২৯ জুন, ২০১৭ ১১:১৩

যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার সেই 'উপদেষ্টা'র ৪ মাসের কারাদণ্ড

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার সেই 'উপদেষ্টা'র ৪ মাসের কারাদণ্ড

জাহিদ সরদার সাদী

এবার আর রেহাই পেলেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা জাহিদ সরদার সাদী ওরফে সর্দার ফারুক (৪২)। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওরল্যান্ডোতে অবস্থিত মিডল ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্ট সাদীকে ৪ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছে। 

গত মঙ্গলবার বিচারপতি গ্রেগরী এ প্রেসনেল এ রায় প্রদান করেছেন। একইসাথে সাদীকে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতিও প্রদান করা হয়েছে। 

ফেডারেল কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি ছিল সাদীর ২৮তম গ্রেফতার। চেক জালিয়াতি, ব্যাংকের সাথে প্রতারণা, বিভিন্ন জনকে ঠকানো ইত্যাদি মামলায় এর আগে ২০০৯ সালের ৫ মার্চ একই আদালত সাদীর ৪০ মাসের কারাদণ্ড দেন। এই দণ্ডভোগের পর তাকে ৫ বছরের সুপারভাইজড রিলিজের (কর্তৃপক্ষের নজরদারি) তথা প্রবেশনে থাকার অনুমোদন দেন আদালত। 

সর্বশেষ মামলায় প্রবেশনের বিধি চরমভাবে লঙ্ঘনের জন্য সাদীকে গত ১৭ মে গ্রেফতার করা হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল হিলে বিএনপির পক্ষে দেন-দরবার করতে যাওয়ার সময় এফবিআই তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির পক্ষে ভুয়া বিবৃতি তৈরির ঘটনা ফাঁস হওয়ায় বিব্রত বিএনপি নেতাদের চাপে সাদীসহ দু’জনকে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং বিদেশ বিষয়ক বিশেষ দূতের পদ থেকে অপসারণ করা হয়। 

এরপরও লন্ডন থেকে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনেরা নিউইয়র্কে এলেই এই সাদীর সাথে দহরম-মহরম করেন বলে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিভিন্ন নেতারা অভিযোগ করেছেন। শুধু তাই নয়, ‘খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টার পদ থেকে অপসারণের পরও মার্কিন প্রশাসনে দেন-দরবারের সময় এই সাদী নিজেকে ‘বাংলাদেশের ৩বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ফরেন এডভাইজার এ্যান্ড স্পেশাল এনভয়’ হিসেবে পরিচয় দেন।প্রতারণামূলকভাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ক্যাপিটল হিল, জাতিসংঘে এসব পরিচয় উপস্থাপনের কিছু ডক্যুমেন্টও আদালতে নথিভুক্ত রয়েছে। 

আদালতের তথ্য অনুযায়ী, সাদীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল হিস্টরী পয়েন্ট হচ্ছে ৯। এটির ক্যাটাগরি ফোর। এ ব্যাপারে সাদীও আদালতের সাথে একমত পোষণ করেন। মামলার বিবরণে আরও জানা গেছে, ২০০৯ সালের মার্চে প্রদত্ত ৪০ মাসের দণ্ডসহ সাদীকে ২ লাখ ৩৪ হাজার ২২৯ ডলার ৭৫ সেন্ট জরিমানা করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে এই অর্থ সাদী আত্মসাৎ করেন বলে আদালতে স্বীকার করেন সাদী। সেই অর্থ সরকারী কোষাগারে ফেরত দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু গত ৬ বছরের মধ্যে সাড়ে ৩ বছরের মত তিনি জেলে ছিলেন। এরপর প্রবেশন ভঙ্গ করে নিউইয়র্কে বিএনপির মিটিং-মিছিলে সময় অতিবাহিত করায় ওয়ার্কপারমিট নবায়নে সক্ষম হননি। তাই কোন কাজও করতে পারেননি বলে আদালতের অবজার্ভেশন রয়েছে। তাই সেই অর্থ সাদী কীভাবে পরিশোধ করবেন সেটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে সর্বশেষ মন্তব্যে আদালত উল্লেখ করেছেন। 

আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সর্দার জাহিদ ফারুক ওরফে সাদী। যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ১৯৯৬ সালে। সরকারের ইস্যুকৃত ভিসায় তিনি নিউইয়র্ক হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। এরপরই ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে বসতি গড়েন। সেখানেই তিনি মার্সিয়া পবেলকে বিয়ে করেছেন। তাদের একটি কন্যা রয়েছে। তার নাম সারাহ পবেল ফারুক। কিন্তু মার্সিয়ার সাথে বনিবনা না হওয়ায় ২০০৮ সালে তালাকের মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে। সে সময় থেকেই সাদীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। কারণ, তার বৈধ স্ট্যাটাস নেই। 

বিডি-প্রতিদিন/২৯ জুন, ২০১৭/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর