১৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৩:১৪

আরব আমিরাতে সাড়ে চার বছরেও জট খোলেনি বন্ধ ভিসার

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :

আরব আমিরাতে সাড়ে চার বছরেও জট খোলেনি বন্ধ ভিসার

২০১২ সালের আগষ্ট মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাময়িক ঘোষণায় বন্ধ করা হয় বাংলাদেশিদের শ্রমবাজার। এতে নতুন ভিসা ইস্যু ও অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন বাংলাদেশিরা। ভিসা জটিলতায় আটকা পড়া শ্রমিকদের শুরু হয় ভোগান্তির জীবন। কর্মস্থলে নানা হয়রানির শিকার হতে থাকেন সাধারণ শ্রমিকরা। 

এমনকি নির্ধারিত সময়ে মজুরি না পাওয়া ও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা বেঁধে দেয়ার পরও উচ্চবাচ্য করার সুযোগ নেই আমিরাতের সবচেয়ে কম মজুরিতে কাজ করা এসব শ্রমিকদের। বছরের পর বছর শ্রমিক ভিসা বন্ধ থাকায় একদিকে সেখানকার শ্রমবাজার দখলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর হাতে অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে কমছে বাংলাদেশের রেমিটেন্স। 

তবে নতুন বছরের জানুয়ারি মাস আসলেই প্রবাসীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার ঘটে- ‘এই বুঝি ভিসা খোলার সময় হলো’। এটি তাদের মানের কথা, প্রকাশ্যে ভিন্নমত, ভিন্ন প্রচারণা। ‘ভিসা খোলার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে’ এমন মত প্রকাশ করেন কর্তাব্যক্তিরা। তাতে প্রবাসীদের প্রত্যাশার মাত্রাও বাড়ে। কিন্তু কথার কথাগুলো আর কাগজে কলমের সিদ্ধান্তে রূপ নেয় না। জট খোলে না আমিরাতের বন্ধ ভিসার। শুধু সাধারণ শ্রমিকরাই নন, দেশীয় শ্রমিকের নতুন ভিসা ইস্যু না হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে দেশেও ফিরেছেন অনেক লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী। 

আমিরাত প্রবাসী ব্যবসায়ীরা জানান, সাড়ে চার বছরেরও অধিক সময় ধরে আরব আমিরাতের ভিসা বন্ধ থাকায় ক্রমাগত ভোগান্তি বেড়েই চলেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের। কর্মস্থলে নানা জটিলতা থাকার পরও অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার সুবিধার অভাবে মালিক পরিবর্তন করতে পারছেন না সাধারণ শ্রমিকরা। তারা জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকরাই আমিরাতের সবচে' কম মজুরিতে কাজ করেন। এছাড়া দেশী শ্রমিকদের ভাষাগত দক্ষতা ও কাজের পারদর্শীতার কারণে অন্যান্য দেশের শ্রমিকের তুলনায় বাংলাদেশিদের চাহিদা বেশি। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নতুন ভিসা ইস্যু না হওয়ায় দেশীয় শ্রমিকের অভাবে অনেক লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীও নিজের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ফিরে যাচ্ছেন দেশে। 

এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে আমিরাতে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ থাকার সুনির্দ্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও অনেককে বলতে শোনা যায় বাংলাদেশিদের অপরাধ প্রবণতার কথা। কেউ কেউ এটিকেই জোরালো ভাবে দায়ী করেন ভিসা জটিলতার অন্তরায় হিসেবে। তবে বাস্তবে এর চিত্র অনেকটা ভিন্ন। বাংলাদেশিদের চেয়ে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলক বেশি থাকলেও স্থানীয় মিডিয়ার কারণে পার পেয়ে যান পার্শ্ববর্তী দেশের শ্রমিকরা। কারণ, তাদের অপরাধ প্রকাশ-প্রচার করতে গিয়ে স্থায়ীন মিডিয়া উল্লেখ করে এশিয়ান নাগরিক হিসেবে। যেখানে বাংলাদেশিদের ছোট-খাটো অপরাধগুলোও তারা দেশের নাম উল্লেখসহ বেশ ফলাও করে প্রচার করে। যার ফলে বাংলাদেশিদের উপর আমিরাতের একটি নেতিবাচক দৃষিভঙ্গি তৈরি হচ্ছে এমন মন্তব্য করলেন আল আইন জুডিশিয়াল ডিপার্মেন্টের অনুবাদক মুহাম্মদ মুসা কলিম উল্লাহ হক। 

তিনি বলেন, ‘ বৈধ শ্রমিকদের অপরাধ প্রবণতা কম, কিছু কিছু অবৈধ শ্রমিকদের দ্বারা অপরাধ সংগঠিত হয় এটি সত্য। তবে তা মাত্রাতিরিক্ত নয়। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিকরা আরো বড় বড় অপরাধ করে সেখানে আমাদেরগুলো খুবই সামান্য লাগার কথা। কিন্তু মিডিয়া আমাদের হাতে না থাকায় এবং ভারত ও পাকিস্তানের হাতে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো আমাদের দোষ ত্রুটিগুলো দেশের নাম উল্লেখ করে আমিরাতে ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশিদের অপরাধ বেশি মনে হয়।’ এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্যে দূতাবাসের পক্ষ থেকে তদারকি বাড়ানো কথাও বলেন তিনি। 

আল আইন মারহাবা ড্রেসিং এর স্বতাধিকারী প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আকবর বলেন, ‘আমিরাতের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল যখন জনশক্তি রপ্তানি সম্পর্কে আলোচনা করতে বাংলাদেশে যায়, তখন প্রবাসীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রত্যাশিত ফলাফল না পাওয়ায় হতাশও হয়েছে প্রবাসীরা।’ ভিসা জটিলতার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ নজরে রাখা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হবার কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এ সুযোগ নিয়ে লাভবান হচ্ছে, আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। ভিসা জটিলতার ইস্যুতে সকল ধরণের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সকলের জোর প্রচেষ্টা চালানো দরকার। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে দুই দেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারলে এ সমস্যা থেকে উত্তোরণ সম্ভব।’

আশা নিরাশার মাঝে সাড়ে চার বছর কেটে গেলেও কবে নাগাদ ফের খুলবে আমিরাতের বন্ধ শ্রমবাজার সে প্রত্যাশায় দিন গুণছেন আমিরাত প্রবাসীরা। পাশাপাশি নতুন করে আমিরাতে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরাও আশায় বুক বাঁধছেন প্রতিনিয়ত। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে প্রবাসীদের দ্বারে প্রত্যাশিত ফলাফল পৌঁছে দিতে। এখন প্রয়োজন দু-দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও দ্রুত ভিসা জটিলতার অবসান ঘটানো, এমনটি প্রত্যাশা করছেন প্রবাসীরা।

 

বিডি প্রতিদিন/১৫ জানুয়ারি ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর