২২ নভেম্বর, ২০১৭ ১১:২৭

দু’বছরেও সন্ধান মেলেনি বাংলাদেশি মাহফুজার

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

দু’বছরেও সন্ধান মেলেনি বাংলাদেশি মাহফুজার

বাংলাদেশী মাহফুজা রহমানের নিখোঁজ-রহস্য দু’বছরেও উদঘাটিত হয়নি। এমনকি, মাহফুজার স্বামী মোহাম্মদ চৌধুরী (৩৯) ও বাংলাদেশ থেকে ফিরেননি। 

নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বেডফোর্ড পার্ক এলাকার ৯ বছর বয়েসী কন্যা সন্তানের মা মাহফুজা (৩০) ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজের পাশাপাশি হান্টার কলেজেও লেখাপড়া করছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকেই মাহফুজা নিখোঁজ। ডিটেকটিভ পুলিশ তন্নতন্ন করে অনুসন্ধানের পর জানতে সক্ষম হন যে, মাহফুজা বাংলাদেশে যাননি। কারণ, তার পাসপোর্ট, ক্রেডিটকার্ডসহ ওয়ালেট, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ডক্যুমেন্ট বাসায় পাওয়া গেছে। 

যদিও মাহফুজার স্বামী পুলিশকে প্রথম দিনেই জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশে মা-বাবা গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হবার সংবাদ পেয়েই তড়িঘড়ি করে মাহফুজা বাংলাদেশে গেছেন এবং একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে নিজেও দুদিনের মধ্যে বাংলাদেশে যাচ্ছেন। এতে তদন্ত কর্মকর্তারা কিছুটা আস্থা পেলেও নিজেরা বাংলাদেশে মাহফুজার বাবার সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে, দুর্ঘটনার কথা সত্য নয় এবং ৯ ডিসেম্বরের পর মাহফুজার সাথে তাদের কোন কথাও হয়নি। 

এমন তথ্য জানার পর ডিটেকটিভ পুলিশ মাহফুজার বাসায় তল্লাশীর পাশাপাশি কংক্রিকেটর আঙ্গিনা এবং মেঝে খুড়েও সন্ধান করা হয় মাহফুজার দেহ। কিছুই পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত মাহফুজার লাশ কিংবা দেহের খন্ডিত অংশও খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ হত্যা-মামলাও রজু করতে পারেনি। অপরদিকে, বিষয়টি তামাদি ঘোষণাও করতে পারেনি। কারণ, মাহফুজা নিখোঁজ হবার পরদিন অর্থাৎ ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সকাল ৮.০৯ মিনিটে তার স্বামী নিজের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে নিকটস্থ একটি স্টোর থেকে ধারালো ১৬ ইঞ্চি কুড়াল ক্রয় করেছেন। একইসাথে বস্তাবন্দি করার কাজে ব্যবহৃত ট্যাপও ক্রয় করেছেন। 

তদন্ত কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর অপরাহ্ন সাড়ে ৪টায় মাহফুজা তার কর্মস্থল বেলভ্যু হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন। এর ৩ মাস পরও মাহফুজা কাজে না ফেরায় কর্তৃপক্ষ দুশ্চিন্তায় পড়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। 

সর্বশেষ ২১ নভেম্বর নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ কর্মকর্তা এনআরবি নিউজকে জানান, ‘তদন্ত অব্যাহত রয়েছে’। মাহফুজার ব্যাপারে কেউ যদি কিছু জানলে তা সরাসরি ১-৮০০-৫৭৭-৮৪৭৭ নম্বরে ফোন করে তদন্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করার আহবানও জানানো হয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে। 

এদিকে, মাহফুজা রহমানের সন্ধান না পাওয়ায় কম্যুনিটিতেও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে। জলজ্যান্ত একজন মানুষ এভাবে হাওয়া হয়ে যাবে-তা কেউই ভাবতে পারেন না। অনেকে ভেবেছিলেন যে, মাহফুজা হয়তো তার গোপন প্রেমিকের হাত ধরে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন। কিন্তু এটি এখন আর ধোপে টিকছে না। কারণ, তার পাসপোর্ট, আইডি, ক্রেডিট কার্ড সবকিছুই বাসায় পাওয়া গেছে। নতুন করে কিছু করাও সম্ভব নয়। আশপাশের কোন দেশে বিনা পাসপোর্টে গেলেও কোন না কোনভাবে তার হদিস পাবার কথা। বিশেষ করে ৯ বছর বয়েসী একমাত্র সন্তানের জন্যে একবার হলেও তার যোগাযোগের চেষ্টা করার কথা। অথবা দেশে মা-বাবাকেও নিজের অবস্থান জানানোর কথা।  সমাজ-সচেতন প্রবাসীরা এখনও মনে করছেন যে, স্বামীই তার নিখোঁজের জন্যে দায়ী বলে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজেও বাংলাদেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। মাহফুজার নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে তার স্বামীকে বাংলাদেশ থেকে ধরে আনার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ। 

 

বিডি প্রতিদিন/২২ নভেম্বর ২০১৭/হিমেল

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর