শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫ ০০:০০ টা
শুক্রবারের বিশেষ প্রতিবেদন

গারো পাহাড়ে চীনা মাটির খনি

গারো পাহাড়ে চীনা মাটির খনি

নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের সাদা মাটি (চীনা মাটি) খনি হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা। প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে খনির সাদা মাটি দিয়েই তৈরি হচ্ছে টাইলস ও বৈদ্যুতিক লাইনের ইনসুলেটরসহ সিরামিকের নানা নান্দনিক তৈজসপত্র। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী এ খনিতে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন চীনা মাটির মজুদ রয়েছে, যা বাংলাদেশের ৩০০ বছরের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। সবচেয়ে বড় চীনা মাটির পাহাড় রয়েছে দুর্গাপুরের পাঁচকাহনিয়ায় (বিজয়পুর)। মনসাপাড়া, গাইমারা, গোপালপুর, ভরতপুর ও ধোবাউড়ার কয়েকটি গ্রামেও চীনা মাটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। বাসনপত্র, বৈদ্যুতিক ইনসুলেটর, স্যানিটারি সরঞ্জাম, কাগজ, কৃত্রিম বস্ত্র ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্পে চীনা মাটির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘর নির্মাণে শৈল্পিক ও নান্দনিকতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে চীনা মাটির তৈরি কারুকাজসংবলিত টাইলস। বাংলাদেশে ১৯৮৪ সালে চীনা মাটি তৈরির টাইলস কারখানাও গড়ে ওঠে। দেশি-বিদেশি বহু কারখানা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন টাইলস, তৈজসপত্র, টয়লেট ফিটিংসসহ বিভিন্ন জিনিস উৎপাদন করে কোটি কোটি টাকার রপ্তানি আয় বাড়াচ্ছে। আমাদের সিরামিক পণ্যের বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, কানাডা, সুইডেন, আর্জেন্টিনা ও ভারতেও বিস্তৃত। দুর্গাপুর ও ধোবাউড়া ছাড়াও রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর, হবিগঞ্জ ও কক্সবাজারের কোনো কোনো স্থানে এই শ্বেতমৃত্তিকা পাওয়া যায়। গারো পাহাড়ের পাদদেশে নেত্রকোনার সোমেশ্বরীতে অফুরন্ত খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার সাদা মাটির পাহাড়। মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে সুসং দুর্গাপুরে প্রাকৃতিক সম্পদ সাদা মাটির পাহাড়টি শুরু হয়েছে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের রানীখং এলাকা থেকেই। এটি দুর্গাপুরের ১০-১২ কিলোমিটার ও ধোবাউড়ার প্রায় ৮ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে। কুল্লাগড়ায় আটটি গ্রামে চীনা মাটির পাহাড় আবিষ্কৃত হয় ১৯৫৩ সালে।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে প্রথম কোহিনুর অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ‘সাদা মাটি’ উত্তোলনের কাজ শুরু করে। ১৯৭৩-এর মাঝামাঝিতে জারিয়া সাদা মাটি প্রকল্পে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন বিজয়পুরে সাদা মাটি উত্তোলনের দায়িত্ব পায়। এ প্রকল্পের জন্য প্রায় ১ হাজার ৬০৩ একর জমি মাইনিং লিজ দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদিত সাইনবোর্ড দিয়ে ১০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান সাদা মাটি উত্তোলন করছে। এই চীনা মাটির তৈরি সিরামিক দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ঢাকা, গাজীপুরসহ প্রায় সব কটি সিরামিক কোম্পানি বিজয়পুর, বিপিনগঞ্জ বাজার খনি থেকে কেটে নিচ্ছে সাদা মাটি। বিজয়পুরের এ সাদা মাটি উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। দেখা গেছে, উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ফারংপাড়া, থাউশালপাড়া, বরইকান্দি, গোপালপুর, মাইজপাড়া, বহেরাতলী, পাঁচকাহনিয়া, মাধুপাড়া, ভেদিকুড়া ও উত্তর মাইজপাড়ার বিভিন্ন টিলা থেকে মাটি সংগ্রহ করছে দেশি-বিদেশি সিরামিক কোম্পানিগুলো। তবে মূল্যবান এ খনিজ সম্পদ লিজ প্রদান, উত্তোলন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। লিজ গ্রহণকারী কিছু প্রতিষ্ঠান যথেচ্ছা মাটি উত্তোলন করায় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে।

সর্বশেষ খবর