২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১১:৫১

অভিবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫ দফা

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক

অভিবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণে জাতিসংঘে বাংলাদেশের ৫ দফা

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের বার্ষিক সংসদীয় শুনানির শেষ দিন ছিল শুক্রবার। বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ডেলিগেশনের দলনেতা ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন সংকটের স্থায়ী অবসানে ৫ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

মুহাম্মদ ফারুক খানের প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে ১. এমন কোন আইন পাশ করা যাবে না যা নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়মিত অভিবাসনের পরিপন্থী; ২. অভিবাসীদের মর্যাদা, মানবাধিকার ও স্বার্থ বিরোধী আইনও যেন আমরা পাশ না করি; ৩. অভিবাসী অবস্থা নির্বিশেষে অভিবাসীদের মানবাধিকার সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রেখে আইন পাশ করতে হবে; ৪. পাশকৃত সকল আইনে নাজুক অবস্থায় পতিত অভিবাসীদের সুরক্ষার কথা থাকতে হবে; ৫. পাশকৃত আইনসমূহে অভিবাসী পাচার, প্রতারণা ও ট্রাফিকিং এর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ফারুক খান বলেন, যখন অ্যাডাম স্মিথ (আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক) ভূমি, শ্রম ও অর্থ নিয়ে কথা বলেন, তিনি অবশ্যই বোঝাতে চান এগুলোর সম্মিলিত ধারাই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। আমরা এখন শুধু বৈশ্বিক অর্থনীতি, বিশ্বগ্রাম নিয়ে কথা বলি, কিন্তু বৈশ্বিক অভিগমন, কর্মী ও শ্রমিকের বৈশ্বিক চলাচল নিয়ে কথা বলি না। এখানে অনেকেই মানবাধিকারের কথা বলেছেন। এটি অবশ্যই সেই অভিবাসী মানুষদের মানবাধিকার যারা এই পৃথিবী নামক গ্রহে একটু ভালোমতো বাঁচতে চায়। আসুন আমরা সকলে জাতীয়তা, আমলাতন্ত্র ও নিরাপত্তা কেন্দ্রিক জটিলতার উর্ধ্বে উঠে অভিবাসনের এই বৈশ্বিক কম্প্যাক্টের জন্য প্রাধিকার ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং এর বাস্তবায়ন ও প্রশমন প্রক্রিয়ার উপর জোর দেই, যাতে কেউ পিছনে পড়ে না থাকে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে এই কম্প্যাক্ট হবে বৈশ্বিক অভিবাসন ব্যবস্থাপনার একটি তাৎপর্যপূর্ণ দলিল।

এমপি ফারুক খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সংসদীয় দলটি আইপিইউ’র সভাপতির সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে আইপিইউ’র চলমান কর্মকাণ্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সভাপতি গ্যাব্রিয়েলা কুইভাস ব্যারণ বিস্তারিত আলোচনা করেন।

বিকালে ‘অভিবাসনের বৈশ্বিক কমপ্যাক্ট ও ফলোআপ: সংসদ সদস্যগণের ভূমিকা’ শীর্ষক বার্ষিক সংসদীয় শুনানির এক সাইড ইভেন্টে প্যানেলিস্ট হিসেবে সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আমাদের অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক নীতির ঘাটতি মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে পথ দেখায়। শরণার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত নিউইয়র্ক ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ‘অভিবাসনের বৈশ্বিক কমপ্যাক্ট” ধারণাটি এনেছিল এবং এ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবনা অন্যান্য দেশ গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে এই কমপ্যাক্টটি হবে অভিবাসন বান্ধব ও প্রাধিকারভিত্তিক যা বৈশ্বিক অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে প্রধানমন্ত্রী মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছেন মর্মে উল্লেখ করে ইসরাফিল এমপি বলেন, আমরা চাই বাস্তুচ্যুত এসকল মিয়ানমারের নাগরিক স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাবে।

নিরাপদ, নিয়মতান্ত্রিক ও নিয়মিত অভিগমনের কম্প্যাক্টের ক্ষেত্রে অভিবাসীদের মানবাধিকার সুরক্ষা, শ্রমবাজারের প্রয়োজনে নতুন নতুন চ্যানেল উন্মুক্ত করা, অভিবাসীদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়াসহ বেশ কিছু প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন এমপি ইসরাফিল আলম।

মাইগ্রেশন কম্প্যাক্টের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের বিবিধ ভূমিকা ও দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা অভিবাসনের উপর একটি ‘জাতীয় সংসদীয় ককাস’ গঠন করেছি। এই ককাস গ্লোবাল কম্প্যাক্টের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কনসালটেশনে নিয়োজিত রয়েছে।

আইপিইউ’র বার্ষিক সংসদীয় শুনানির দুদিন ব্যাপী এই শুনানিতে আরও অংশ নেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, ফখরুল ইমাম, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আয়েন উদ্দিন, রোকসানা ইয়াসমিন ছুটি ও জেবুন্নেছা আফরোজ।

বিডি প্রতিদিন/২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর