১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ২০:৩৬

মার্কিন রাজনীতিক আবুলের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে:

মার্কিন রাজনীতিক আবুলের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা

স্বস্ত্রীক আবুল বাশার খান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যামশায়ার অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টের রিপ্রেজেনটেটিভ (রিপাবলিকান) আবুল বাশার খান বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য আমাকে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খেঁটে খাওয়া মানুষের মধ্যেও এক ধরনের জাগরণ দেখেছি। হতাশার তেমন কোন ছাপ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখিনি। সবকিছু আমাকে অভিভূত করেছে।’

বরিশালের পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার সন্তান আবুল বাশার খান গত ১০ জানুয়ারি স্ত্রী মর্জিয়া হুদা খানকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। একান্তই পারিবারিক সফর ছিল। এর ৪ বছর আগে গিয়েছিলেন ২৭ বছরের অধিক সময় যাবত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আবুল খান। আগের চেয়ে এবার বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে চলার ঘটনাবলি প্রত্যক্ষ করেছেন বলে উল্লেখ করলেন আবুল খান। একমাস ৬ দিন ছিলেন বাংলাদেশে। রাজধানী ঢাকা, পর্যটন নগরী কক্সবাজার, সুন্দরবন অধ্যুষিত খুলনা এবং বরিশালের বিভিন্ন এলাকা পরিভ্রমণ করেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছেন। রেস্টুরেন্টে বসেছেন। রিক্সা-ভ্যানেও ঘুরেছেন।

‘মনে হয়েছে স্বপ্ন দেখছি। খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে জেগে উঠার প্রবণতা আমাকে দারুনভাবে আনন্দিত করেছে। কৃষকরাও আগের মত হতাশায় নেই। দিন মজুর, রিক্সাচালকরাও দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার সমস্যায় নেই’-উল্লেখ করেন আবুল খান।

আবুল খান বলেন, হোটেল, মোটেল, ছোট-বড়-মাঝারি রেস্টুরেন্টে জমজমাট অবস্থা থেকেই সর্বস্তরের মানুষ যে আর্থিকভাবে কোন সমস্যায় নেই-তা আঁচ করা যায়।

আবুল উল্লেখ করলেন, ৪ বছর আগে মনে হয়েছিল যে ধনী আর গরিবের মধ্যেকার ব্যবধান বিশাল তথা আকাশ-পাতালের মত। এবার তেমনটি মনে হয়নি। নিম্নবিত্তরা মধ্যবিত্তে এবং মধ্যবিত্তরা আরেকটু উঁচুতে উঠেছে বা চেষ্টা করছেন। ভিক্ষুক দেখেছি রাজধানী ঢাকার ট্রাফিক লাইটে। আমার মনে হয়েছে, ওরা স্বভাবদোষে ভিক্ষুকই থাকতে আগ্রহী। অথবা বিশেষ চক্রের কবলে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।

উন্নয়নের সাথে সঙ্গতি রেখে রাজধানী ঢাকায় যানজটের অবসানে সরকারের যে ধরনের পরিকল্পনা থাকা দরকার, তা বিন্দুমাত্র নজরে পড়েনি। এটি খুবই পীড়াদায়ক। যানজট অব্যাহত থাকলে বিদেশীরা আগ্রহ হারাবেন এবং দেশের মানুষেরও কর্মদিবসের বড় একটি অংশের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে না-মন্তব্য এই মার্কিন রাজনীতিকের। ‘তবে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে ভান্ডারিয়া যেতে তেমন কষ্ট হয়নি। যানজটের ধকলও পোহাতে হয়নি। লঞ্চগুলোও দেখেছি বড় আকারের। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে লঞ্চে, ঘাটে সর্বত্র। বরিশাল থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ভান্ডারিয়া গেছি-যা ছিল কল্পনারও অতীত-উল্লেখ করেন আবুল খান।

১৯৮১ সালের স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবুল। তিনি এসএসসি করেন ঢাকার মুসলিম গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে এবং নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে এইচএসসি করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন আবুল খান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব আর অহংকারের অনেক কিছুই রয়েছে। প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মতভেদ পরিহার করা জরুরি সকল বাংলাদেশি আমেরিকানের। তাহলেই চলমান উন্নয়ন-অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে এবং সেই ধারা এগিয়ে নিতে আমাদেরকেও নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তা দিতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকলে, আমরাও খুশী থাকবো।’

প্রবাসী হবার পর দীর্ঘ ১৯ বছর ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে। ২০০০ সালে সপরিবারে গমন করেছেন নিউ হ্যামশায়ার অঙ্গরাজ্যের সীব্রুক টাউনে। সেখান থেকেই গত কয়েক বছর যাবত স্টেট রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে নির্বাচিত হচ্ছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় আর কোন বাংলাদেশি নেই। সকলেই শ্বেতাঙ্গ। সকলের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর