১১ কোটির বেশি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশে কর্মরত দেড় কোটির বেশি প্রবাসী, যাদের রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ ও সামাজিক-পারিবারিক অবদান আমাদের দেশটাকে আর্থ-সামাজিকভাবে সবল করে রেখেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রেস ব্রিফিং ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত তথ্য অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে উন্মুক্ত হয়ে গেছে কতিপয় অসাধু প্রভাবশালী মানুষের ব্যক্তিগত অর্থ লালসার কারণে। এ ঘটনা জাতিকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে কর্মরত ও বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিক যাদের এনআইডি কার্ড রয়েছে তারা ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। অনেকের এনআইডি কার্ডে ছোটখাটো বানান বিভ্রাট ও তথ্যের ভ্রান্তি থাকার অবকাশ আছে। এ কারণে প্রবাসীদের পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থান সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্রবাসীদের তথ্যভান্ডারের সম্ভাব্য অসংগতির প্রধান কারণ হচ্ছে এ বিষয়ে আমরা “প্রথম জেনারেশন” সম্যকভাবে অবহিত ছিলাম না, সুতরাং ভ্রান্তিগুলো নির্মূল করে আদর্শ অবস্থানে আসতে আমরা এখনও সক্ষম হইনি। দ্বিতীয়ত, অনেকদিন আগে থেকে যারা বিদেশে থাকেন তাদের বিদেশের তথ্যাবলি ও দেশের তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্যের সমন্বয়ে কিছু ঘাটতি আছে। এমতাবস্থায় দেশে থাকা তথ্যভান্ডারের তথ্য বিদেশি নিয়োগকর্তা ও কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
দেশের অপরাপর জনগোষ্ঠীর তথ্যও অন্যদের কাছে থাকা নিরাপদ নয়। এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্ব সম্প্রদায় যখন নিজেদের নাগরিকদের তথ্যভান্ডার সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখার জন্য নানা কর্মকৌশল গ্রহণ করছে, প্রতিনিয়ত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং নিরাপত্তাবেষ্টনী নিশ্চিত করার জন্য নিয়ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমাদের দেশের কতিপয় লোক নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশ জাতির নিরাপত্তা বিক্রি করে দিচ্ছে এবং এ কাজে রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল সহায়তা পাচ্ছে। কি বিভৎস ও ভয়ংকর এই ঘটনা!
বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক নানা উপলক্ষে বাংলাদেশের বহু নাগরিকের বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ আছে বহির্বিশ্বের সাথে। এই তথ্যপাচার এসব মানুষকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে। আর্থিক ও বৈষয়িক নানা ক্ষেত্রে এই তথ্য সংশ্লিষ্ট থাকায় মানুষ বিপদে থাকবেন।
এমনিতেই আমাদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার নষ্ট করার জন্য প্রতিযোগী কতিপয় দেশ আমাদের নামে দেশে-বিদেশে নানা অপপ্রচার চালায়। আমরাও নানা রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য নিজ দেশকে জঙ্গিবাদের ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানের কথা বলে বেড়িয়েছি নিজেদের দলীয় রাজনীতির সুবিধা আদায়ের জন্য। এসবই আমাদেরকে জাতি হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে রেখেছে।
উপরন্তু কতিপয় মানুষের অতি লোভ ও অসাধুতায় গোটা জাতির নিরাপত্তা আজ ঝুঁকিপূর্ণ, এ অবস্থায় দেশে ও বিদেশে অবস্থানকারী সকল নাগরিকের ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে খাত-সংশ্লিষ্টদের সাথে পরামর্শ করে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ব্যাপারে সরকারকে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। এ ক্ষেত্রে যেকোনো বিলম্ব নানা বিপদ ডেকে আনতে পারে।