৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১৭:৫২

বিএনপি-জামায়াতের সাথে গণতান্ত্রিক চর্চায় অংশগ্রহণ আসলে কতটুকু সম্ভব?

মোহাম্মদ এ. আরাফাত

বিএনপি-জামায়াতের সাথে গণতান্ত্রিক চর্চায় অংশগ্রহণ আসলে কতটুকু সম্ভব?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে যতভাবে অপমান করা সম্ভব তা বিএনপি করেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে বিএনপি, তাদের সংসদে নিয়ে এনেছে, তাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছে, তাদের মন্ত্রী বানিয়েছে। মাগুরা উপনির্বাচন, ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মতো অপমানজক ঘটনা ঘটেছে বিএনপির হাত দিয়েই। বিএনপি যাকে বলে বহুদলীয় গণতন্ত্রের তথাকথিত প্রবর্তক, সেই জিয়াউর রহমানের শাসনে গণতন্ত্র যেরকম কিম্ভূতকিমাকার চেহারা নিয়েছিল তার নমুনা ইতিহাসে বিরল।

এখানেই শেষ নয়। বিএনপি একুশে অগাস্ট ঘটিয়েছে, সংসদের নির্বাচিত বিরোধী দলীয় নেতাকে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করতে চেয়েছে। আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে শত শত নিরপরাধ মানুষ, যারা এই দেশেরই নাগরিক, তাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে, কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে গেছেন সারা জীবনের জন্য। কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করেছে।

সংগঠনের ভিতরেও বিএনপি গণতন্ত্রের চর্চা করে না। এই দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের কোনো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নেই, প্রবীণ নেতাদের অপমান বিএনপিতে একটি নিয়মিত ঘটনা। এমনকী বিএনপির যেসব কর্মীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়, তাদের কথা, আচরণ, যুক্তি কোনোটার সাথেই গণতন্ত্রের দূরতম সংযোগ খুঁজে পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ লন্ডনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যে ন্যাক্কারজনক হামলা তারা চালিয়েছে, তার পরে আর কোনো যুক্তি তর্কের অবকাশ কি থাকে? জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবিকে তারা যেভাবে অপমান করেছে তা পৃথিবীর কোনো দেশে সুস্থ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আচরণ হিসাবে স্বীকৃত না। অবশ্য এ কথাও মনে রাখা দরকার, এইসব নেতাকর্মীদের যিনি নেত্রী, সেই খালেদা জিয়া নিজেও প্রতি বছর ১৫ আগস্টে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। রাজনৈতিক শ্রদ্ধাবোধ বলে কোনো কিছু খালেদা জিয়া বা বিএনপির ভিতরে নেই।

এই হচ্ছে বিএনপির গণতন্ত্র চর্চার নমুনা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ একটি হতাশাজনক বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে, বাংলাদেশের রাজনীতির অন্তনীল চরিত্রটিকে বিবেচনা না করে যেসব সুশীল গণতন্ত্রের পুঁথিগত ব্যাখ্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারা আসলে সত্যটাকে অস্বীকার করেন, একটা মিথ্যা ধারণার প্রচার করেন।

গণতন্ত্রের সবচেয়ে সুন্দর সংজ্ঞাটি দিয়েছিলেন আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। গণতন্ত্রের জন্য এই ব্যক্তির অবদান যত, তার তুলনা পাওয়া সহজ নয়। সেই আব্রাহাম লিঙ্কনকেও দেশবিরোধী শক্তিকে দমন করার জন্য হ্যাবিয়াস করপাস স্থগিত করতে হয়েছিল। আপাত দৃষ্টিতে একে গণতন্ত্র বিরোধী মনে হতে পারে, বাস্তবতা হলো, এই চরম পদক্ষেপ নেয়ার কারণে আমেরিকার গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছিল, রাষ্ট্রের অখন্ডতা রক্ষা পেয়েছিল।

বিএনপি একটি সন্ত্রাসীদের দল, গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও এই দলের ভিতরে নেই। এদের সাথে গণতান্ত্রিক আচরণ করা যে অসম্ভব, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর