শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

মাছ চাষে লাখপতি বেলাল

মাছ চাষে লাখপতি বেলাল

দুই বেলা ভাত জুটতো না। জীবন বাঁচাতে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে অনেক। করতে হয়েছে দিনমজুরের কাজ। শেষ পর্যন্ত তার ভাগ্য ফিরেছে। আর এ ভাগ্যের সহায় হয়েছে মাছ চাষ। শূন্য অবস্থা থেকে লাখপতি।
নাম বেলাল সরদার। আদমদীঘি উপজেলার কাশিমালা গ্রামের মৃত শখের আলী সরদারের ছেলে। মেধা, মনন আর কঠোর পরিশ্রমে মাছ চাষ করে নিজের ভাগ্যকে সাজিয়েছেন তিনি। বেলাল জানান, স্বাধীনতার আগে প্রথম আদমদীঘিতে মাঝিপাড়া গ্রামের মনমত চন্দ্র সরকার নিজে শ্রমিক হয়ে যমুনা নদী থেকে রেণু ও পোনা এনে ব্যবসা শুরু করেন। সে সময় মাত্র কয়েকশ টাকা মূলধন ছিল। ১৯৮৫ সালে ব্যবসায়ী মনমত চন্দ্র সরকার প্রথম আদমদীঘিতে কৃত্রিম পদ্ধতিতে রেণু উৎপাদন করার লক্ষ্যে হ্যাচারি নির্মাণ করেন। শুরু হয় মৎস্য উৎপাদনের কাজ। এ হ্যাচারি দিনেদিনে পাল্টে দিয়েছে উপজেলার অর্থনৈতিক চিত্র। সেই মনমত চন্দ্র সরকারের সহযোগিতায় বেলাল হোসেন সরদারও হ্যাচারি গড়ে তোলেন। হ্যাচারিতে মাছের রেণু তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষির মধ্যে বিক্রি শুরু করেন। তার হ্যাচারির রেণু বড় এবং ওজন বেশি বলে মাছ চাষিদের মধ্যে কদর বেড়ে যায়।
১৯৯৫ সালের পর রেণু উৎপাদন ও মাছ বিক্রিতে অভাবনীয় সাফল্য পান। আদমদিঘি উপজেলা থেকে আশপাশের জেলায় তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। সিলেট, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, রংপুর, মিঠাপুকুর, নীলফামারী এলাকার মাছ চাষিরা তার কাছ থেকে রেণু সংগ্রহ করতে থাকে। দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে পুকুরের সংখ্যাও। মাছ চাষ ও বিক্রি করে এখন তিনি একদিকে নিজের সংসার সাজিয়েছেন, অপরদিকে গড়েছেন শতাধিক পুকুর। মেধা আর মননে গড়ে তোলা মাছের হ্যাচারি ও মাছ চাষের পুকুরে এখন প্রায় এক হাজার শ্রমিক দিনরাত কাজ করছেন। গত বছর তিনি দেশের মধ্যে ব্যবসায়ী হিসেবে সবচেয়ে বেশি পাঙ্গাশ মাছ উৎপাদন করে সাফল্য অর্জন করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক-২০১৪ লাভ করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে সফল মাছ চাষী হিসেবে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। বর্তমানে বেলাল সরদারের একশরও বেশি পুকুর নিয়ে ৪টি মৎস্য প্রজেক্ট রয়েছে। প্রতিটি পুকুর পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। মাছ চাষের পাশাপাশি ফলের চাষও খুব ভালো হচ্ছে। পুকুরগুলোতে দেশি রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাশ, কই, শিং, কানচ, মাগুর ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। মাছের খাদ্য তৈরির জন্য বেলাল নিজেই একটি ফিস মিল তৈরি করেছেন। বেলাল সরদার জানান, ‘আমার মাছ চাষের প্রজেক্ট পরিদর্শন করে অনেকেই আমার পথ অবলম্বন করছেন। বেকার যুব সমাজের মধ্যে মাছ চাষের স্বপ্ন জন্ম দিতে পারলে এদেশে অর্থনৈতিক দুরাবস্থা থাকবে না বলে মনে করি।’

সর্বশেষ খবর