২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ১৬:৫৪
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেলে বাড়বে যোগ্যকর্মী

আমিরাতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা চালুর আহ্বান

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :

আমিরাতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা চালুর আহ্বান

হঠাৎ করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে অনেকেই কর্মের সন্ধানে পাড়ি দেন পরদেশে, নামের পাশে যোগ হয় ‘প্রবাসী’ বিশেষণ। কর্মস্থলে পা রেখেই বুঝতে পারেন, দেশে আরেকটু পড়ার প্রয়োজন ছিল বা আরও দু-একটি সার্টিফিকেট অর্জন করা যেত। যে সময় এ চিন্তাটি মাথায় কাজ করে, তখন আর সুযোগ ফিরে আসেনা। 

এসএসসি পাশ ও এইচএসসি অধ্যায়নরত অবস্থায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে পা রাখা কর্মীর সংখ্যা নেহাৎ কমও নয়, যারা এমন তাড়নায় ভোগেন। আবার কেউ কেউ দু-দন্ড পার করলেও ভাল একটি ডিগ্রির অভাবে পদোন্নতি থেকে পিছিয়ে পড়ছেন বছরের পর বছর। নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে নতুন করে পড়ালেখার ইচ্ছে ও আগ্রহ জন্মায়। 

কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাবে স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয়না। যদিও বর্তমানে অনলাইনে পড়ালেখার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়ছেনও। কেউ কেউ আবার উচ্চতর ডিগ্রির জন্য প্রবাসে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দিয়ে আসছেন লাখ লাখ টাকা। বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ কোনো ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থাকলে এ চিত্র নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম হত। 

প্রবাসে কর্মজীবি শ্রমিকদের ফের পড়াশোনার এমন ইচ্ছা ও আগ্রহ যাচাই করতে গিয়ে উঠে আসলো বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা চালুর কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরাসরি বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমিরাতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা চালু করা গেলে প্রবাসে কর্মজীবিদের মধ্যে নতুন করে পড়ালেখার আগ্রহ জন্মাবে। ফলাফল হিসেবে বাড়বে যোগ্যকর্মীর সংখ্যা। পাশাপাশি অনেক প্রবাসীরা ছুটির দিনেও পড়ালেখার সুযোগ পাবেন। তখন এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলেও রাখবে জোরালো ভূমিকা। শুধু তাই নয়, বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশগুলোর মধ্যে আমিরাতের অবস্থা যেমন প্রথম সারিতে, তেমনি বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এখানকার অবস্থান দ্বিতীয়। কমিউনিটির শক্তিশালী এ অবস্থানের প্রেক্ষিতেও এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে কমিউনিটির পাশাপাশি বাড়বে দেশের সুনাম।   

বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব দুবাইয়ের সভাপতি নওশের আলী এ প্রসঙ্গে জানান, ‘এমন একটি প্রতিষ্ঠান চালু করার কথাই ভাবছি দীর্ঘদিন। আমরা চাই প্রবাসে পড়তে ইচ্ছুক প্রবাসীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে। আমিরাতের শারজায় এজন্য জায়গাও খোঁজা হচ্ছে। আমিরাত সরকার থেকে নিবন্ধন নেয়ার জন্যে প্রথমে এটি বাণিজ্যিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আকারে খুলতে হবে। তবে কমার্শিয়াল হলেও শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ পাবে এখানে। পরবর্তীতে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনও নেয়া যেতে পারে। ইতোমধ্যে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও ঢাকায় আমরা আলাপ করেছি।’ 

ইউএই বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, 'পড়াশোনার বিষয়টিতে আমার আগ্রহ প্রচুর। প্রবাসীদের পড়ালেখায় সহযোগিতা করতে পারাটাও আনন্দের। তবে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোন লেভেলে পড়তে চান সেটি মূখ্য বিষয়। কেউ ডিগ্রি কোর্স করতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে লিঙ্কআপ করতে হবে। তবে যদি কেউ দেশ থেকে এসএসসি শেষ করে এসে এখানে এইচএসসি সম্পন্ন করতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদনক্রমে আমিরাতের বাংলাদেশ স্কুল এণ্ড কলেজ থেকে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যাবে।' 

তিনি আরও বলেন, 'এখানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা এমন কোনো প্রতিষ্ঠান দিতে গেলে লাইসেন্স, জমি ক্রয়সহ এ সংক্রান্ত নানা টেকনিক্যাল ঝামেলা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আমিরাত সরকার থেকে নিবন্ধন নিতে চাইলেও সহজে পাওয়া যাবে না। কারণ নিজস্ব জমি, ভবন ও তাদের সকল চাহিদা পূরণ প্রায় অসম্ভব। প্রচুর অর্থ ব্যয়ের ব্যাপার আছে এখানে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন ও সরকারের অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে এসব ঝামেলা নাও হতে পারে। আমরাও চাই এধরণের একটি প্রতিষ্ঠান হোক। বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনস্যুলেট যথাযথ সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ সমিতি থেকে আমরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি, পাশাপাশি কমিউনিটির সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেলে এ ধরণের প্রতিষ্ঠান অবশ্যই দাঁড় করাতে পারবো।' 

এ বিষয়ে কথা হলে দুবাই ও উত্তর আমিরাত কনস্যুলেটের বিদায়ী কাউন্সিলর ড.শাহ তানভীর মনসুর বলেন, ‘আমিরাতে যেকোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ বা বিবিএ কোর্স করতে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়। যদি বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্থ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে নূন্যতম খরচে সে ডিগ্রি অর্জন সম্ভব হয়, তবে তা অধিক ভাল। আবার প্রবাসে একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বহুমূখী লাভ। আমিরাতে ব্যাংক ও ভাল ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এক্সিকিউটিভ লেবেলের এমন অসংখ্য লোক আছেন, যারা চাইলে ছুটির দিনে ট্রেনিং গ্রহণের মাধ্যমে খুব সহজে একটি ডিগ্রি কোর্স করে নিতে পারেন। এটি কর্মক্ষেত্রে পদন্নোতিরও দারুণ সুযোগ করে দেবে। এছাড়া এমন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলে দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি কন্স্যুলেটেরও বিভিন্ন কাজ করা যায়। আলাদা সুবিধা বাড়বে প্রবাসীদের।’

দুবাই ও উত্তর আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল এস. বদিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রবাসীদের উচ্চ শিক্ষার জন্যে প্রাইভেট ভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা যেতে পারে। তবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি সরাসরি দেশ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে এখানকার উদ্যোক্তারা উচ্চ পর্যায়ে যোগযোগ করতে পারেন। আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবেন তারা।’


বিডি প্রতিদিন/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর