বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে বিবৃতি দিয়েছে তা স্ববিরোধী আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে বিবৃতি প্রত্যাহার অথবা সংশোধনের দাবিতে নিউইয়র্কে মানববন্ধন করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রবাসীরা। এ সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, প্রকাশকদের হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহবান জানানো হয়।
গত ৭ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায় 'ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার ডেমক্র্যাটিক বাংলাদেশ'র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও যুব কমান্ডের নেতৃবৃন্দও অংশ নেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ওই বিবৃতিকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী তথা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় মানববন্ধন থেকে। এ সময় দাবি করা হয় যে, 'জামাত-শিবিরের বিপুল অর্থের কাছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি তার আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে একাত্তরের ঘাতকদের মুখপাত্রে পরিণত হয়েছে।''মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে' অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতিকে সার্বভৌম দেশের বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন এ কর্মসূচির আয়োজক সংগঠন 'ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার ডেমক্র্যাটিক বাংলাদেশ'র প্রেসিডেন্ট ও নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের কাউন্সিলম্যান ড. নূরন্নবী।
যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সভাপতি এবং 'ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার ডেমক্র্যাটিক বাংলাদেশ'র সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, 'ঔদ্ধত্যপূর্ণ ওই বিবৃতি প্রত্যাহার অথবা শব্দগত সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নিতে এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।'
যুুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহবায়ক ড. এম এ বাতেন বলেন, 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অপব্যাখ্যা করছে। প্রকারান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগিতা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই তাদের এই অপব্যাখ্যা।'
মুক্তিযোদ্ধা যুবকমান্ডের সাধারণ সম্পাদক কবি শাহীন ইবনে দিলওয়ার বলেন, 'মানবতার পক্ষে বলাই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাজ। তারা তা বলছে না, বরং মানবতার বিপক্ষে যারা কাজ করেছে এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে যারা বিচারের সম্মুখীন হচ্ছে তাদের পক্ষ থেকে কথাগুলো বলে যাচ্ছে।'
যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদের চূড়ান্ত রায় শেষে রিভিউ শুনানির আগে গত ২৭ অক্টোবর অ্যামনেস্টি এক বিবৃতিতে বলে, ''একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারাও 'গুরুতর অপরাধ' করেছিলেন, কিন্তু এজন্য একজনের বিরুদ্ধেও কোনো তদন্ত কিংবা বিচার হয়নি।'' অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এ বিবৃতিতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশিদের মধ্যে। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের মধ্যেও। আন্তর্জাতিক এ সংস্থার মূল উদ্দেশ্য নিয়েও জনমণে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রবাসীদের অনেকে প্রশ্ন করছেন যে, 'জামাত-শিবিরের অর্থের কাছে কী এই সংস্থা জিম্মি হয়ে পড়েছে?'
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরও ছিলেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরনবী, মুক্তিযোদ্ধা সরাফ সরকার, আর আমিন, সাইদুর রহমান, মনজুরুল আলম, রুহুল আমিন ভূইয়া, হুমায়ুন কবির, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুদ হোসেন সিরাজী, সম্মিলিত আওয়ামী সমর্থক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত তালুকদার, প্রজন্ম ৭১’র সভাপতি শিবলী সাদেক, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবল দেবনাথ, কবি রাজিব আহসান পারভেজ, কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ
