২৩ জুলাই, ২০১৭ ১৭:৩০

'কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দক্ষ কর্মী থাকলে ভিসা সংকটে পড়ত না বাংলাদেশ'

কামরুল হাসান জনি, ইউএই :

'কারিগরি প্রশিক্ষণ ও দক্ষ কর্মী থাকলে ভিসা সংকটে পড়ত না বাংলাদেশ'

'সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ কর্মীর পদচারণা থাকলে ভিসা সংকটসহ নানাবিদ সমস্যায় পড়তে হতো না বাংলাদেশকে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের জনবল আমিরাতে  যে হারে এসেছে, সে হারে দক্ষতা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারেনি তারা। যার ফলে স্বদেশি শ্রমিকদের উপর আমিরাতের ধীরে ধীরে নির্ভরতা কমে এসেছে।’ এমনটাই মত প্রকাশ করেন বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাসেলিটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি FARNEK  এর মানবসম্পদ পরিচালক বাংলাদেশি আব্দুল্লাহ-আল মামুন। 

সুইজ্যারল্যান্ড ভিত্তিক এই কোম্পানিতে এক দশক ধরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আমিরাতস্থ এই কোম্পানিতে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার শ্রমিকের মধ্যে ৩৭০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক। এরা দক্ষতার সহিত কাজ করছেন এখানে। বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা উন্মুক্ত হলে আরো ৩ শতাধিক দক্ষ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিক নিয়োগ পাবে এ কোম্পানিতে। একান্ত সাক্ষাতে এমনটাই জানান প্রতিষ্ঠানের এ কর্মকর্তা। 

তিনি বলেন, ‘আমিরাতে নির্মাণ কাজে কিছুটা শিথিলতা এসেছে। নির্মাণ কাজ যে সবসময় হবে তাও কিন্তু নয়। আবার যেসব কাঠামো নির্মিত হয়েছে সেসব কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের আধিপত্য বজায় নেই। এর একমাত্র কারণ আমাদের কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শ্রমিকদের অভাব। ফলে এই স্থানটি দখলে নিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। বিশ্ব এখন পাল্টে যাচ্ছে, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই মানুষের কর্মসংস্থান কঠিন হয়ে পড়ছে। গায়ের জোর দিয়ে কাজ করার চেয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেশি হচ্ছে এখন। এসব দিক বিবেচনা করে আমাদের শ্রমিকদের আগামীতে কিভাবে পারদর্শী করে তুলব তা ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে।’ 

আব্দুল্লাহ-আল মামুন

ভিসা প্রসঙ্গে এ তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমিরাতে ভিসা বন্ধ, বাংলাদেশি শ্রমিকও আসা বন্ধ রয়েছে। সেহেতু কাজের পরিধি না থাকলে এখানে অযথা শ্রমিক আসা কোনভাবে ঠিক হবে না। সঠিক কাজের গ্যারান্টি ও কাজের উপর দক্ষতা অর্জন করে শ্রমিকদের এখানে আসা উচিত। অন্যথায় শ্রমিকরা আমিরাতে এসে স্বাভাবিকভাবে বোঝা হয়ে উঠবে। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিকরাই বড় সম্পদ। তাই শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রেও আনতে হবে পরিবর্তন।’ 

তিনি বন্ধ ভিসা খোলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘ আমাদের দেশে অসংখ্য লোকজন আরব আমিরাতে আসতে আগ্রহী। কিন্তু সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। যদি আমাদের দেশের সাথে আমিরাতের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা সফল না হয়, তাহলে তৃতীয় কোন বন্ধু রাষ্ট্রকে সেক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। গত ৫ বছরে যেখানে কূটনৈতিক সফলতা আসেনি, সেখানে তৃতীয় পক্ষের কোন রাষ্ট্রের কূটনৈতিকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উচিত। এক্ষেত্রে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র সৌদি আরবকে সাথে নিলে হয়ত সফলতার দ্বার খুলতে পারে।’

শ্রমিক চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, ‘২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক্সপো-২০২০ এর আয়োজন হবে। এজন্যে বড় ধরণের প্রস্তুতিও চলছে। সে প্রস্তুতিতে বাংলাদেশিরা ভূমিকা রাখতে পারছি না। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়ার শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে সেখানে। ইতিমধ্যে এক্সপো আয়োজনের অগ্রগতিও হয়েছে কিছুটা । সমানে যে সময়টুকু আছে, সেসময়ে প্রয়োজন টেকনিক্যাল সাপোর্ট। এখন এখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদাই বেশি । যেসব শ্রমিকরা কম্পিউটারসহ টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার মত ক্ষমতা রাখে তাদের কথাই প্রথমে মাথায় রাখতে হবে, নির্ভরতা বাড়াতে হবে তাদের উপর।  তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ধীরে ধীরে আমাদের আধিপত্য বাড়বে এবং আমাদের শ্রমিকদের হয়রানির হারও কমে আসবে ক্রমশ।’

উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে দুবাইয়ে স্থাপিত FARNEK কোম্পানিটি মধ্যেপ্রাচ্যের শ্রম বাজারে বিশাল আধিপত্য বজায় রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। কোম্পানির মূল মালিক ইউরোপ ভিত্তিক সুইসগ্রুপ  Priora। কোম্পানি শুরুতে ৮ শতাধিক লোকবল নিয়ে কার্যক্রম চালু করলেও বর্তমানে সাড়ে ৪ হাজারের মত জনবল রয়েছে তাদের। আমিরাতের দুবাই মল, বুর্জ খলিফা, সিটি ওয়াক, এমিরেটস্ এয়ার লাইনস্, দুবাই এয়ারপোর্ট, ইত্তেহাদ এয়ার লাইনস্, ডু টেলিকম, দুবাই পার্ক এণ্ড রিসোর্ট, ময়দান সোসাইটি ক্যাপ্রিকান টাওয়ার, টু ইন টাওয়ার, সালাম টাওয়ার সহ প্রায় ২৫০০ ভিলা মেনটেইন্স এ কাজ করে থাকে এ ফারনেক কোম্পানি। উক্ত কোম্পানির একজন পরিচালক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কেশবপুরের আব্দুল্লাহ-আল মামুন। কোম্পানিটির নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সুইজারল্যান্ড’র বংশদ্ভেূাত মার্কাস ওবারলিন।

বিডি প্রতিদিন/ ২৩ জুলাই, ২০১৭/ ই জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর