২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১৮:২৪

প্রধানমন্ত্রীর অফ দ্য রেকর্ড গল্প এবং একজন রিপোর্টার

শওগাত আলী সাগর

প্রধানমন্ত্রীর অফ দ্য রেকর্ড গল্প এবং একজন রিপোর্টার

তোমাদের কেউ কি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে 'অফ দ্য রেকর্ড’ চ্যাট করতে চাও?-  ব্যর্থ হয়ে যাওয়া দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা শেষে ফেরার পথে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির সাথে বিমানে এমন ‘গল্প করার’ সুযোগ যে কোনো সাংবাদিকের জন্যই ‘মুহূর্তে লুফে নেওয়ার মতো’ প্রস্তাব।

ঘটনাটা গত মাসের। জাস্টিন ট্রুডো গিয়েছিলেন চীন সফরে। চীনের সাথে কানাডার দ্বি-পাক্ষিক একটি বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছেই- এমন একটি ধারণা ছড়ানো হয়েছিলো দু'পক্ষ থেকেই। কিন্তু শেষ অবধি সেই আলোচনাটি বাস্তবতা পায়নি। চারদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীনে থাকা সাংবাদিকরা কেউই জানতে পারেনি– কোথায়, কেন দুই দেশের এমন নিশ্চিত প্রায় বাণিজ্য আলোচনাটি ভেস্তে গেল।

চারদিনের সফরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার খুব কম তথ্যই সাংবাদিকরা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তিনবার সাংবাদিকদের সঙ্গে অন রেকর্ড কথা বলেছেন, কিন্তু সেখানে বৈঠক নিয়ে তেমন তথ্য ছিল না। চীনের প্রধানমন্ত্রী একবারের জন্যও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ মুহূর্তে সেটি বাতিল করে দেওয়া হয়। কেন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না- তার ব্যাখ্যা দেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি চীনের প্রধানমন্ত্রী। ‘কানাডার সাথে চীনের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনাটি কোথায়, কেন ভেস্তে গেলো’-  এই প্রশ্নের উত্তর ছাড়াই সাংবাদিকরা দেশে ফিরছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ‘অব দ্য রেকর্ড’ গল্প করার প্রস্তাব প্রত্যাখান করা কোনো রিপোর্টারের পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানিয়ে দিলেন- ‘তবে শর্ত একটাই। প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে খোলামেলা কথা হবে। তবে এইসব কথাবার্তা রিপোর্ট করা যাবে না।‘

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের প্রায় সবাই রাজি হয়ে গেলেন। রাজি হলেন না টরন্টো স্টারের পলিটিক্যাল রিপোর্টার আলেক্স বালিঙ্গাল। ‘আমার মনের ভেতর থেকে যেন একটি বাণী বেরিয়ে এলো, দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাজনীতিকের সঙ্গে তুমি ‘অফ দ্য রেকর্ড’ গল্পে রাজি হতে পারো না। কখনোই না।‘- আলেক্স এর ভাষ্য। অন্তরের বার্তাকেই সম্মান জানালেন আলেক্স। তাঁর সঙ্গী সাংবাদিকরা যখন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে অফ দ্য রেকর্ড খোশগল্পে মশগুল, আলেক্স তখন নিজেকে সরিয়ে রাখলেন সেখান থেকে।

আলেক্স এর ভাষ্য,’আমি রিপোর্টার। রিপোর্টার হিসেবে আমি জনগণের প্রতিনিধি। চীনে কি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতি কি রকম- এইসব বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে আমি শুনবো, অথচ শর্ত থাকবে সেগুলো আমি কখনোই লিখতে পারবো না- এমন একটি প্রস্তাবে একজন রিপোর্টার রাজি হতে পারেন না।

আলেক্স যে পত্রিকাটিতে চাকরি করেন, টরন্টো স্টার এর নিজস্ব একটি ‘নিউজরুম পলিসি অ্যান্ড জার্নালিস্টিক স্টান্ডার্ড গাইড’ আছে। সেই পলিসি হচ্ছে কোনো সোর্সের সাথে অব দ্য রেকর্ড আলোচনার কোনো তথ্যই টরন্টো স্টার কখনোই প্রকাশ করবে না।

অবশ্য সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের সঙ্গে জাস্টিন ট্রুডোর অফ দ্য রেকর্ড কথাবার্তা বলা-নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মিডিয়া রিলেশনস বিভাগের ম্যানেজার ক্যারেুন আহমদ টরন্টো স্টারকে পাঠানো এক ই-মেইলে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রতিটি বিদেশ সফরেই প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের সাথে বিমানে অফ দ্য রেকর্ড গল্প করেছেন। তিনি বলেন, এই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা প্রধানমন্ত্রী এবং সাংবাদিক- উভয়পক্ষই সফরটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ পান। এমন কি তাদের মনে কোনো প্রশ্ন তাকলে সেটিও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। তিনি বলেন, অফ দ্য রেকর্ড কথাবার্তা সংলাপের নতুন একটি সুযোগ তৈরি করে। আমাদের জানা মতে এ যাবতকালের প্রতিটি সফরে প্রতি অব দ্য রেকর্ড আলোচনায়ই সফর সঙ্গী সব সাংবাদিক অংশ নিয়েছেন।

তবে টরন্টো স্টারের ন্যাশনাল ডেস্কের সিনিয়র এডিটর জুলি কার্ল তাদের রিপোর্টার আলেক্স এর অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অফ দ্য রেকর্ড আলোচনায় রাজি না হয়ে রিপোর্টার সঠিক কাজটিই করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এইটা করা উচিৎ হয়নি। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, চায়না মিশনের ব্যর্থতার গ্লানিটা প্রধানমন্ত্রী তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দিয়ে সাংবাদিকদের একটি গ্রুপের কাছে তার ব্যক্তিগত গল্প ‘খাইয়ে’ দিতে চেয়েছেন।  

লেখক: সম্পাদক নতুন দেশ.কম।

বিডি-প্রতিদিন/২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব

সর্বশেষ খবর