শিরোনাম
শুক্রবার, ২২ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগিং

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগিং

রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় এ বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির ব্যবহার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত বছর ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় এবার তা আম চাষীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। জেলার আমচাষীদের মাঝে সরবারহের জন্য এরই মধ্যে চীন থেকে বিশেষ ধরনের এই ব্যাগ আমদানী করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আম গবেষকরা বলছেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আম উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হবে সেই সঙ্গে বিদেশের বাজারেও সুমিষ্ট আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানির দ্বার উম্মোচিত হবে।

জেলায় ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। কিন্তু আমে মাছি, পোকা বা ফ্রুট ফ্লাইয়ের আক্রমণ রোধে বর্তমানে কীটনাশক ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। অধিক ফলন পেতে ভালো-মন্দ বিচার না করেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে আমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। এই অবস্থায় মাছি পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন পোকা ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় গত বছর নতুন এক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. সরফ উদ্দিন। বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হওয়া ফ্রুট ব্যাগ পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশে তার সম্ভাবনা যাচাই করেন তিনি। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ১৮টি জাতের আম গাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সাফল্য পান। ড. সরফ উদ্দীন জানান, ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিটি বাংলাদেশে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি। 

ফ্রুট ব্যাগিং বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায় এবং এরপর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে। তবে আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রঙিন আমের জন্য সাদা রঙ এর এবং অন্য সব জাতের আমের জন্য বাদামী রংয়ের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। তিনি আরো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাগিং করা আম দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে আম সংরক্ষণ করতে ফরমালিন নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও ফলকে বাইরের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা গেলে কোনো স্প্রে ছাড়াই ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে ফল বিজ্ঞানী ড. সরফ জানান, আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময় ৩৫-৪০ দিন বয়সী আমে। তবে এর পরেও ব্যাগিং করা যায়। ব্যাগিং করার আগে আম গাছে ২/৩ বার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পরে। ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না। এছাড়া ব্যাগিং করার আগেই মরা মুকুল বা পুষ্পমঞ্জুরির অংশবিশেষ, পত্র, উপপত্র ছিড়ে ফেলতে হবে এবং আমটি ব্যাগের মাঝ বরাবর থাকবে। ব্যাগের উপরের প্রান্তটি ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যেন পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে।

তিনি বলেন, গত বছর পরীক্ষামুলকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলতা পাওয়ায় এবার তা আমচাষীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের এই ব্যাগটি চীন থেকে সরাসরি আমদানি করে কৃষকদের মাঝে সরবারহ করছেন।  প্রতিটি ব্যাগ ৩/৪টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ব্যাগিং করা আমে কোন ধরনের দাগ থাকবে না। এছাড়া সব ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করা যাবে। এছাড়া যে কোনো জাতের আমকে রঙিন করা সম্ভব হওয়ায় বিদেশে রফতানি উপযোগী আম উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে এ আম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কারণ ইউরোপে এ ধরনের আমের চাহিদা রয়েছে।

বিডি-প্রতিদিন/২২ মে ২০১৫/শরীফ
 

সর্বশেষ খবর