২১ জুন, ২০১৭ ১৪:৪০

নিউইয়র্কে ফের বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতারের ঘটনায় গুঞ্জন

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক

নিউইয়র্কে ফের বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতারের ঘটনায় গুঞ্জন

আট দিনের ব্যবধানে একইধরনের অভিযোগে নিউইয়র্কে আরেকজন বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেফতার হওয়ায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। চার বছর আগের ঘটনায় জাতিসংঘের পদস্থ একজন কর্মকর্তাকে সরাসরি গ্রেফতারের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরেক দফা প্রশ্নবিদ্ধ হলো বলেও মন্তব্য করা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। 

গুঞ্জন উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যই কূটনীতিকদের ফাঁসানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের জন্যে মার্কিন বিচার বিভাগের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসীদের স্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়েছে। 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতারের সাত ঘণ্টা পর আড়াই লাখ ডলার বন্ডের বিনিময়ে জামিনে মুক্ত হন জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির কর্মকর্তা হামিদুর রশীদ (৫০)। এসময় অবশ্য তার পাসপোর্টসহ ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় কাগজপত্র সোপর্দ করতে হয় ফেডারেল কোর্টে। আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পদের দলিল হস্তান্তর করতে হবে বাংলাদেশি হামিদুর রশীদকে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি হামিদুর রশীদের বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতি, বিদেশী কর্মী নিয়োগ চুক্তিতে জালিয়াতি এবং পরিচয় জালিয়াতিসহ গৃহকর্মীর ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রদানে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনস্থ ফেডারেল কোর্টে। 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে রশীদকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই আটক করে। ফেডারেল জজ জেমস সি ফ্রেঞ্চাইজের এজলাসে সোপর্দ করে বিকেলে। এরপর নিউইয়র্ক সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস এটর্নি জুন এইচ কিম রশীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানান। 

মার্কিন এটর্নী বলেন, বিদেশ থেকে গৃহকর্মী আনার পরই কূটনীতিকদের কেউ কেউ তাদের মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দেন। গৃহকর্মীর অভিযোগ অনুযায়ী, হামিদুর রশীদ জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার দাপটে তার সাথে নির্দয় আচরণ করেছেন। সপ্তাহের পাঁচ দিন মোট ৪০ ঘণ্টা কাজের চুক্তি থাকলে সাত দিনই গভীর রাত অবধি কাজ করিয়ে নেয়া হয়। এরপরও ন্যুনতম মজুরিও দেয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরমে উল্লেখ ছিল, সপ্তাহে ৫ দিন ৪০ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে ৪২০ ডলার  করে প্রদান করবেন। এ হার অনুযায়ী ঘণ্টায় সাড়ে ১০ ডলার করে প্রদানের কথা। নিউইয়র্কে আসার পরই হামিদুর রশীদ নতুন আরেকটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নেন, যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি ২৯০ ডলার করে লেখা হয়। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় মজুরি হয় মাত্র ৭.২৫ ডলার করে। নিউইয়র্কে সে সময় ন্যুনতম মজুরি ছিল ঘণ্টায় ৯.৬৩ ডলার করে। 

বাংলাদেশেও রশীদের বাসায় কাজ করতেন এই নারী। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে আসার পর অক্টোবর পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন। সে সময় তাকে প্রতি মাসে ৬০০ ডলারের সমপরিমাণের অর্থ দেয়া হয় যা জমা করা হয় গৃহকর্মীর নামে খোলা একাউন্টে। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, একাউন্টের সমস্ত চেকবই থাকতো রশীদের কাছে। একাউন্টে জমা হবার পরই সে অর্থ ড্র করতেন রশীদ অথবা তার স্ত্রী। ওই নারীর পাসপোর্টও আটক রাখেন রশীদ। পারিশ্রমিক অথবা সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করিয়ে নেয়ার প্রতিবাদ জানালেই তাকে নাকি পুলিশে দেয়ার হুমকি দিতেন রশীদ। এ অবস্থায় ওই বছরের অক্টোবরের শেষার্ধে তিনি পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। এতদিন তার কোন খোঁজ ছিল না। 

মামলায় রশীদ গ্রেফতার হওয়ার পরই সেই গৃহকর্মীকে পাওয়া গেছে বলে জাতিসংঘে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
 
ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি এনালাইসিস ইউনিটের প্রধান হিসেবে কর্মরত হামিদুর রশীদ। তার বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। বিদেশি কর্মী নিয়োগ চুক্তির প্রতারণা, পরিচয় চুরি তথা গৃহকর্মীর পাসপোর্ট আটক এবং ব্যাংকের একাউন্ট খোলার নামে প্রতারণা, বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের চুক্তিতে প্রতারণাসহ সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বমোট ২৯ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে হামিদুর রশীদের। 

ইউএস এটর্নি উল্লেখ করেছেন, কংগ্রেসে পাশ হওয়া আইন অনুযায়ী কূটনীতিকদের অপরাধের জন্যে এসব দণ্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন গৃহকর্মীর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কন্সাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে। গ্রেফতারের ৩৬ ঘণ্টা পর ৫০ হাজার ডলার বন্ডে তাকে জামিন দেয়া হয় হয়ে। তার গৃহকর্মী ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মে পর্যন্ত কাজ করেন এবং মে মাসের শেষার্ধে পালিয়ে যান। 

অপরদিকে হামিদুর রশীদের গৃহকর্মী মাত্র ১০ মাস কাজের পরই পালিয়ে করেন। এর চার বছর পর অভিযোগ আমলে নিলেন বিচার বিভাগ। উভয় ঘটনা একইভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে কমিউনিটিতে। ন্যায্য পারিশ্রমিক না পাবার অভিযোগ শাহেদুলের বিরুদ্ধে ধোপে টিকছে না বলে স্থানীয় মিডিয়ায় তথ্যভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। 

শাহেদুলের গৃহকর্মী মো. রুহুল আমিন নিজ অ্যাকাউন্টে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৩২ লাখ টাকার সমপরিমাণ ডলার পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে।  সে অর্থে ঠাকুরগাঁওয়ে জমি ও বাড়ি তৈরি করেছেন। এছাড়া আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। যা জমা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের শাখায়। শাহেদুল কোনো পারিশ্রমিকই তাকে দেননি বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। তাহলে রুহুল আমিন সে অর্থ পেয়েছেন কোথায়-এ প্রশ্ন প্রবাসীদের। 

নির্যাতিত গৃহকর্মী হিসেবে আবেদন করলে খুব দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাওয়া যায় বলেই এ দুটি ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এ আলোকে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি রিচার্ড ব্রাউনের কাছে আবেদন করার জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/২১ জুন, ২০১৭/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর