২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৫:০৮

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার সংকল্পে প্রবাসে বড়দিন পালিত

নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ:

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার সংকল্পে প্রবাসে বড়দিন পালিত

রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতি বোমা হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ এবং এহেন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হবার উদাত্ত আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি খ্রিস্টানরা বড়দিন পালন করলেন। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রবাসের ন্যায় দেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার সংকল্প ব্যক্ত করা হয়। নিউইয়র্কে বড়দিনের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমানদেরও বিপুল উপস্থিতি ছিল। 

জ্যাকসন হাইটসের সন্নিকটে ‘ইউনাইটেড বেঙ্গলী লুথারেন চার্চ’-এর অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা ঘটে কেক কাটার মধ্য দিয়ে। প্রধান অতিথি ছিলেন  নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘গোটাবিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণের দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সম্ভবত বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশের রাষ্ট্রপতির বাসভবনেও বড়দিনের উৎসব হয় এবং রাষ্ট্রপতি নিজে আড়ম্বরের সাথে খ্রিস্টানদের সাদর অভ্যর্থনা জানান।’ 

‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ব্যতীত বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য এখনও অটুট রয়েছে এবং আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশ হয়ে থাককে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রোল মডেল’-প্রত্যাশা কন্সাল জেনারেলের। 

অনুষ্ঠানে জ্যাকসন হাইটসে মোহাম্মদী সেন্টার জামে মসজিদের ইমাম কাজী কাইয়ুম, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নবেন্দু বিকাশ দত্ত, বাঙালি সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক আনোয়ার হোসেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং হোস্ট সংগঠনের অন্যতম পৃষ্টপোষক টমাস দুলু রায়ও বক্তব্য রাখেন। 

ইমাম কাজী কাইয়ুম তার বক্তব্যে রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে  জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘এহেন অপকর্মে লিপ্তদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে -সামাজিক ঐক্য দৃঢ় হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।’

'ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস করছে তারা মূলত মানবতার শত্রু এবং ইসলাম ধর্ম কখনোই এ ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না' বলেন কাজী কাইয়ুম।

বড়দিনে তুষারপাত হয় অথবা হাড় কাপানো শীতে গোটা নিউইয়র্ক জবুথবু হয়ে থাকে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা ঘটলো। তুষারপাত দূরের কথা, তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রির ওপর ছিল। থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এরিমধ্যে আমেরিকানরা নিজ নিজ চার্চে জড়ো হয়ে প্রার্থনায় মিলিত হন। শিশু থেকে বয়স্ক এবং প্রবীণরা নতুন পোশাকে মেতে ওঠে। 

বাংলাদেশিদের অনুষ্ঠানে এবার সান্তা ক্লজ হিসেবে কোনো আমেরিকানকে ভাড়া করা হয়নি। বাঙালিরাই সেজেছিলেন সান্তা ক্লজ এবং ছোট্টমণিদের মাতিয়ে রাখেন। শিশুদের মাঝে ঘুরে ঘুরে প্রিয় খেলনা বিতরণও করেন সান্তা ক্লজ। 

বড়দিনের সমাবেশ বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছিল নিজ নিজ বাসা থেকে তৈরি করে আনা নানা ধরনের পিঠা ও নানা পদের খাবারে।

‘ইউনাইটেড বেঙ্গলি লুথারেন চার্চ’র সিনিয়র প্যাস্টর জেমস রয়ের নেতৃত্বে যীশু খ্রীষ্টের  জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানের পরই সকলে খাবার গ্রহণ করেন। এরপর স্থানীয় শিল্পীরা যীশু খ্রিস্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। তরুণীরা নৃত্য পরিবেশন করেও সকলকে ভিন্ন এক আমেজে মাতিয়ে রেখেছিল। 

বড়দিনের অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করায় সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এ চার্চের প্রেসিডেন্ট শামসুল আলম স্যামুয়েল। 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর