আগামী প্রজন্মের দাম্পত্য জীবনে পুত্র-কন্যা আর বন্যার মতো আসবে না। একটিমাত্র সন্তানই আকাঙ্ক্ষিত, তা পুত্র-কন্যা যাই হোক। কিন্তু সেই একটিমাত্র সন্তানের প্রতীক্ষায় তো সারা যৌবন কেটে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মে ছেলের চেয়ে মেয়ের আকাঙ্ক্ষাই বেশি হবে। কারণ সমীক্ষায় দেখা গেছে মেয়েকে ছোটবেলায় ভালো করে সাজানো যায়। শিশুদের যত সাজগোজ তা বেশিরভাগই কন্যা সন্তানকে লক্ষ্য করে। মেয়েরা এখন ছেলেদের চেয়েও পড়াশোনায় ভালো হয়। তারা যে কোনো নৈপুণ্য, যে কোনো বিদ্যা অর্জন করতে পারে। আগামী প্রজন্মে মেয়েরা আরও বেশি করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়তে এগিয়ে আসবে। আরও বেশি করে বিদেশে পড়তে যাবে এবং বেশি করে যেখানে যে দেশে চাকরি করবে, সে দেশে সেটেল করবে।
প্রায় সকলের এখন এক সন্তান। বৃদ্ধ বাবা-মা ছেলের চেয়ে মেয়ের কাছ থেকে বেশি নিরাপত্তা অনুভব করেন। আগামী প্রজন্মের ছেলেরা যত বড় হবে তত বেশি করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের আইডেন্টিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। তারা আর তাদের পরিবারের মধ্যে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ঢোকাতে চাইবে না। ইউরোপ-আমেরিকায় বহু ছেলে-মেয়ে তাদের বাবা-মায়ের ঠিকানা জানে না। দরকারও মনে করে না। তারা বাবা-মার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকাটাকেই 'অটোনমি' বলে মনে করবে। কিন্তু বিবাহিত মেয়েরা যত বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে আসবে, তত তাদের 'আত্মবিশ্বাস' বাড়বে। তাদের নিরাপত্তাবোধ তত দৃঢ় হবে। আবার আগামী প্রজন্মে যে কোনো কারণে হোক সিঙ্গেল পুরুষ এবং সিঙ্গেল নারীদের সংখ্যা বাড়বে। আবার বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে বেশি বয়সে নিরাপত্তাহীনতা বাড়বে। কারণ আগামী প্রজন্মে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা কয়েক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
এখন বাংলাদেশে যেভাবে রাতারাতি বহু বৃদ্ধাশ্রম গজিয়ে উঠছে, আগামী দিনে খবরের কাগজের পাতার পর পাতা জুড়ে নানা ধরনের বৃদ্ধাশ্রমের বিজ্ঞাপন বের হবে। আগামী দিনে হোটেল শিল্পের সমান্তরাল হয়ে উঠবে ওল্ড এজ হোম শিল্প। তার নাম আর তখন বৃদ্ধাশ্রম হবে না। হবে হ্যাপি হোম রিট্রিট কিংবা 'বেলা শেষে' এই ধরনের কিছু। বহু তরুণ-তরুণীর জীবন আগামী দিনে হয়ে উঠবে ফলহীন দেবদারু গাছের মতো। দীর্ঘ, সুদৃশ্য, মনোহর কিংবা ফলহীন। বাইরে থেকে বোঝা যাবে না
লেখক : বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী।
বিডি-প্রতিদিন/শআ