২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ১১:৪৭

ওয়াশিংটনে প্রবাসীদের থ্যাংকস গিভিং ডে পালন

শিব্বীর আহমেদ, ওয়াশিংটন:

ওয়াশিংটনে প্রবাসীদের থ্যাংকস গিভিং ডে পালন

যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপিত হল থ্যাংকস গিভিং ডে অর্থাৎ কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন দিবস। ঘটা করে দিবসটি উদযাপন করতে নানারকম সাজসজ্জা ও ভোজের আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর নভেম্বর মাসের চতুর্থ বা শেষ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারিভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে উদযাপন করা হয়। এই দিনে ধনী-গরিব সবাই মেতে ওঠেন ঐতিহ্যবাহী টার্কি (এক ধরণের বড় বনমোরগ) ভোজে। পারিবারিকভাবে প্রতিটি ঘরেই চলে টার্কি আর ডিনার।

থ্যাংকস গিভিং ডে পালন থেকে বাদ যায় না যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরাও। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঘরে ঘরে চলে টার্কি দিয়ে ডিনার সহ সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন। ওয়াশিংটনের অদূরে ভার্জিনিয়ার উডব্রিজ শহরে এমনি একটি থ্যাংকস গিভিং ডে ডিনারের আয়োজন করে ওয়াশিংটনের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ত্ব আবু রুমি ও তার সহধর্মনী শামসুন পারভিন। ডিনারে ওয়াশিংটনে বসবাসরত প্রবাসীরা সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা হতেই অতিথিরা সপরিবারে অনুষ্ঠান স্থলে এসে আনন্দে মেতে উঠেন। চলে গানে গানে আড্ডা আর খাবার দাবার। অবশেষে রান্না করা টার্কি কেটে অতিথিদের মাঝে বিতরণ করে রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়।

আবু রুমি ও শামসুন পারভিনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ওয়াশিংটনে প্রবাসীদের থ্যাংকস গিভিং ডে পালন সন্ধ্যায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বৃহত্তর ওয়াশিংটনের সঙ্গীত শিল্পী উৎপল বড়ুয়া, সীমা খান, মেট্র বাউল, কালাচাঁদ সরকার, শারমিন শিপু টগর, ফাহমিদা হোসাইন প্রমুখ। তবলায় সঙ্গত করেন আশিষ বড়ুয়া, কিবোর্ডে ছিলেন আবু রুমি আর শব্দ নিয়ন্ত্রন করেন আবু প্রান্তকি ও আবু অনিক।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সপরিবারে হোয়াইট হাউজে টার্কি জবাই করে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে রাতের ভুরিভোজ গ্রহন করে থ্যাংকস গিভিং ডে পালন করেন।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেক বছরের নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার এবং কানাডায় অক্টোবরের ২য় সোমবার দিনটি পালন করা হয়। থ্যাংকস গিভিং ডে-কে অনেকে আবার দ্য টার্কি ডেও বলে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে থ্যাংকস গিভিং ডে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক একটা অনুষ্টান।

থ্যাংকস গিভিং ডে'র মূল উদ্দেশ্য, পরিবার, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ সবাই একত্রিত হয়ে সবার জীবনের প্রতিটি সাফল্যের জন্য, দেশ ও জাতির সাফল্যের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানানো। খাবারের তালিকায় থাকে টার্কি রোস্ট, ক্র্যানবেরি সস, মিষ্টি আলুর ক্যান্ডি, স্টাফিং, ম্যাশড পটেটো এবং ঐতিহ্যবাহী পামকিন পাই।

ইতিহাস:

১৬২০ সালে ‘মে ফ্লাওয়ার’ নামের এক জাহাজে চড়ে ১০২ জন নানা ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করার জন্য ইংল্যান্ড ছেড়ে নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। কয়েকমাস পর তারা ম্যাসাচুসেটস বেতে এসে থামেন। যাত্রীদের অনেকেই অর্ধাহারে ও শীতের কোপে অসুস্থ ও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তাদের মধ্যে যারা সুস্থ ছিলেন তারা জাহাজ থেকে তীরে এসে নামেন। ওখানেই তারা প্লিমথ নামে একটি গ্রাম গড়ে তোলেন। স্কোয়ান্তো নামের এক উপজাতি আমেরিকান ইন্ডিয়ানের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। স্কোয়ান্তো তাদের নিজে হাতে শিখিয়ে দেয় কিভাবে কর্ন বা ভুট্টা চাষ করতে হয় বা মাছ ধরতে হয় এবং কিভাবে ম্যাপল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হয়।
১৬২১ সালের নভেম্বরে প্লিমথবাসী তাদের উৎপাদিত শস্য কর্ন নিজেদের ঘরে তুলতে পেরেছিল। কর্ণ বা ভুট্ট্রার ফলন এত ভালো হয়েছিল যে, গভর্নর উইলিয়াম এ উপলক্ষে সব আদিবাসী এবং নতুন প্লিমথবাসীর সৌজন্যে ভূরিভোজের আয়োজন করেছিল। ওই অনুষ্ঠানে সবাই প্রথমে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানান তাদের সুস্থভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এমন সুন্দর শস্য দান করার জন্য। তারপর উপস্থিত সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানান সারা বছর একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য। এই অনুষ্ঠানটি আমেরিকার প্রথম থ্যাংকস গিভিং ডে হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

১৮১৭ সালে নিউইয়র্কে সর্ব প্রথম ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ অফিসিয়ালি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর ১৮২৭ সালে বিখ্যাত নার্সারি রাইম ‘মেরি হ্যাড আ লিটল ল্যাম্ব’ রচয়িতা সারাহ যোসেফা উদ্যোগ নেন, যেন ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’-কে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ৩৬ বছর সারাহ যোসেফা একটানা প্রচারাভিযান চালান থ্যাংকস গিভিং ডের পক্ষে। ১৮৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন শেষ পর্যন্ত সারাহ যোসেফের আবেদন গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেন এবং নভেম্বর মাসের শেষ বৃহস্পতিবারকে ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা দেন। কিন্তু ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট তখনকার অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠার লক্ষে এ ছুটি এক সপ্তাহ এগিয়ে আনার ঘোষণা দেন এবং এরপর থেকে নভেম্বর মাসের চতুর্থ বৃহস্পতিবার ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ পালিত হয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে থ্যাংকস গিভিং ডে পালনের ঠিক পরের দিন শুক্রবার ব্লাক ফ্রাইডে হিসাবে পালন করা হয়। অর্থাৎ নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার ব্ল্যাক ফ্রাইডে হিসেবে উদযাপিত হয়ে থাকে। এই দিনটি অনেক দেশেই অফিসিয়াল ও আনফিসিয়াল শপিং মৌসুমের শুরু হিসেবে বিখ্যাত। প্রায় সব দোকান অনেক বড় অংকের ডিসকাউন্ট এই দিনে দিয়ে থাকে। সময়ের সাথে সাথে ব্লাক ফ্রাইডের প্রচলন অফলাইন থেকে অনলাইনেও শুরু হয়েছে। বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষে এখন প্রায় সব অনলাইন শপিং স্টোরগুলোও রিটেইল শপগুলোর মতোই ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে বড় অংকের সেলস ডিস্কাউন্টের ব্যবস্থা করে থাকে।

বিডি-প্রতিদিন/২৭ নভেম্বর ২০১৫/ এস আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর