রবিবার, ২৮ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা
উদ্ভাবন

সাড়া জাগালো রুটি মেকার

সাড়া জাগালো রুটি মেকার

মাগুরার হুমায়ুন কবির নিজের মেধায় আবিষ্কার করেছেন একটি যন্ত্র। আর এ যন্ত্র তার জীবন থেকে ঘুচিয়ে দিয়েছে বেকারত্বের অভিশাপ। শুধু তা-ই নয়, অন্যের জন্যও তৈরি করতে পেরেছেন কর্মসংস্থান। হুমায়ুন কবিরের সাড়া জাগানো এই আবিষ্কারের নাম ‘রুটি মেকার’। কাঠের তৈরি এ যন্ত্র দিয়ে আধা ঘণ্টায় তৈরি করা যায় হাজারখানেক রুটি। এতে অপচয় হয় না বিদ্যুৎ এবং সময়ের।

হুমায়ুনের ভাষ্য অনুযায়ী, ছোটবেলায় মায়ের অসুস্থতার সময় তিনি রুটি বানাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তখন থেকেই এর একটা সমাধান খুঁজছিলেন। এরপর ২০১১ সালের কথা। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় একদিন সকালে রুটি বানাতে গিয়ে আবারও বিপাকে পড়েন হুমায়ুন। পরে বাজার থেকে প্রচলিত একটি রুটি মেকার সংগ্রহ করেন। নির্দেশিকা পড়ে রুটি বানাতে সক্ষম হলেও সন্তুষ্ট হতে পারেন না। কারণ এটি একদিকে যেমন বিদ্যুৎনির্ভর, অন্যদিকে ব্যবহারও বেশ জটিল। এ ছাড়া এটিতে কেবল কাঁচা আটার রুটিই হয়। সেদ্ধ আটার রুটি বা লুচি এতে বানানো যায় না। তখন তিনি শুরু করলেন গবেষণা।

হুমায়ুন চাইছিলেন এমন একটি রুটি মেকার, যাতে সব ধরনের রুটি বানানো যায় এবং কাজ সহজ হয়, সময় কম লাগে। প্রথমে তিনি কয়েকজন কাঠমিস্ত্রির সহযোগিতা নিলেন। হুমায়ুনের দেখানো ডিজাইনে তারা মোটামুটি একটি রুটি মেকার বানিয়ে দিলেন। তাতে রুটি হলো ঠিকই, কিন্তু পুরোপুরি গোলাকার রুটি হলো না। সময়ও লাগল বেশি। আবার গবেষণা। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে রুটি মেকারে সংযোজন করলেন পিচ্ছিল এক ধরনের পলি পেপার, যেটি  দেখতে অনেকটা পলিথিনের মতো। এ পেপার সংযোজনের পর অবস্থা গেল পাল্টে।

হুমায়ুন ঠিক যেভাবে চাইলেন, সেভাবেই তৈরি হলো রুটি। সব ধরনের আটা দিয়েই তৈরি হলো সেরা রুটি। এভাবে তিন বছরের গবেষণা সফল হলে হুমায়ুন কবীর এটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে উদ্যোগী হলেন। গ্রামের বাড়ি মাগুরার বুনাগাতিতে চালু করলেন রুটি মেকারের কারখানা। হুমায়ুনের কারখানায় এখন কাজ করছেন ১৭ জন কর্মচারী। ‘লাবিবাহ’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে এখন সারা দেশে এ পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।

বিপণনের জন্য রাজধানী ঢাকায়ও খোলা হয়েছে একটি কার্যালয়। এদেশের সীমানা ছাড়িয়ে এ রুটি মেকার যাচ্ছে ইংল্যান্ড, দুবাই, ভিয়েতনাম, কানাডাসহ বেশ কিছু দেশে। হুমায়ুন জানান, প্রথমদিকে দেশ-বিদেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পেলেও নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা না থাকায় চাহিদা মতো তিনি পণ্য জোগান দিতে পারেননি। ছোট্ট পরিসরের ব্যবস্থাপনা হওয়ায় পণ্য পাঠানোর খরচও ছিল চড়া! আর এখন রুটি মেকারের উন্নত মান এবং উৎপাদন ক্ষমতা কিছুটা বাড়ালেও অন্যান্য সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সহায়তা, পাইকারি ক্রেতাদের আগাম অর্থায়ন কিংবা খুচরা ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আরও বড় পরিসরে এগিয়ে যেতে চান হুমায়ুন। এ রুটি মেকার সর্ম্পকে আরও জানতে ফোন করতে পারেন  ০১৭৪০৮৬১৯১১ । সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে যন্ত্রটির দাম আরও কমিয়ে আনার মাধ্যমে (বর্তমান দাম ৩ হাজার ৮০০) তিনি সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান এ রুটি মেকার।

 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ জুন, ২০১৫/ রশিদা

সর্বশেষ খবর