১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৪:১৪

নির্বাচন আসন্ন, কিন্তু জনগণের উচ্ছ্বাস নেই ভোট নিয়ে

হাসিনা আকতার নিগার

নির্বাচন আসন্ন, কিন্তু জনগণের উচ্ছ্বাস নেই ভোট নিয়ে

প্রতীকী ছবি

প্রচলিত ভাবে ভোটের বছর নিয়ে এক ধরনের আগ্রহ জেগে উঠে সারা দেশের মানুষের। শহর, গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকানে, মাঠে ময়দানে নানা জল্পনা কল্পনা চলে প্রার্থীদের বিগত দিনের কাজের হালখাতা নিয়ে। সরকার দল, বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলের নেতা কর্মীদের আনা গোনা বেড়ে যায় নিজ নিজ এলাকাতে। এ হলো বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময়ের চালচিত্র।

কিন্তু মানুষের জীবনযাত্রায় আজকাল রাজনীতির প্রভাব দেখা যায় না তেমন করে। এক সময় বলা হত, এদেশের মানুষ আর যাই না পারুক রাজনীতি ভালো বুঝে। সে কারণেই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরিণিত হয়েছিল জনযুদ্ধে।

কিন্তু রাজনীতি তার সে ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ। বিশেষ করে বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম তথাকথিত রাজনীতি বিমুখ এখন। এর জন্য রাজনীতিবিদরা দায়ী অনেকাংশে। ৯০ এরপর এদেশের রাজনীতি চলে গেছে ব্যবসায়ীদের হাতে। আর সে ধারাবাহিকতাতে নির্বাচনে মাঠের রাজনীতিবিদরা নমিনেশন থেকে বঞ্চিত হয়। অর্থের আধিক্যেতাতে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি বনে যায় নেতা। ভোটের ক্ষেত্রে এ অবস্থা সকল দলে বিদ্যমান। তার উপর গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসা দুটি প্রধান দলকে মানুষ বিভিন্ন টার্মে দেখেছে। শাসন ব্যবস্থায় সরকার বা বিরোধী দল হিসাবে একটা অংক কষে রেখেছে জনগণ।

সার্বিকভাবেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিত্য জীবনে মানুষ তার ব্যক্তিজীবন চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নানাভাবে। যার ফলে রাজনীতি, নির্বাচন এসব শুধুমাত্র যারা দল করে তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয়।

নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিশেষ করে লক্ষ্যণীয় তা হল সকল দলের অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের নির্বাচনের রাজনীতিতে  বিশেষভাবে দুটি দল-আওয়ামী লীগ, বিএনপি আর তাদের মার্কা নৌকা ও ধানের শীষ থাকে বিশাল অংশ জুড়ে। তবে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা সংশয় দুইই রয়েছে। আর জাতীয় পার্টি, বাম দল সহ নব গঠিত যুক্তফ্রটের বিষয় জনগণকে সেভাবে এখন পর্যন্ত প্রভাবিত করছে না।

বিগত নির্বাচনের পর বাম দল আওয়ামী লীগের শরিক দল হয়েই আছে ক্ষমতায়। বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় পার্টির ভুমিকা তেমন কিছু নাই।
সার্বিক বিবেচনাতে গণতান্ত্রিকভাবে একটি নির্বাচন হবার জন্য যে জোয়ার থাকার কথা তা নেই।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ এগিয়ে যাবার পথে সংসদে শক্তিশালী সরকার এবং বিরোধী দল থাকা খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এ দেশের জনগনের কাছে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি ছাড়া আর কেউ মুখ্য নয় বিশেষ করে ভোটের বিষয়ে। বর্তমানে বিএনপি আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আর সে কারণে জনগণ কাছে ভোটের লড়াইয়ের তেমন কোন চিত্র নেই। এমন পরিস্থিতিতে সাধারন মানুষের কাছে নির্বাচন আর সে পুরনো আমেজ নিয়ে উপস্থাপন হচ্ছে না এখন পর্যন্ত। তাদের নেই কোন উচ্ছাস।

আবার অন্য ভাবে দেখা যাচ্ছে বড় দলগুলো ক্ষমতায় সরকার বা বিরোধী দল হিসাবে থাকার ফলে তাদের নিজেদের দলেই একাধিক প্রার্থী হবার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে সব সময়। সেক্ষেত্রে অনেক এলাকাতে দেখা যায় বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করে। এতে করে দলের নিজস্ব ভোট ব্যাংকের হিসাবে গড়মিল হয়ে যায়। যার কারণে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী নির্বাচনে অনেকটা কঠোরভাবে যাচাই বাছাই করছে দলীয়ভাবে।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হবার কথা। হিম হিম শীতের আমেজে নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা জমবে কি? এ প্রশ্নের অন্তরালে রয়েছে বেশ কিছু 'যদি 'কথাটি।

অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে সবার আগে। সাধারণত দেখা যায়, মানুষ ভোট দেবার আগ্রহ পায় না ভোট চুরির কারণে। বিগত সময়ে গণমাধ্যমে একটি অভিযোগ উঠে এসে। তা হল নিজের ভোট নিজে দিতে না পারা। অনেকেই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখছে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে।

আর একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ ও চিন্তনীয়। জনগণকে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের বর্তমান ঠিকানার সে আসনে ভোট দিতে হবে। বর্তমান ঠিকানা নানা কারণে পরির্বতন হতে পারে। এতে করে দেখা যায় অনেকে স্থান পরির্বতনের কারণে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে না। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার তালিকা তৈরীর ক্ষেত্রে এ সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। আবার জাতীয় পরিচয় পত্রের চলমান প্রক্রিয়াতে নতুন ভোটারদের অনেকে এখন পর্যন্ত তাদের কার্ড হাতে পায়নি। এক্ষেত্রে নতুন ভোটারদের অনেকে ভোট না দিবার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্রের এ জটিলতা ভোটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।          
     
কেননা ভোট নাগরিকের যেমন অধিকার তেমন ভোট প্রদান কর্তব্য। কিন্তু জনগণের মাঝে বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা সেভাবে আসেনি এ পর্যন্ত। বরং দলগুলোর ভোট নিয়ে নানা ছল চাতুরিতে ভোট দেবার আগ্রহ কমে যাচ্ছে দিন দিন।

'না' ভোট অপশনটি জনগণের মত প্রকাশের একটি জায়গা ছিল। সে ' না 'তে আর ভোট দেবার সুযোগ নেই বলে আবার অনেকে ভোট নষ্ট করে। যদিও বলা হয় সীল কেউ না কেউ দিয়ে দেয়।  

'আমার ভোট আমি দিবো, যাকে খুশি তাকে দিবো।'- এ শ্লোগানকে সামনে নিয়ে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে। আর এর জন্য জনগণের সম্পৃক্ততাকে বাড়াতে হবে। সব মানুষ সরাসরি দল করে না এটা রাজনৈতিক দলের ভাবনাতে আনা প্রয়োজন। কিন্তু নির্বাচন এলে চায়ের কাপে ঝড় তুলে সাধারণ জনগণ। সুতরাং নির্বাচনের প্রতি জনগণের অনাগ্রহ কোন ভাল খবর নয় দেশ এবং রাজনৈতিক দলের জন্য।

লেখক- কলামিস্ট

বিডি প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন
            

সর্বশেষ খবর