শিরোনাম
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:২১
শান্তিরক্ষা মিশনে

বাংলাদেশি নারী পুলিশদের সাহসিকতার চলচ্চিত্র জাতিসংঘে

নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ:

বাংলাদেশি নারী পুলিশদের সাহসিকতার চলচ্চিত্র জাতিসংঘে

হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল। এর ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র “সহস্র মাইলের একটি যাত্রা: শান্তিরক্ষী” প্রদর্শিত হলো নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে। গতকাল বুধবার অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানে এ ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মহাসচিব বান কি-মুন। 

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সৈন্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এ কারণে এক দশকেরও অধিক সময় যাবৎ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সর্বাধিকসংখ্যক ট্রুপস সরবরাহকারী রাষ্ট্রের আসনে রয়েছে। নারী পুলিশের শান্তিরক্ষীরা আরও একধাপ এগিয়ে নিলেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কর্মনিষ্ঠাকে। এ চলচ্চিত্রে বাঙালি নারীর কর্মনিষ্ঠার অসাধারণ চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। বিশেষ করে অনেকে উচ্চশিক্ষিত না হয়েও সম্পূর্ণ অপরিচিত এবং একটি ভয়ংকর পরিবেশে কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তার তথ্যচিত্র সবিস্তারে ধারণ করা হয়েছে এই ছবিতে।

ফিল্ম একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা গীতা গান্দভীর (GEETA GANDBHIR) ও শারমিন ওবায়েদ-চিনয় (SHARMEEN OBAID-CHINOY)-এর পরিচালনায় ইংরেজী, ক্রিয়োল এবং বাংলাভাষায় নির্মিত ৯৫ মিনিটের এ চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের নারী পুলিশের সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। 

২০১৩ সালের জুন থেকে টানা এক বছর তাদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও ঘনিষ্ঠজনদের ছেড়ে দেশ থেকে অনেক দূরে হাইতিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশী নারী পুলিশের এই সদস্যগণের অবিস্মরণীয় ভূমিকা অন্য সকলের জন্যে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে বলে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন উল্লেখ করেন। চলচ্চিত্রে বাংলাদেশী নারী পুলিশদের সামাজিক ও পারিবারিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার চিত্রও উপস্থাপিত হয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী, সন্তানের মা ও অবিবাহিতদের নিয়ে গঠিত এই শান্তিরক্ষী ইউনিটই বিশ্বের প্রথম পূর্ণ নারী শান্তিরক্ষী ইউনিটের একটি।

পাঁচজন সাহসী নারী শান্তিরক্ষীর পারিবারিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি শান্তিমিশনেও যেসব সমস্যা সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করেছেন তা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কলেরা উপদ্রুত অঞ্চলে আতংকগ্রস্ত লোকজনকে কীভাবে তারা শান্ত রেখেছেন, বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন সে সব ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে এ ছবিতে। হাইতির ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা ছিল না এসব নারী পুলিশের। কীভাবে তাদের মন জয় করা সম্ভব সে ধারণাও নিয়ে যাননি তারা। অনেকের উচ্চশিক্ষাও নেই। শুধুমাত্র আবেগ-অনুভূতি দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ব্যানারে তারা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন। এভাবেই তারা হাইতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ চার শতাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। সব দর্শক বাংলাদেশের নারীদের এই সাহসিকতা ও ত্যাগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বিশেষ করে নারী শান্তিরক্ষীরা বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এই চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালন করায় তাদের প্রশংসা করেন। মহাসচিব এ সময় বলেন, ‘তারা নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে শান্তি রক্ষায় লিঙ্গ-সমতা আনয়নে বাংলাদেশ পথ-প্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে।’

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের একটি অনন্য উদাহরণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারীরা সকল ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে এ ছবি তার সাক্ষ্য বহন করছে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ সেনা ও পুলিশ নিয়োগকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দায়িত্ব পালন করছে। শান্তিরক্ষায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলাদেশ তার অবদান বাড়িয়ে যাচ্ছে।’

জাতিসংঘ পুলিশের উপদেষ্টা স্টিফেন ফেলার বলেন, ‘বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ পুলিশের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব জোরদার করার একটি সুযোগ তৈরি করেছে সরেজমিনে ধারণকৃত এ চলচ্চিত্র।’


বিডি-প্রতিদিন/ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর