২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:১৮

জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রযুক্তি বনাম ক্ষমতার দাপট

গোলাম মাওলা রনি

জ্ঞান-বুদ্ধি-প্রযুক্তি বনাম ক্ষমতার দাপট

তলোয়ারের চেয়ে কলমের শক্তি বেশি কিংবা বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র এমনতর অমিয় বাণীর সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। আমাদের সমাজ ও সংসারে যখন জ্ঞান-বুদ্ধি প্রজ্ঞার ব্যবহার বেশি বেশি হয় তখন সুখ-শান্তি সমৃদ্ধির চাদর আমাদের জড়িয়ে রাখে। অন্যদিকে হুমকি-ধমকি, অন্যায়-অত্যাচার এবং কুশাসন যখন কোনো পরিবার কিংবা সমাজের প্রধান হাতিয়ার হয়ে পড়ে তখন সেখানে প্রাণশক্তি বলতে আর কিছু থাকে না।  প্রতিটি মানুষ একটি অবদমিত মন, ক্লান্ত দেহ, সংকীর্ণ ও ভীতসন্ত্রস্ত হৃদয় এবং প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাশক্তি নিয়ে জীবনের গ্লানি টেনে যায় বটে কিন্তু শাসনের দিকে এগুতে পারে না। মানুষের সুকুমার বৃত্তিসমূহ তখন লোপ পায় এবং পাশবিক আচার-আচরণ এবং কাণ্ডকারখানা সমাজ-সংসারের প্রধান পরিচয় হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সর্বকালের সব ধর্ম, সব মহামানব এবং অনুকরণীয় ব্যক্তিবর্গ মানুষদের সবার আগে জ্ঞান অর্জন তারপর বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত জীবন, সমাজ-সংসার এবং রাষ্ট্র পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছেন।

পৃথিবীর উন্নয়নে তিন ধরনের মেধা সবচেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। রাজনীতি, সামরিক কৌশল এবং প্রকৌশল। পরের ধাপে বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ধর্ম। রাজনীতির সঙ্গে যদি শাসন করার ক্ষমতা এবং লড়াই করার সামরিক প্রতিভা না থাকে তবে কোনোকালেই সফলতা আসবে না। পৃথিবীর ইতিহাসের সর্বকালের সেরা মিলিটারি জিনিয়াস বা বিস্ময়কর সামরিক প্রতিভাধর ব্যক্তিবর্গ শেষ অবধি টিকতে পারেননি। হারিবল, হামিলকার প্রমুখ মহাবীরগণ সারাটি জীবন শুধু যুদ্ধই করেছেন- কিন্তু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। কেবল রাজনৈতিক সতীর্থ না থাকার কারণে তাদের প্রতিভা কোনো কাজে আসেনি, উল্টো নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে হয়েছে। অন্যদিকে সামরিক প্রতিভা না থাকার দরুন অনেক প্রতিভাধর রাজা, বাদশাহ, রাজবংশ, গোত্রপতি এবং নেতা জমিনের বুকে পিলে চমকানো পতনের শত সহস্র চিহ্ন রেখে গেছেন।

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এসে আমার কেন জানি বারবার জ্ঞান-বুদ্ধি ও প্রযুক্তির কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এসব জিনিসের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। আমাদের রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে জ্ঞান-বুদ্ধি, কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার না করে ক্ষমতার দাপট, হুমকি-ধমকি, ভয়-সন্ত্রাস, ঠকবাজি, ছলচাতুরি, মিথ্যাচার, অনাচার, অবিচার এবং নির্দয়-নির্মমতার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কবির কাব্যিক প্রতিভা এখন আর সমাজ-সংসারের আলোকবর্তিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয় না। ক্ষমতাসীন অথবা আগামী দিনের সম্ভাব্য ক্ষমতাসীনদের তোষণ করে কবিতার শব্দমালা গ্রথিত হচ্ছে। দুই বিঘা জমি, বিদ্রোহী কিংবা বনলতা সেনের মতো কবি এবং কবিতার কথা তো কল্পনাও করা যায় না। কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, গোলাম মোস্তফা কিংবা ফররুখ আহমদ আজ আমাদের কাছে কেবলই ইতিহাস। আজকের কবিরা রাজনীতির মাঠের সস্তা ভং সেজে উল্লম্ফন করে আর ছন্দে ছন্দে বলে ওঠে- ওরে ওরে সখি দিয়ো তব দোরে তোমারই ঘামভর্তি কয়েকটি শিশি। অমাবস্যার ঘোর অন্ধকারে যবে মোরা যাব পরপারে- সেই ক্ষণে সখি, তোমারই ঘামভর্তি শিশি দূর করে দেবে এই অভাগার নিশি।

আমাদের জাতীয় বিবেক বলতে এখন আর অবশিষ্ট কিছু নেই, নেই কোনো জাতীয় মতাদর্শ কিংবা ভাবমূর্তি। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এবং মান্যবর শব্দগুলো আজ কেবল বইপুস্তকের শোভাবর্ধন করেছে। দেশীয় কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখন আর বাংলাদেশের সুনাম সুখ্যাতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারছে না। গত ৩৫-৪০ বছর ধরে জ্ঞান-বুদ্ধি এবং ওগুলো ভর্তি মন-মস্তিষ্ক এবং পেট আপন আলোয় ছেড়ে চলে গেছে ক্ষমতার বলয়গুলোতে। দলবাজি করে না এমন কোনো মনুষ্য সম্প্রদায় বঙ্গদেশে আছে বলে কোনো গল্প কিংবা কল্পকাহিনী ইদানীং শোনা যায় না। এক সময় তথাকথিত কবি-সাহিত্যিক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক দলের মধ্যকার কামার, কুমার, তাঁতি, জেলে, ধোপা, চণ্ডাল প্রভৃতি মেহনতি মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে দলবাজি করত। বছর দশেক আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলে পেশিশক্তি এবং শারীরিক শক্তির ধারক-বাহকরা মাথায় ঘিলুভর্তি লোকজনকে একটু যত্নআত্তি করে সামনে বসাত- সাধ্যমতো ইজ্জত দেখাত এবং ভালোমন্দ এটা-ওটা খেতে দিত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে কণ্ঠনালির ঊর্ধ্বাংশ পরিচর্যাকারীদের আর সাবেকী সেই সুদিন নেই। তারা এখন নির্বাসনে গিয়ে হাঁ-পিত্যেশ করতে করতে কুংফু, ক্যারাত, নান, সামুরাই চালানোতে কীভাবে সক্ষমতা অর্জন করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে যারা একটু বেশি পণ্ডিতি দেখাতেন তারা ইতিমধ্যেই মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপচার শেষ করে দলের দেহজ শক্তির আধারসমূহে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে আশাপ্রদ খবর হলো- এদেশের বন্যপ্রাণীরা এখনো নিজেদের দলীয় বৃত্তে আবদ্ধ করে দলকানা প্রাণীতে পরিণত হয়নি। এদেশের পাক-পাখালি, ফড়িং এবং প্রজাপতি এখনো তাদের কুহ-কাকলী এবং উড়ে চলার ভঙ্গিমার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক দলের সিলছাপ্পর মারেনি। কীট-পতঙ্গ এবং সরীসৃপ আজ অবধি দলীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাউকে দংশন করেনি। এদেশের বাতাস, পানি, চন্দ্র-সূর্যের আলো এবং মেঘমালা বিশেষ কোনো স্লোগান ধারণ করে প্রবাহিত হয়নি। অন্যদিকে দেশের জন্য ভয়াবহ অশনি সংকেত হলো- এদেশের মাতৃগর্ভ এবং মায়ের কোল পূর্বেকার মতো নিরাপদ নয়। পায়ুপথের নিরাপত্তার চিন্তায় অস্থির সভ্য মানুষেরা বারবার অসভ্যদের তাণ্ডব এবং নিকৃষ্ট পশুদের কাণ্ডকারখানার সমীকরণ মেলাতে মেলাতে একেকটি দুঃস্বপ্নের দিন এবং রাত পার করে দেয় গভীর উৎকণ্ঠা আর ভীতির মিশ্রণে তৈরি ভুনাখিচুড়ি গলাধঃকরণের মাধ্যমে।

রাজনৈতিক বিভাজন এবং হানাহানির মধ্যেও জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষিতজনেরা ইতিপূর্বে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থা বজায় রেখেছিল। তাদের উপাধি ছিল দলীয় থিংক ট্যাংক, দলীয় বুদ্ধিজীবী কিংবা দলীয় পেশাজীবী হিসেবে। সাম্প্রতিককালে তাদের দুর দুর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মস্তিষ্কে পদার্থ থাকলে প্রাণীরা সব বড়ই জ্বালাতন শুরু করে। তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় পাঁচটি ভিন্ন আঙ্গিকে অর্থাৎ ফাইভ ডাইমেনশনে (৫উ) ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করে এবং সব ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে। বিজ্ঞান যেখানে সর্বোচ্চ থ্রিডি অর্থাৎ তিনটি ডাইমেনশন আবিষ্কার করতে পেরেছে সেখানে দুই পয়সার ছাপোষা মস্তিষ্কধারী ফাইফ ডি ব্যবহার করে হাঁটু-কোমর ও বাহুবলে বলীয়ান মাংসল মনুষ্যের ভুল ধরার চেষ্টা করবে এটা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের দলে থাকতে হলে মাথা-ফাতা বাদ দিয়ে শরীরবাদী হয়ে চলতে হবে এবং কথার পরিবর্তে ঘুষি-ঢুসির পরিবর্তে কামড় এবং কোলে তুলে আদরের পরিবর্তে আছাড় থেরাপির জনক-জননী হতে হবে।

রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের উদ্ভাবিত থেরাপির প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কিছু মস্তিষ্কধারী বলল প্রণমি তোমারে মাতঃ- এ জীবন করিব বিসর্জন তব চরণ পর। তবুও করিব না কোনো ক্ষণে মাথার ওপর ভর। হস্ত, পদ-অঙ্গুলি করিব চালনা, যেমনটি তুমি করেছ ভাবনা। তারপর মোরা, কবির বন্ধী, মাথার যত্তসব ফন্দি, তেড়ে যাব রেগে অতি আবেগে প্রতিপক্ষের প্রতি। টিভি সেটে বসে, দেব চড় কষে তোমারে সপিছে যারা। বেঁচে যদি থাকে, বুঝিবে সে শেষে তোমারই হস্তের ইশারা। এরপর মুই, চাইব একটু ভুঁই, তোমারই চরণ তলে, দিও তব ঠাঁই, করো নাকো ছাই, আমারই কৃতি তব অবহেলে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিদ্যা-বুদ্ধি এবং প্রযুক্তির অঙ্গনে দলবাজির প্রভুত্ব কায়েম হওয়ার কারণে দেশের প্রতিটি অঞ্চল একটি রোবটিক সমাজে পরিণত হয়েছে। মানুষের চিরায়ত মানবিক মূল্যবোধ, শিষ্টাচার, নীতি নৈতিকতা, মায়া মমতা, স্নেহ ভালোবাসা প্রভৃতি উধাও হয়ে গেছে। নির্মম নিষ্ঠুরতা, অহংকার মিথ্যা বলা, অন্যায়, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের দক্ষতা এবং ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষের মানমর্যাদা। আজ সাধুরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং দুর্নীতিবাজরা সাধুবেশে সাধু হওয়ার উপদেশ দিচ্ছে। সন্ত্রাসীরা শান্তির পায়রা হাতে মানুষজনকে শান্তির পথে চলার উপদেশ দিচ্ছে। অসৎ লোকরা সৎ লোকদের জন্য পদাবলী রচনা করছে এবং অশিক্ষিতরা শিক্ষিতদের শিক্ষাগুরু হিসেবে ঘাড়ে চেপে বসেছে। একটা সময় ছিল যখন পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা-সুরত দেখে লোকজনের চরিত্র এবং গুণাগুণ সম্পর্কে আন্দাজ করা যেত। কিন্তু এখনকার সমাজে সব কিছু এমনভাবে উল্টে গেছে যে, বেশভূষা দেখে কোনো কিছু আন্দাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের সমাজের যুবকরা বৃদ্ধের বেশ ধরেছে। বৃদ্ধরা যুবক হওয়ার প্রতিযোগিতায় যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছে। নারীদের বেশভূষা দেখে পুরুষরা লজ্জায় মরে যায়। অন্যদিকে পুরুষদের নারীত্বের বাড়াবাড়ি দেখে নারীসমাজ ক্রোধে উম্মত্ত হয়ে পড়ে। গৃহপালিত পশুপাখিদের স্বাস্থ্য, প্রজনন, বর্জ্য ত্যাগ এবং পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে যে হারে উন্নয়ন হচ্ছে তার চেয়েও দ্রুত গতিতে উকুনযুক্ত মাথা, ঘামযুক্ত বগল, ময়লাযুক্ত কাপড়-চোপড়, দাঁত, শরীরের চামড়া, নখযুক্ত হাত ও পায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জটাযুক্ত চুল-দাড়ি এবং মোচের মধ্যে উঁকিঝুঁকি দিয়েও ঠোঁট না চেনা লোকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি বন্যপ্রাণীদের মতো প্রাকৃতিক কর্মকাণ্ড এবং যৌনাচারের কীর্তিময় পাশা এবং পাশীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন, মরফিন ইত্যাদি সেবনকারীরা রাজনীতির শীর্ষ পদের দিকে এত দ্রুত ধাবিত হচ্ছে যে, আলোর গতিও লজ্জা পেয়ে যাচ্ছে।

মস্তিষ্কের খুপরিতে মাংসভর্তি লোকজনের দাপটে আমরা খুব দ্রুত চৈনিক সভ্যতার দিকে এগুচ্ছি। তবে বর্তমানের চৈনিক সভ্যতা নয়। আমরা যাচ্ছি সম্রাট সিং হুয়ান টি এর সভ্যতার দিকে। চীন জাতির একটি অভিনব ইতিহাস শুরু হয়েছিল সেই সম্রাটের আমলে আজ থেকে প্রায় ২২৫০ বছর আগে। চীন আজও তাদের প্রথম সম্রাটের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাদের দেশে পশ্চিমা প্রযুক্তি বন্ধ করে রেখেছে। ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসআপ ও দেশে চলে না। ইউটিউব, গুগল ইত্যাদিও বন্ধ। তাই বলে কি চীন চলছে না। চীনের উন্নয়ন কী বাধাগ্রস্ত হচ্ছে? মোটেই না- উল্টো পশ্চিমারা তাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিন-রাত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে চীনা প্রযুক্তি এবং উন্নয়নের রহস্য উদঘাটন করার জন্য।

আমরা উন্নয়নের মডেল হিসেবে চীন-রাশিয়া এবং লিবিয়াকে গ্রহণ করব এমন বক্তব্যকে সামনে রেখে একদল লোক মাও সে তুং, স্টালিন এবং মুয়াম্মার গাদ্দাফির উন্নয়নের কৌশল রপ্ত করার জন্য পাগল হয়ে পড়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখার জন্য এখনো ইউটিউব খোলা রাখা হয়েছে। আধুনিককালে পুতিন কীভাবে নেতা হলো এবং আশির দশকে আয়াতুল্লাহ খোমেনি কীভাবে ইরানের ক্ষমতায় বসল এসব নিয়ে দেশ-বিদেশে যে গবেষণাযজ্ঞ চলছে আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে ওইসব গবেষণার সিল্করুটে যুক্ত হয়ে পড়েছি। আমরা ইরাক-ইরান যুদ্ধের ওপর থিসিস লিখতে গিয়ে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে ভাবছি- ইরানি ছাত্ররা কীরূপে তেহরানের মার্কিন দূতাবাসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বন্দী করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে নাকে খত দেয়াল। কী করে ইরানিরা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের কপালে দুর্ভোগের কালিমা লেপন করে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় জানাল এবং মার্কিনিদের কাছ থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার আদায় করে ছাড়ল।

ইদি আমিন কীরূপে প্রিন্স অব স্কটল্যান্ড হয়েছিলেন এবং সাদা চমড়ার পশ্চিমাদের তাকে বহনকারী পালকি ঘাড়ে তুলে নিতে বাধ্য করেছিলেন  এই রহস্য উন্মোচনের জন্য গবেষণা করতে একদল লোক তাদের মাংসভর্তি মাথাকে দিনরাত ব্যস্ততার মধ্যে রেখেছেন।

এতসব কাণ্ডকারখানা এবং গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার সুনসান নীরবতা এবং সীমাহীন একাকিত্ব। জ্ঞান বুদ্ধি এবং প্রযুক্তি কাউকে নীরব থাকতে দেয় না- আর একাকিত্ব তো একেবারেই অসম্ভব।  আর এ কারণেই আমরা চৈনিক সভ্যতার দিকে পা বাড়ালাম। জয় হোক আমাদের নব নব অগ্রযাত্রার।

                লেখক : কলামিস্ট।

সর্বশেষ খবর