১৯ জুলাই, ২০১৭ ১০:২৯

'ধর্মের নামে সন্ত্রাস প্রতিরোধে প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে'

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

'ধর্মের নামে সন্ত্রাস প্রতিরোধে প্রবাসীদের এগিয়ে আসতে হবে'

‘সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে প্রবাসী বাঙালীদের এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বব্যাপী ধর্মের নামে উগ্রবাদীরা সন্ত্রাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, কেউ যাতে উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসের দিকে ধাবিত না হয় সে লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা,  বিশ্বের প্রতিটি দেশ এবং সমাজে উগ্রবাদ ঢুকে পড়েছে, একক কোন দেশ বা গোষ্ঠীর পক্ষে তা প্রতিহত করা সম্ভব নয়। উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিশ্ববাসীকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।’

গত ১১ জুলাই মঙ্গলবার ব্রাসেলসে  ‘ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ ফোরাম’ (ইবিএফ) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 

ইবিএফ এর আনসার আহমেদ উল্লার সভাপতিত্বে ব্রাসেলস প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ‘এগেইনষ্ট ভায়লেন্স এস্কট্রিমিজম এ্যান্ড টেররিজম ইন ইউরোপ এ্যান্ড বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনায় অংশ নেন  ইউকে কনজারভেটিভ দলীয় মেম্বার অব ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট জেফরী ভেন ওরডেন, ইতালীয়ান সোস্যাল ডেমক্রেট দলীয় এমপি ব্রানদো বেনিফি,  লেবার দলীয় সাবেক ডাচ এমপি এ্যামা আশান্তি, সোসালিষ্ট পার্টির হ্যারী ভ্যান ভোমের্ল।

সেমিনারে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করেন বক্তারা। জাফরী ভ্যান অরডেন এমইপি বলেন, সাউথ এশিয়ান দেশগুলোতে উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটেছে এবং ঘটছে, আর এর বিস্তৃতি ঘটছে এখন বৃটেন সহ সমগ্র ইউরোপে। সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে বৃটেন সহ ইউরোপের দেশগুলোকে সাউথ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে  সম্পর্ক আরো জোরদার এবং কাউন্টার টেররিজম প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আর এ ব্যাপারে দেশগুলোর ফরেন এ্যাফেয়ার্সকে আরো তৎপর হওয়ার আহবান জানান তিনি। 

সম্প্রতি লন্ডন মানচেষ্টারসহ বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে জাফরী ভ্যান বলেন, ‘এর সাথে জড়িতদের বেশীর ভাগই সাউথ এশিয়ান বংশোদ্ভ’ত ব্রিটিশ এবং কনভার্ট মুসলিম। এখান থেকে যাতে আর কেউ উগ্রবাদের দিকে ধাবিত না হয় এখনি পদক্ষেপ নিতে হবে।’  জাফরী ভ্যান বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘যারা এখানকার মুসলিম তরুন-তরুনীদের সিরিয়া, ইরাক গিয়ে আইএস বাহিনীতে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে, এরাতো এই বৃটেন এবং ইউরোপ থেকে কাজ করছে, তাদের শেকড় খুঁজে বের করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারত থেকে  আগত অভিবাসীদের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে।’ 

সাবেক ডাচ এমপি আশান্তি বলেন, ‘বাংলাদেশী কমিউনিটি ইউরোপে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এবং তাদের পরিচিতি সংকটে ভোগছে। আর এই সুযোগে একটি গোষ্ঠী এদের ধর্মের নামে একষ্ট্রিমিজমের দিকে ধাবিত করছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃটেন এবং ইউরোপে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ইসলামপন্থী দলগুলোর শাখা রয়েছে’।

সেমিনারে বাংলাদেশে একের পর এক মুক্তমনা ও ব্লগারদের হত্যার জন্যে ইসলামপন্থীদের ইঙ্গিত করে জাফরী ভ্যান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।’

বাংলাদেশের মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে বক্তারা  এব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আরো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সেমিনারে মুক্তমনা লেখকদের হত্যার বিচার ও সুষ্ঠুূ তদন্তের দাবি  জানানো হয়।   

সেমিনারের কী-নোট স্পীকারের বক্তব্যে কনফ্লিক্ট ল’ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজের ডিরেক্টর  অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের  সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সেকুল্যারিজমের বিরুদ্ধে উগ্রবাদীদের অপব্যাখ্যা দায়ী।’

তিনি বলেন, ‘এদের অপব্যাখ্যার কারণে বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার ঘটছে। ইসলামিষ্টরা বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে সমাজে অপব্যাখা দিয়ে যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করছে। আর এসব যারা করছে এরা হলো জিহাদী, ওহাবী এবং মউদুদীবাদের অনুসারী। হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে বসবাস করে আসলেও বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে এসব ইসলামপন্থী দলগুলোর কারণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে, ঠিক একইভাবে গজিয়ে  উঠছে উগ্রবাদ এবং ধর্মের নামে সন্ত্রাস।’

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন  হিউমেনিষ্ট ফেডারেশনের জুলি ফার্নেট, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের অধ্যাপক চেতন ভাট, কাউন্টার এক্সিট্রিমিজম প্রজেক্ট এর রবাটা ব্যানার্জি, রয়েল ইন্সটিটিউট ফর ইন্টার ন্যাশনাল রিলেশনের টমাস রেনার্ড।

বক্তারা বলেন, ‘ধর্মকে পূজি করে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসকে ছড়িয়ে দিচ্ছে উগ্রবাদীরা। এদের শেকড় কিন্তু এক জায়গায়, এরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  ভিন্ন ভিন্ন নামে সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ও সাহায্য সংস্থার ব্যানারে উগ্রবাদকে লালন করছে। বিশ্বব্যাপী কয়েকটি সংগঠন শিক্ষা এবং সেবার নামে লাগাতারভাবে সন্ত্রাস করে যাচ্ছে। এদের শনাক্ত করতে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত এদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করা।’ 

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে  আনসার আহমদ উল্লাহ সন্ত্রাস নির্মুলে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, ‘জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী।’ তিনি বাংলাদেশের ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও  তাদের বিচারের সম্মুখীন করায় সরকারের প্রশংসা করেন। 

প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ইউকে ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির পুষ্পিতা গুপ্তা,  ন্যাদারল্যান্ডের দি হেগের এসটিড ফেরী,  বেলজিয়ামের এরিক ডামিনেস মেনগুইয়াম, আহমদিয়া মুসলিম জামাত নেদারল্যান্ড’র কাওছার আহমদ। 

ব্রাসেলসে ঢাকা সলিডারিটি ফর পীস কমিটির কো-অর্ডিনেটর এমএম মোর্শেদের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে সেমিনারের সমাপ্তি ঘটে।

 

বিডি প্রতিদিন/১৯ জুলাই ২০১৭/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর