৮ জুলাই, ২০১৮ ১৪:২৮

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তিঃ আত্মঘাতী নাকি সহযোগিতামূলক!

হাসান ইবনে হামিদ

বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তিঃ আত্মঘাতী নাকি সহযোগিতামূলক!

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্কের গল্পটা বহু পুরোনো। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের নামটি অঙ্গা-অঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালীন সময় থেকে যুদ্ধকালীন পুরো সময়টাতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশের পাশে থেকেছে ভারত। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের পাশে ভারত যেভাবে দাঁড়িয়েছিলো তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরেই লিখা থাকবে।

তবে আমার কাছে বরাবরই মনে হয়, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি অদ্ভূত রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর দাঁড়ানো। আর এই গোলকধাঁধাতেই কাটছে সময়, যাচ্ছে দিন। তবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সবচেয়ে বেশি যা হয় তা হলো নোংরামি। এই নোংরামি একেবারেই অসহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা হয়, যখন দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রা নিতে শুরু করে। 

আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, যখনই ভারত-বাংলাদেশ কোন চুক্তি বা প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের কোন সফর হয় তখনই সেই নোংরামির চূড়ান্ত রূপটি দেখা যায়। আজকের লেখায় সামরিক দিক থেকে দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়ে একটু আলোকপাত করবো। দু’দেশের মধ্যকার পারস্পরিক সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিরক্ষা খাতে স্বাক্ষরিত হওয়া ভারত-বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক কী প্রভাব ফেলবে তার দিকে একটু আলোকপাত করবো।

বাংলাদেশের অবস্থানই তাকে এশিয়া তথা বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এমন এক জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান তাতে তার স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব রয়েছে খুবই বেশি। সমাজনীতি, অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান উন্নতির কারণেও এখন অনেকেই চায় বাংলাদেশের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে। বাংলাদেশের পূর্বের পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এখন মডেল, তার অর্থনৈতিক উন্নয়নও হচ্ছে দুরন্ত গতিতে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতাও সুবিদিত। বৈশ্বিক শান্তি রক্ষা অভিযানেও তারা নাম করেছে। সক্ষমতা ও শক্তির কারণেই মূলত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এখন বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিকেই স্থল সীমান্ত আর জলসীমানাও ভারতের সঙ্গে রয়েছে। তাই সর্বদিক থেকে বিবেচনা করলে ভারতের সাথেই বাংলাদেশের সম্পর্কটা খুব জোড়ালো অবস্থানে রাখতে হয় বা রাখা উচিত। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও ঠিক সেই পথেই এগুচ্ছে এবং ভারত-বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই সমাধান করছে। এরই যাত্রাপথে বাংলাদেশ ভারতের সাথে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। 

গত বছর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে হওয়া সামরিক সহযোগিতা স্মারক সই। এই সমঝোতা স্মারক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। 

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে- এই চুক্তি সই করে সরকার দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। যদিও এই বিক্রি করবে শব্দটার সাথে বহু আগে থেকেই দেশের মানুষ পরিচিত। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগ পাল্টা বক্তব্য দিয়েছে এবং যারা দেশ বিক্রির ধোঁয়া তুলছে তাদেরকে অর্বাচীন বলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সামরিক সমঝোতা স্মারক সম্পর্কে বলার আগে একটি বিষয় পরিষ্কার হওয়া জরুরি। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রের সাথেই বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই, ভারতের সাথেও বাংলাদেশ কোন রকম প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেনি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। 

চুক্তি আর সমঝোতা স্মারকের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে সেটা সবার জানা এবং বুঝা উচিত। সমঝোতা স্মারক যেকোনো মুহুর্তে বাতিল করা যায় কিন্তু চুক্তির ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য না। সকল চুক্তিই সমঝোতা স্মারক কিন্তু সকল সমঝোতা স্মারক চুক্তি নয়। তাই প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হয় তা গ্রহণযোগ্য নয়। মূলত ভারত বিরোধী মনোভাবকে চাঙ্গা করতে এই বক্তব্য প্রদান করে থাকে প্রতিপক্ষরা। 

ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যেই বেগম জিয়া তখন বলেছিলেন, ‘কিছুই রাখে নি, সব বিক্রি করে দিয়ে এসেছে'। অথচ বেগম জিয়া ২০০২ সালে প্রতিরক্ষা খাতে চীনের সাথে ঠিক এরকমই একটি সমঝোতা স্মারকে সাইন করেছিলেন। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, যে চুক্তি চীনের সাথে বেগম জিয়া করেছিলেন সে চুক্তি শেখ হাসিনা ভারতের সাথে করলে দোষারূপের রাজনীতির বলি কেনো শেখ হাসিনা হবেন। 

বাংলাদেশ-ভারতের হওয়া সামরিক সমঝোতা স্মারক নিয়ে কী আছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ। সই করা সমঝোতা স্মারকে ৬টি বিষয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো-

১. সামরিক খাতে ঋণ সহযোগিতা (লাইন অব ক্রেডিট)- সামরিক খাতে ঋণ সহযোগিতা বা লাইন অব ক্রেডিট। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ৫শ’ মিলিয়ন ডলারের ঋণ সহযোগিতা দেবে ভারত। এ অর্থ দিয়ে দিল্লি থেকে যেকোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারবে ঢাকা। ভারত থেকে পাওয়া এই ঋণের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য জাহাজ, আকাশ প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত সেন্সর এবং নৌবাহিনীর শিপইয়ার্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করবে। ঋণের অর্থ কীভাবে খরচ হবে, কোন কোন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনাবেচা হবে, সহযোগিতার ক্ষেত্র কোথায় কীভাবে বাড়ানো হবে, তা আলোচনার পর পরবর্তীতে একটা কাঠামো বা ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশের যেসব প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রয়োজন ভারত যদি সেসব তৈরি করে, তাহলে দুই দেশের সম্মতিতে তা কেনাবেচা হবে। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের প্রয়োজনভিত্তিক চাহিদাপত্র ভারতকে দেবে। তা পাওয়ার পর ঠিক হবে ভারত কী কী সরবরাহ করতে পারে। এমনকি প্রতিরক্ষা খাতে যে ৫০ কোটি ডলার ভারত ঋণ দিচ্ছে, তার পুরোটাই যে ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে খরচ করতে হবে তা নয়। চুক্তির একটা অংশ (প্রায় ৩৫ শতাংশ) তৃতীয় দেশ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনে বাংলাদেশ খরচ করতে পারবে বলেও উল্লেখ রয়েছে। 

২. সামরিক সহযোগিতা- নিজেদের দক্ষতা ও কর্মপরিধি অনুসারে আন্তর্জাতিক আইন, নিজ নিজ দেশের জাতীয় আইন ও পরিস্থিতির আলোকে দুই দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াবে।

৩. যৌথ প্রশিক্ষণ উদ্যোগ ও বিনিময়- এতে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-
ক. পারস্পরিক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের সামরিক প্রতিনিধি প্রেরণ।
খ. সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন, বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক, তথ্য ও পাঠ্যসূচি বিনিময়।
গ. সামরিক যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে পারস্পরিক সহযোগিতা।
ঘ. সামরিক বাহিনী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা। সামরিক বাহিনীর জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, দুর্যোগ মোকাবেলা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশিক্ষণ।
ঙ. সামরিক ইস্যু নিরসনে আলোচনার জন্য কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক। সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাৎসরিক ভিত্তিতে সভা।
চ. পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দুই দেশ নৌজাহাজ এবং এয়ার ক্রাফট ভ্রমণের আয়োজন।
ছ. পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে দুই দেশ আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমানায় যৌথ নৌমহড়ার আয়োজন করবে।
 
৪. প্রতিরক্ষা শিল্প সহযোগিতা- পরস্পরকে প্রতিরক্ষা শিল্প খাতে সহযোগিতা দেয়া হবে। স্পেস টেকনোলোজিতে সহযেগিতা, সমুদ্র অবকাঠামোর উন্নয়নে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং কারিগরি সহযোগিতা।

৫. প্রতিরক্ষা গবেষণা সহযোগিতা- এই সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ ও ভারত পরস্পরকে সহযোগিতা করবে। প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় এবং সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী প্রকৌশলীদের সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এই সহযোগিতা করা।

৬. উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা- বাৎসরিক ভিত্তিতে সামরিক বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পর্যায়ে বৈঠক। এছাড়া প্রতিরক্ষা সচিব পর্যায়ে বৈঠক করে সামরিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা। 

সামরিক সমঝোতা স্মারকের প্রতিটি পয়েন্ট ভালো করে তুলে ধরেছি যেনো আমাদের অস্পষ্ট ধারণাসমূহ পরিষ্কার হয়। যখন কোন চুক্তির ক্ষেত্রে নেগেটিভ সংবাদ আসে বা ‘চুক্তিতে নিজের দেশকে ঠকানো হয়েছে’ এই ধরনের সংবাদ আসে তখন নাগরিক হিসেবে নিজেদের খারাপ লাগা স্বাভাবিক। কেননা বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ, তার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে। এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর অনেকেই বলেছে , ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতেই সে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আবার এ কথাও শুনা গিয়েছে চীনের সাথে যে বড় সহায়তা চুক্তি হয়েছে তাকে ভারসাম্যপূর্ণ করতে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এ সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে, তারা দুটি সাবমেরিন কেনার পর ভারত এই চুক্তি করতে চাইছে। এই ধরনের সংবাদ পরিবেশনের ফলে এ প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক নিয়ে এক ধরনের বিরূপ মনোভাব জনমনে চলে যায়। কেননা এ ধরনের খবরে নাগরিকের মর্যাদা আহত হয়, আর এ বিষয়টাই ভারতবিরোধী বাগাড়ম্বরের পালে হাওয়া দিয়েছে। চুক্তিবিরোধীরা এই আবেগ কাজে লাগিয়ে ভারতের বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
 
এই চুক্তির সুবিধা কী, তা বোঝার সময় এসেছে। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকলে ইতিমধ্যে সামরিক সহযোগিতার যে ধারা শুরু হয়েছে তার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশে যেহেতু সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ধরন বদলে যায়, তাই এ ধরনের বন্দোবস্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর দেশ দুটির সম্পর্ক তো ক্ষমতাসীন দলের ওপর নির্ভর করে।

দ্বিতীয়ত, দুই দেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণে সন্ত্রাসবাদের মতো অনেক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ যৌথভাবে মোকাবিলার প্রয়োজন আছে। সে কারণেই দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে অধিকতর সমন্বয় ও সহযোগিতা প্রয়োজন। যৌথ প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে দুই দেশের সক্ষমতার মধ্যে সামঞ্জস্য আসবে। এতে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও হুমকি মোকাবিলা করা সহজতর হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের অস্ত্র-বাজার থেকে প্রভূত লাভবান হবে। এখন ভারত পৃথিবীতে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। শিগগিরই তারা বড় অস্ত্র সরবরাহকারী হতে যাচ্ছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের কারণে অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভারতে কারখানা খুলছে, সংযোজন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ এই সুযোগে সেখান থেকে উন্নত প্রযুক্তি ঘরে আনতে পারে। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণে বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তারা সেখান থেকে অনেক সহজেই প্রযুক্তি ও অস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। একই সঙ্গে কৌশলগত সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য বাংলাদেশ বহুমুখী উৎস থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করতে পারে। প্রযুক্তি স্থানান্তরের এই প্রস্তাব গ্রহণ করে বাংলাদেশ অস্ত্র তৈরির দিকে এগোতে পারে, যেটা তার ব্র্যান্ড বাংলাদেশ ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশ উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য বানাতে পারবে।

আমাদের অনেকের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান যে, সামরিক সমস্যা থাকলেই কেবল দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সমঝোতা স্মারক থাকতে হবে। কিন্তু একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব থাকলেই কেবল এটা আবশ্যক এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। এমনটি হলে নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের মতো দেশগুলোর মধ্যে কোনো সামরিক সমঝোতা থাকত না। ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সামরিক সমঝোতা রয়েছে। যেমন আমাদের রয়েছে চীন ও আমেরিকার সঙ্গে। বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মহড়া আগে থেকেই চলছিল। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদসহ আমাদের অনেক সামরিক কর্তারাই ভারতে প্রতিরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সামরিক সমঝোতা স্মারক একেবারে তাৎপর্যহীন বলা যাবে না। কারণ এই সব বিষয় অনেক আগে থেকে চলছিল। বর্তমানে একটি লিখিত ব্যবস্থার মধ্যে সেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা না থাকলে ১০ ট্রাক অস্ত্র আনার ঘটনা আরও ঘটবে। নানা সমঝোতার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে অনেকগুলো স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এতে ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের ভেতর চলমান ভারত বিরোধিতার রাজনীতিতে সামরিক সমঝোতা স্বাক্ষরের বিষয়টিকে খুব নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে। অথচ দু’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে এই ধরণের চুক্তি খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এর আগে আমাদের সাথে চীনের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, হয়েছে রাশিয়া এবং আমেরিকার সাথেও। তাই জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে যারা প্রতিরক্ষা ইস্যুতে রাজনীতি খেলছে তাদেরকে চিনে নেবার সময় এসেছে। পাকিস্তানে যেমন কিছু রাজনৈতিক দল ভারত বিরোধিতাকে রাজনীতিতে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে, বাংলাদেশেও এমন অনেক গোষ্ঠী আছে যারা প্রতিনিয়ত ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়েই টিকে থাকতে চাইছে। 

সবশেষে বলবো, ভারত অভিন্ন প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির কথা বলেছে, প্রতিরক্ষা চুক্তিকে এই পরিপ্রেক্ষিতেই দেখা উচিত। ভারতের এই প্রকল্পে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী। এই লক্ষ্য অর্জনে সবার সহযোগিতা জরুরি। এর মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক বাহিনী আরও কাছে আসবে। এতে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। ‘ত্রিরঙ্গা-লাল সবুজ’ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।  

লেখক- রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

বিডি-প্রতিদিন/ই-জাহান

সর্বশেষ খবর