বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ের টমেটো এখন সারাদেশে

পঞ্চগড়ের টমেটো এখন সারাদেশে

পঞ্চগড়ে এবার টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। আশেপাশের জেলা পেরিয়ে এখন হাইব্রিড জাতের এই টমেটো রপ্তানী হচ্ছে সারা দেশে। সর্ব উত্তরের এই জেলার  টমেটো চাষী এবং শ্রমিকদের ঘরে তাই আত্মতৃপ্তির আনন্দ। স্থানীয়ভাবে টমেটোর নাম হয়ে গেছে হাইব্রিড। এখন কৃষকরা টমেটোকে হাইব্রিড বলেই চেনে। শুরুর দিকে ভাইরাসের কারণে মহামারী আকারে টমেটো গাছ মরে গেলেও কৃষকদের আপ্রাণ চেষ্টায় মহামারি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। তাই শেষে এসে বাজারে ভাল দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের টমেটো ব্যাবসায়ীরা এখন পঞ্চগড়ে অবস্থান করছেন। স্থানীয় কৃষক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তারা টমেটো কিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা  অনেক কৃষককে টমেটো লাগানোর সময় অগ্রীম টাকাও দিয়ে রেখেছেন । কেউ কেউ প্রথম গাছে ধরার সময়ে দাদন দিয়েছেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাইব্রিড টমেটো ইউনিয়ন খ্যাত হাড়িভাসা ও হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ৫ শতাধিক টমেটোর আড়তে শ্রমিকদের এখন দম ফেলানোর সময় নেই। জেলার বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষক বা ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে কাচা টমেটো কিনে রাখছেন আড়তে। কয়েকদিন রাখার পর টমেটো পেকে গেলে সেগুলো প্লাস্টিকের তৈরি বিশেষ ক্যারেটে ভরে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই দু’টি ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক টমেটো নিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।  বর্তমানে প্রতিমণ টমেটো বিক্রয় হয় ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা দরে। অনেকে ব্যবসায়ীদের কাছে এসব টমেটো বিক্রয় করে দিলেও অনেকে আবার নিজেই তাদের উৎপাদিত টমেটো বিক্রির জন্য বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন।

ওই ইউনিয়নের বংশীঝাড় গ্রামের রুবেল হক জানান, আমরা কয়েকজন বড় কৃষক মিলে ঠেকরপাড়া হাটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে আড়ৎ করেছি। জমি থেকে টমেটো তুলে এনে আড়তে রাখছি। কয়েকদিন রাখার পর পেকে গেলে ক্যারেটে ভরে ট্রাক ভাড়া করে বাইরে পাঠাচ্ছি। এতে করে আমরা বেশী লাভবান হচ্ছি। তারা বলেন, প্রতি ক্যারেটে ২২-২৪ কেজি টমেটো ধরে। রাজধানী ঢাকা ও কুমিল­ার নিমসা বাজারে প্রতি ক্যারেট টমেটো বিক্রয় হয় ৫শ' থেকে সাড়ে ৫শ' টাকায়। ট্রাক ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বাদে প্রতি ক্যারেট থেকে ৪শ' থেকে সাড়ে ৪শ' টাকা পাচ্ছি। এতে করে আমাদের প্রতিমণ টমেটোর দাম পড়ে ৮শ' থেকে ৯শ' টাকা। আমরা এই টমেটো স্থানীয়ভাবে বিক্রয় করলে প্রতিমণ ৫শ' টাকার ওপর পেতাম না।

জেলার সদর উপজেলা শিংপাড়া গ্রামের কৃষক রিপন। এবার তিনি ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের টমেটো আবাদ করেছিলেন। ইতোমধ্যে তার জমির সব টমেটো বিক্রয় শেষ হয়েছে। এবার তিনি ৬ লাখ টাকার টমেটো বিক্রয় করেছে বলে জানালেন। এখন তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে কাঁচা টমেটো কিনে বিক্রয় করছেন বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। এতে করে তিনি আরও লাখ দুয়েক টাকা আয় করবেন বলে জানালেন। তিনি জানান, আমি প্রতিমণ টমেটো সাইজ ভেদে সাড়ে ৩শ' টাকা থেকে সাড়ে ৪শ' টাকা পর্যন্ত কিনেছি। প্রতিমণ টমেটো ২০-৩০ টাকা লাভ করে বিক্রয় করছি আড়তে।

গতকাল সকালে পঞ্চগড় জেলা শহরের জালাশী এলাকার একটি আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে টমেটো বাছাই ও প্যাকেট করার কাজ করছে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক। সেখানে কর্মরত বলেয়াপাড়া গ্রামের শ্রমিক আনারুল, লাবলু, নুরুল হক জানান, আমরা এখানে একমাস ধরে কাজ করছি। প্রতিদিনের জন্য মজুরি পাই ২শ' ৫০ টাকা। এখানে আরো দুই মাস কাজ চলবে।

আড়ৎ দেখাশোনা দায়িত্বে আছেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার আব্দুল করিম। তিনি জানান, এখানে আমাদের দিনে-রাতে কাজ করতে হচ্ছে। পাকা টমেটো বাছাই করে তা ক্যারেটে ভরে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। এরপর ট্রাক এলে ক্যারেটগুলো ভরা হচ্ছে।

ওই আড়তের মালিক রাজবাড়ী জেলার সফিউদ্দিন সফি। তিনি জানালেন, এ সময়টাতে দেশের অন্য কোথাও টমেটো উৎপাদিত হয় না। তাই এখানকার উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা দেশব্যাপী। আমরা কৃষক এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাচা টমেটো কিনে পাকিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রয় করছি। পঞ্চগড় শহরে আমার দু’টি আড়ৎ আছে। দুইটি আড়তে ১শ' ২০ জন শ্রমিক কাজ করে।

এ ব্যাপারে কথা বললে পঞ্চগড়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স ম আশরাফ আলী জানান, হাইব্রিড জাতের টমেটো পঞ্চগড়ের একটি অর্থকরী ফসল। এ সময়টাতে অন্যান্য আবাদের চেয়ে টমেটো আবাদ করে কৃষকরা বেশী লাভবান হচ্ছে। তিনি বলেন, শুরুতে ভাইরাসের কারণে অনেক টমেটো গাছ মরে গিয়েছিল। আমাদের কৃষি বিভাগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ দেয়ায় শেষ পর্যন্ত আবাদ ভাল হয়েছে। হাইব্রিড জাতের টমেটোকে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।
 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ মে, ২০১৫/ রশিদা

সর্বশেষ খবর