে, কী চমক দেখাবেন খালেদা জিয়া? দল পুনর্গঠনের যে কথা প্রায় আট মাস ধরে বলা হচ্ছে (জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫, এই তিন মাসের ব্যর্থ আন্দোলনের পর থেকেই হাঁক দেওয়া হচ্ছিল যে, দল পুনর্গঠন করে নতুনভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবে বিএনপি), সেই ব্যাপারে অবাক করে দেওয়ার মতো কি কোনো পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন? কেমন হতে পারে সেই পরিবর্তন? দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি পরিপূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব পাবেন, নাকি তাকে স্থায়ী কমিটিতে স্থানান্তর করে তারেক রহমানের হাল-আমলের পছন্দের কাউকে নতুন করে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হবে? অথবা দলের প্রায় সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী, এমনকি সমর্থকদের পছন্দ এবং সাধারণের মধ্যে ‘ভদ্র রাজনীতিবিদ’ হিসেবে গড়ে ওঠা ক্লিন ইমেজ বিবেচনা করে মির্জা ফখরুলকে তার পদে বহাল রেখে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান করে একটা যৌথ নেতৃত্ব কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে? সেই ক্ষেত্রে তারেক রহমানের কী হবে? তিনি কি দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আবিভর্‚ত হবেন নাকি নানা মহলের সমালোচনা এবং তার ব্যাপারে রিজার্ভেশন বিবেচনা করে সর্বমহলে এমনকি দেশের বাইরেও দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কিছু দিনের জন্য দলীয় পদ-পদবি ছেড়ে বিশ্রামে যাবেন? এরকম কিছু না হলে চমক হবে কিসের? দলের স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন এখন ‘বিএনপি’র জন্য একটি ‘ফরজ’ কাজ। বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির বেশ ক’জন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। বয়সকালেও রাজনীতিতে তারা কী করেছেন তারা জানেন আর তাদের খোদা জানেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সমমর্যাদার কমিটি বিএনপির স্থায়ী কমিটি। তো, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটিকে দাঁড় করালে মনে হবে বিএনপিরটা (তিন/চারজন বাদ দিয়ে) আওয়ামী লীগেরটার ‘বাছুর’। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করেন, বিএনপির কোনো কোনো জেলা কমিটির মানও তাদের স্থায়ী কমিটির চেয়ে অধিক মানসম্পন্ন। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলী, সহ-সভাপতিমণ্ডলী, কার্যকরী কমিটি এবং নির্বাহী কমিটিতে অনেক দক্ষ ও ক্যারিয়ার তরুণ রাজনীতিবিদ আছেন যারা অনেক মানসম্পন্ন। এদের কোনো মূল্যায়নই নেই। এসব বিষয়ে টুকটাক জোড়াতালি বা ‘ফরজ’ কাজ সম্পাদন করে তাকে কিন্তু ‘চমক’ বলে চালানো যাবে না। আগের বর্ণিত বিষয়গুলোই হবে ‘চমক’। বেগম জিয়া বিলাত থাকাকালেই শোনা যাচ্ছিল যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা সেদেশের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে তার কথা হতে পারে। এমনও শোনা গিয়েছিল যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন সফর পিছিয়ে যাওয়ার কারণেই বেগম জিয়াও তার দেশে ফেরার সময় পিছিয়েছেন। অক্টোবর মাসের ৪ তারিখ বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ প্রসঙ্গে লিখেছিলাম, ‘ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কোনো উদ্যোগ যদি বেগম জিয়া নিয়ে থাকেন, তাকে পজিটিভ দৃষ্টিতেই দেখছেন অনেক পর্যবেক্ষক। ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যে সম্পর্ক তা অতি প্রাচীন ও দৃঢ়। কংগ্রেসের সঙ্গে বিএনপির পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কংগ্রেসের মতো হবে না কংগ্রেস-বিজেপি বৈরিতার কারণে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ভারত রাষ্ট্রেরও যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে বিজেপির কাছে তা-ও মূল্যহীন নয়। তারপরও ভারতের দলীয় রাজনীতির সমীকরণে বিজেপির সঙ্গে বিএনপির পার্টি-টু-পার্টি সম্পর্ক স্থাপনের একটা স্পেস আছে। দুটি দলই নির্বাচনমুখী গণতন্ত্রের চর্চা করছে। প্রকাশ্যেই দুটি দলের মধ্যে কথাবার্তা হতে পারে।’ মধ্য নভেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লন্ডন সফর করেছেন। তিনি ভারত থেকে লন্ডন রওনা হওয়ার দিনই ভারতের দায়িত্বশীল ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকা প্রথম পাতায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসহ বিশাল এক প্রতিবেদনে লিখেছে, লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ সংক্রান্ত কোনো খবর আর মিডিয়ায় এসেছে বলে নজরে পড়েনি। তবে এ নিয়ে দু’রকম ভাষ্য পাওয়া যায়। একটি ভাষ্য হচ্ছে, না, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা-তারেকের কোনো বৈঠক হয়নি। অপর ভাষ্য বলছে দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধির সঙ্গে। দ্বিতীয় ভাষ্যমতে, বিএনপিকে হিংসা ও হানাহানির রাজনীতি ছাড়া এবং জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া যদি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কৌশল হিসেবে দল পুনর্গঠন ও সারা দেশে দলকে সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এককভাবে দলীয় কর্মকাণ্ড চালানোর ঘোষণা দেন এবং সারা দেশে দু-তিন মাসের সাংগঠনিক সফরের ঘোষণা দেন, তাতে একটা চমক খুঁজে পাওয়া যাবে। জোট না ভেঙে তা স্থগিতও ঘোষণা করতে পারেন ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে তেমন মিত্রদের আশ্বস্ত করার জন্য। এমন কোনো সিদ্ধান্তও যদি তিনি ঘোষণা করেন, তাহলেও এর অন্তর্নিহিত বার্তা মানুষ বুঝে নেবে।

দেশে ফেরার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সরকার কী আচরণ করে তাতেও বোঝা যাবে বেগম খালেদা জিয়ার বিলাত সফরের তাৎপর্য। বাংলাদেশ বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজের অংশ। গণতান্ত্রিক বহিঃদুনিয়াকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে বাংলাদেশে কোনো শাসকের, সরকারের ও সরকারি দলের সারভাইভ করা কঠিন। বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন আদর্শ কোনো নির্বাচন ছিল না। দেশ-বিদেশে সবাই জানেন, তাতে ৩০০ আসনের জাতীয় সংসদে ১৫৩ আসনে কোনো নির্বাচনই হয়নি। অথচ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে। তাতে বলা আছে- “একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিনশত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের(৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে (সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যবৃন্দ) লইয়া সংসদ গঠিত হইবে, সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।” নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলে এবং সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতার কথা তুলে তথাকথিত সমঝোতার মাধ্যমে ১৫৩ আসন বিনাভোটে ভাগাভাগি করে নেয় আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টি। নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে (নিবন্ধিত ৪২ দলের মধ্যে ৩০) নির্বাচনে এনে একটি ইনক্লুসিভ নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে সময়ের বিষয় ফয়সালার জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যেত। সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র গ্রহণের বৈধতা প্রশ্নে উদ্ভূত জটিলতায় আসন শূন্য হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সাংবিধানিক নির্দেশ মোতাবেক সময়সীমার মধ্যে ওই উপনির্বাচনটি সম্পন্ন না করে উচ্চ আদালতের সুবিবেচনার কারণে প্রায় দুই মাস পর অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারেও সর্বোচ্চ আদালতের মতামত প্রার্থনা করা যেত। সে পথে হাঁটেনি সরকার। বাকি ১৪৭ আসনের নির্বাচন নিয়েও নানা কথা এখনো আছে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ- এরা সবাই বাংলাদেশে দ্রুত একটি ইনক্লুসিভ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সেই লক্ষ্যে আলোচনা-সমঝোতার কথা বলে আসছে সেই নির্বাচনের পর থেকেই। তারা ওই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় বলেছে বারবার। বিলাত সফরকালে বেগম খালেদা জিয়া তা কতটা নাড়া দিয়ে আপডেট করে আসতে পেরেছেন তার প্রতিফলন দেখা যাবে খালেদা-সরকার আচরণের মধ্য দিয়ে। মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন না করে বেগম জিয়ার সঙ্গে যদি সৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়, দলের বন্দী নেতা-কর্মীদের যদি মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যৌথ বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার ও হয়রানি যদি বন্ধ হয়ে যায় এবং বেগম খালেদা জিয়াও যদি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, সন্ত্রাসী হামলা, বিদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করেন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেমন আমূল পরিবর্তন হবে, তেমনি আশু ও জরুরি জাতীয় ইস্যুসমূহ নিয়ে বৈঠক-সভা একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যবর্তী বা আগাম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার পথও উন্মুক্ত করবে। তা যদি হয়, বোঝা যাবে বেগম জিয়ার বিলাত সফর সত্যিই কাজে লাগছে।

বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার তথ্য জানানোর সংবাদ সম্মেলনে ড. রিপনের একটি বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ব্যাপারে বিএনপি ‘দো-দিল বান্দা’র ভূমিকায় ছিল। স্বচ্ছ বিচারের কথা বলে মনের আসল বাসনা উহ্য রেখেছে বলে সরকারি মহল সমালোচনা করেছে।  সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল ঘোষণা সম্পর্কে রিপনের বক্তব্য ‘থলের বেড়ালই’ কি বের করে দিল? রিপন বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য সাকা চৌধুরীর কন্ট্রিবিউশন ছিল। কোন দিন যে তারা বলে ফেলবেন, মুক্তিযুদ্ধে সাকা জিয়াউর রহমানের ডেপুটি ছিলেন! সাকা নাকি গণতন্ত্রের প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন!  গণতন্ত্রের মিছিলে ট্রাক তুলে দেওয়া, নূর হোসেনের হত্যাকারী বিশ্ব বেহায়া খ্যাত স্বৈরাচার এরশাদের মন্ত্রী থেকে গণতন্ত্রের ‘ফাইটার’ ছিলেন সাকা? ভালোই মূল্যায়ন বিএনপির! আশা করা যায়, এ ব্যাপারে বেগম জিয়া নিশ্চয়ই একটা ব্যাখ্যা দেবেন এবং এই ‘মিথ’ রচনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাকে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাবেন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ই-মেইল : [email protected]

বিডি-প্রতিদিন/ ২২ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা

সর্বশেষ খবর