২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০১:৩৯

প্রিয় শেখ হাসিনা

সুলতান মাহমুদ শরীফ

প্রিয় শেখ হাসিনা

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশ সৃষ্টির সীমাহীন রক্তক্ষরণ ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অপরিসীম সাহায্য ও বাংলার ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মদানের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিলো-আমরা একটি স্বাধীন ভূখন্ড পেলাম। হতদরিদ্র গরীব মানুষের সমস্ত সম্পদ ইংরেজ বেনিয়াদেরকে অনুসরণ করে প্রতিনিয়ত লুট করে নিয়ে গিয়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পাকিস্তানী লুটেরারা। 

তাদের সৈন্যবাহিনীকে বেতনভুক্ত মাস্তানে পরিণত করে তাদের সাহায্য নিয়ে হত্যা,ধর্ষন, লুট করে বাংলাদেশকে গরীব হতে গরীবতর জীবনে নিক্ষেপ করেছিল পাকিস্তানী দস্যুরা। 

বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায়, আত্মত্যাগে বলীয়ান হয়ে যখন বাঙালি জাতি তার কঙ্কালসার দেশকে স্বাধীনতার নতুন সূর্যের মুখ দেখালো তারই কিছুদিনের মধ্যে আমাদের সকল স্বপ্নকে ধূলিস্যাত করে দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে তার পরিবার, পরিজন আত্মীয়, স্বজনদের নিষ্ঠুর ও পৈশাচিকভাবে জীবনাবসান ঘটিয়ে বাংলাকে আবারও পরাভূত করা হলো। দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, নির্যাতন অসহনীয় অপমান সহ্য করে বীর বাঙালি একতাবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানী হায়েনাদের, মানবরূপী কুকুরদের পরাভূত করে আরেকবার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দুঃখী মানুষের বাংলাকে তার দেশপ্রেমিক জনগনের কাছে ফেরত নিয়ে আসলো।

বাঙালির এই নব আবির্ভাবের নেতৃত্ব দিতে যখন সকলেই অপারগ, সকলেই দ্বিধাগ্রস্থ, তখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সকল আপনজনকে হারিয়ে এসে দাড়ালেন আমাদের মাঝে অভয় বাণী নিয়ে। তারই প্রচেষ্টায় বাঙালি দেশ উদ্ধারের সংগ্রামে জয়ী হলো। আমাদের অস্তমিত সূর্য সকল অন্ধকারকে বিতাড়িত করে নব উদ্যমে বাংলার আকাশকে উজ্জল করে আভির্ভূত হলো। 
একজন নিপুন কারিগরের মতো শেখ হাসিনা সাজাতে শুরু করলেন তার প্রিয় বাংলাদেশকে। তারই পিতার স্বপ্নের সূখী সমৃদ্ধ একটি নুতন দেশ গড়তে। 

এক দফায় পাঁচ বছরের শাসনকালে তিনি শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা করলেন, সমস্ত হত্যাকারীদের, যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিদিন হত্যার হলিখেলায়। গোলাম আজম, সালাউদ্দিন কাদের, নিজামী, সাঈদী কাদের মোল্লাসহ হত্যাকারীদের পালের গোদাদের শাস্তি বিধান করে তিনি প্রমাণ করেছিলেন জাতীয় বেঈমানদের শাস্তি নিয়তির নিয়মে হবেই। একইভাবে বঙ্গবন্ধু, তার প্রিয় সহচর চার জাতীয় নেতা তার পরিবার- পরিজন ও আততায়ীদের হত্যাকারীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে তিনি তাদের প্রত্যাশিত শাস্তির বিধান করলেন দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে।

দ্বিতীয়বার জনগণের ম্যান্ডট নিয়ে ২০০৯ সালে আবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেল আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান শেখ হাসিনা। এবার তিনি বাংলার জনগনকে শান্তি ও স্বস্তির জন্য প্রস্তুত করতে নিরলস সংগ্রামে নিয়োজিত হলেন। গ্রাম বাংলার মানুষের ঘরে দু, মুঠো অন্ন, সুপেয় পানি চিকিতসার ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় সফল পদক্ষেপ নিলেন। বাংলাদেশ হল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিষাক্ত পানির হাত থেকে মুক্ত হল সকল পানির ফোয়ারা। প্রতি ঘরে অসুস্থ মাতা, অসুস্থ শিশু রোগে যথন কাতরাবে তখনই যেনো একজন ডাক্তারের পরামর্শে তার জন্য উপসমের ব্যবস্থা হয় তার লক্ষে বিনাদ্বিধায় বিনা খরচে ডাক্তারের পরামর্শ ও ২৪ ধরনের ওষুধ বিনা খরচে সরকারী অনুদান হিসাবে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। 

বাংলাদেশ এখন পোষাক প্রস্তুত ও রপ্তানীতে পৃথিবীর দিতীয় স্থানে ফলে বস্ত্রের অভাবে আজ আর কোন বাঙালিকে লজ্জা নিবারনের অসুবিধায় পড়তে হয়না। ছেড়া কাপড়, ছেড়া কাঁথা বৃটিশ ও পাকিস্তানী আমলে প্রত্যেকটি গৃহস্থালীর লজ্জা নিবারনের সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিলো, যা আজ সম্পূর্ণরুপে বিলীন হয়ে গেছে। 

আমাদের দেশের ৮০ ভাগের বেশী মানুষের মাথা গোঁজার জায়গা ছিলো না পরাধীনকালে বিদেশী শাসকদের ক্রমাগত লুটের ফলে। কিন্তু আজ আশ্রায়নের মাধ্যমে যাদের মাথা গোজার কোন স্থান তারা নিজেরা ব্যবস্থা করতে পারেননা, তাদের জন্য সরকার উদ্যোগী হয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে মাথা গোজার জায়গাটি নিশ্চিত করে দিয়েছে। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও মাছে ভাতে বাঙালির মাছের উতপাদন ছিল অপ্রতুল বিদেশী শাসকদের কালে। আজ আমরা শুধু নিজেদের জন্যই মাছ চাষ করিনা, আমাদের মাছের চাষ এত বেশী যে আমরা পৃথিবীর তৃতীয় মাছ রপ্তানীকারক দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছি। ফলে খাদ্যে প্রোটিনের যে অভাব অতীতে আমাদের ছিল পুরোপুরিভাবে পূরণ হয়ে গেছে।

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ পাট আজ বিশ্ববাজার দখল করে নিয়েছে। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বেশী পাট উতপাদনকারী দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও পাটের উতপাদন বাড়িয়েও পাটের চাহিদা পূরণ করে কুলাতে পারছিনা ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আরো বহুগুনে বেড়ে গেছে। 
যেখানে অতীতে আমাদের বাজেট পূরণ করতে প্রতিবছর বিদেশ থেকে ভিক্ষা নিয়ে চলতে হতো, আজ আমরা পদ্মা সেতুর মত একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি নিজেদের অর্থায়নে এবং আমাদের বিশাল বাতসরিক বাজেট পূরণ করছি নিজেদের অর্থে। 

এই দশ বছর ধরে যে দক্ষ যজ্ঞ করে এতোসব অভাবনীয় উন্নতি এসেছে তা দেখে বাংলাদেশকে নিয়ে সমস্ত বিশ্ব আজ গর্ব করে। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল যুগে প্রথম কাতারে থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছে। নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করে সকলের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। নারী ও শিশু শিক্ষার উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে শান্তি বৃক্ষ উপাধিতে ভূষিত হয়েছে। খাদ্য উতপাদনে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য প্রশংসিত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও ক্ষুধা দারিদ্র বিমোচনে সাউথ সাউথ এওয়ার্ড অর্জন করেছেনদেশের পক্ষ হয়ে প্রধানমন্ত্রী।
 
দারিদ্রতা অপুষ্টি দূরীকরনের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য  F.A.O বিশেষভাবে পুরস্কৃত করেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যুগান্তকারী উতকর্ষের স্বীকৃতিস্বরূপ কালচারাল ডাইভারসিটি এওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে বাংলাদেশকে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব সুশাসন, মানবাধিকার রক্ষা ও আঞ্চলিক শান্তি জলবায়ু পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশ পেয়েছে গ্লোবাল ডাইভারসিটি এওয়ার্ড।

আজকের বিশ্বে জলবায়ু সংক্রান্ত যখন যে দেশেই যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয় সেখানে প্রধান আলোচকের ভূমিকায় থাকে একটি নাম, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কারন যে জলবায়ু ম্যানেজম্যান্টে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এসবই নিষ্ঠা, সততার সাথে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বাংলাদেশের আজকের প্রধানমন্ত্রী, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলা রুপান্তরের কারিগর জননেত্রী শেখ হাসিনা উপহার দিয়েছেন বাংলার মানুষকে। কৃতজ্ঞ বাঙালির স্বপ্ন, আশা, তাদের সন্তান সন্ততির জন্য শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির এই ধারা রক্ষা করে বাঙালি জাতি অনাগত দিনে শান্তি সৌহার্দ ভালোবাসাও মানবপ্রেমের দীক্ষায় দীক্ষীত হয়ে শেখ হাসিনার পথ অনুসরণ করে বিশ্বের বিস্ময় হয়ে থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে হাজারো সালাম। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সবান্তকরনে প্রার্থনা তিনি যেনো জননেত্রীকে শতায়ু দান করেন।
 


লেখক : সভাপতি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ

 
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর

সর্বশেষ খবর