মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

পহেলা বৈশাখে মেলায় নওগাঁর ফুল

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ


পহেলা বৈশাখে মেলায় নওগাঁর ফুল

স্টার, চর্কি, মার্কিন চাঁদ এমন বাহারী নাম আর ডিজাইনের ফুল বানাতে দিনভর কাজ করছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের ফুলের কারিগররা। তাদের এই ব্যস্ততা বলে দিচ্ছে মাত্র দুই দিন পরেই আসছে বৈশাখ। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা আর এই মেলাগুলোকে আরো বর্ণিল সাজে সাজাতে তাদের এই প্রাণান্তর চেষ্টা। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন এই ফুল কারিগররা। আর তাই কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি কাজ করে যাচ্ছেন নওগাঁর ফুল তৈরির কারিগররা। 

সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখো গেছে, গ্রামের প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার এই ফুল তৈরির কাজের সাথে জড়িত। কাপড়, কাগজ আর বাঁশসহ নানা উপকণি দিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি ফুল তৈরির কাজ করে চলেছেন তারা। পরিবারের একজন নয়, ফুল তৈরির এ কাজ করছে পরিবারের সকলেই। বিশেষ করে বাড়ির নারীরা সংসারের কাজ-কর্ম সেরে তৈরি করছেন এসব বাহারী ফুল। 

খুব বেশি পরিশ্রম না হলেও ধৈর্য সহকারে করতে হয় এই কাজগুলো। বাড়ির সকলে মিলে ফুল তৈরির পর পুরুষরা বিক্রির উদ্দেশ্যে চলে যায় জেলা ও জেলার বাহিরে। সেখানে গিয়ে তারা ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত অবস্থান করে ফুল বিক্রি শেষ হলে পুনরায় তারা বাড়ি ফিরে আসেন। এতে করে বাৎসরিক একটি বড় অংকের আয়ও করে থাকে এসব ফুলের কারিগররা। 

জামগ্রামের ফুল কারিগর মামুনুর রশিদ মিলন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই ফুল ব্যবসার সাথে জড়িত। এসব ফুল তৈরির উপকরণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করা হয়। তারপর সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে ফুলে রূপান্তরিত করা হয়। ওই গ্রামের আশরাফুল বলেন, এই ফুল তৈরির কাজে তাকে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান সহযোগিতা করে থাকেন। পহেলা বৈশাখ আসার এক মাস আগে থেকে শুরু হয় এসব ফুল তৈরির কাজ। 

একই গ্রামের কারিগর রেজাউল ইসলাম বলেন, তার বাবা এই ফুল তৈরি ও তৈরিকৃত ফুল বিভিন্ন জেলায় পাইকারী বিক্রির কাজ করতেন। সেই সুবাদে তিনিও এ কাজ করছেন। বর্তমানে নাজমুলের স্ত্রী, দুই সন্তান ও বাবা মা নিয়ে যৌথভাবে সংসার করছেন। তবে এই ফুল তৈরি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে অনেক স্বচ্ছলভাবেই দিন কেটে যায় তাদের। 

তবে গ্রামটি খুবই অবহেলিত। রাস্তা-ঘাট পাকা হয়নি। বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে অনেক খরচ করে একটু আলোর ব্যবস্থা করা যায়। বিদ্যুতের অভাবে রাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারি না। আমরা বিদ্যুৎ পেলে আরও বেশি বেশি করে ফুল তৈরি করতে পারবেন বলে জানান ফুল কারিগররা।  

আব্দুল হালিম নামে ৬৫ বছর বয়সী একজন ফুল কারিগর জানান, জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই তিনি এই ফুল তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত। ফুল তৈরির পর সেগুলো পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসা বৈশাখী মেলাগুলোতে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। যে এলাকায় যাওয়া হয় সেখানে তাবু খাটিয়ে নিজেরাই রান্না-বান্না করে খেতে হয়। এরপর তৈরিকৃত ফুলের সবটুকু বিক্রি হয়ে গেলে আবার ফিরে আসা হয়। এতে করে পহেলা বৈশাখ, দূর্গাপূজাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মৌসুম ভেদে লাভ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। 

এ বিষয়ে আত্রাই-রানীনগর আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, এই ফুল কারীগররা শুধু তাদের উপার্যনই নয় বাংলার সকল সাংস্কৃতিক উৎসবকে বর্ণিল করতেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। এটা একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প। আর এই শিল্পের তৈরি ফুলগুলি দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু পহেলা বৈশাখ নয়, বিভিন্ন গ্রামীণ মেলার সোন্দর্য বর্ধনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে এই গ্রামের ফুল।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১২ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা

সর্বশেষ খবর