অপূর্ব জলাবনের একটি হলো সিলেটের ‘রাতার গুল’, অন্যটি হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের ‘লক্ষ্মী বাঁওড়’। রাতার গুলের নাম দেশি-বিদেশি পর্যটকরা শুনে এলেও লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবনের নাম অনেকের কাছেই একেবারে নতুন। কারণ এটি সরকার নিয়ন্ত্রিত নয়। এর নিয়ন্ত্রণ গ্রাম্য পঞ্চায়েতের হাতে।
বছরখানেক আগে সরকারের উচ্চপদস্থ একদল কর্মকর্তা সপরিবারে বানিয়াচং ভ্রমণে এসে লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন দেখে এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ দেন। এটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পৃথিবীর একটি অন্যতম আকর্ষণীয় সোয়াম ফরেস্ট হয়ে উঠতে পারে বলে তারা অভিমত দিয়ে যান। ওই সময় থেকে প্রিন্ট মিডিয়ায় লেখালেখি ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সচিত্র খবর প্রচারিত হতে থাকলে ক্রমে এর নাম পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেতে থাকে। ফলে প্রায়ই লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন দেখতে পর্যটকরা আসছেন। বিভিন্ন ধরনের গাছ-গাছালি, ফুল-ফল, পশু-পাখি, সাপ-বিচ্ছু দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে ভ্রমণ কাহিনীও লিখছেন। এভাবেই দিন দিন পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন। বানিয়াচং উপজেলার গন্ধবপুর, লক্ষ্মী বাঁওড় ও খাকদার মৌজার প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবন। স্থানীয় লোকজনের কাছে যা ‘খরতির জঙ্গল’ হিসেবে পরিচিত।
এ জলাবনের অধিকাংশ জায়গা সরকারি হলেও অল্প পরিমাণ জমির মালিকানার সুবাদে স্থানীয় ‘সইদ্যাটুলা সাত মহল্লা ছান্দ’ নামক গ্রাম্য পঞ্চায়েতের দখলে রয়েছে সমগ্র জলাবনটি। এখানকার শুকনো কাঠ ও জলের মাছ বিক্রি করে গ্রাম্য পঞ্চায়েতের প্রতি বছর দেড়-দুই কোটি টাকা আয় হয়। সরদার বা গ্রাম্য মাতব্বরদের তত্ত্বাবধানে ব্যাংকে আয়ের অর্থ জমা রাখা হয় এবং সময়ে সময়ে এলাকাবাসীর মধ্যে বণ্টন করা হয়। এ ছাড়া আয়ের অর্থ দিয়ে পঞ্চায়েতী মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ এবং সরদারদের সম্মানী দেওয়া হয়।
সম্প্রতি এ জলাবনের অর্থের হিসাব নিয়ে সরদারদের মধ্যে গ্রুপিংসহ দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত শতাধিক লোক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পর্যটক ও এলাকাবাসীর কেউই চাইছেন না, এটি বেসরকারি নিয়ন্ত্রণে চলুক। সবাই দেশের স্বার্থে লক্ষ্মী বাঁওড় জলাবনটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত করার বিষয়ে সুদৃষ্টি কামনা করছেন।