২০ আগস্ট, ২০১৮ ১২:৪৭
বঙ্গবন্ধুর ঘাতক-একাত্তরের ঘাতকেরাও নজরে

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধীদের সন্ধানের ১৫ বছর

১১০ দেশের ৭৫ হাজার মামলা পর্যালোচনা

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধাপরাধীদের সন্ধানের ১৫ বছর

বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অপরাধে জড়িতরা যাতে যুক্তরাষ্ট্রকে স্বর্গরাজ্য হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) বিভাগ চালু করে ‘আইনি ও তদন্ত টিম’। এর  ৫ বছর পর গড়ে তোলা হয় আইস’র ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইম সেন্টার’। যা যুক্তরাষ্ট্রে মানবতা লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধ শনাক্ত, তদন্ত এবং নির্মূলের কাজ করে থাকে। 

১৫ বছর ধরে এ কেন্দ্র ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো আইস’র হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন্সকে (এইচএসআই) এ ধরনের কাজে সহায়তা করে আসছে। এ সময়ে সেন্টারটি যুদ্ধাপরাধ, নির্যাতন, আদিবাসি নির্মূল অভিযানের শিকার হওয়া অসংখ্য মানুষকে ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ও এর কর্মীরা নিশ্চিত করতে চেয়েছে যাতে যুক্তরাষ্ট্র মানবতালঙ্ঘনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র না হয়ে উঠে। এই সংস্থার কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দন্ডিত রাশেদ চৌধুরী, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে দন্ডিত আল বদর আশরাফুজ্জামান খান এবং জব্বার ইঞ্জিনিয়ারের বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয়েছে কিনা তা এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করতে পারেননি। 

এমনকি বিচার বিভাগে মিডিয়া সম্পর্কিত কর্মকর্তারাও নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। যদিও ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘দ্য ডেইলি কলার’ (The Daily Caller, a conservative American news and opinion website based in Washington, D.C.)  এ গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ঘাতক মেজর (অব.) রাশেদ আহমেদ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের আবেদন অনুযায়ী ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

যদিও এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় মুখপাত্রী নিকল নাভাস সরাসরি কোনো তথ্য না জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক এ কে এম মহিউদ্দিনও যুক্তরাষ্ট্রে এসাইলাম চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সে আবেদন নাকচ করে ২০০৭ সালে তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। 

১০ আগস্ট ছিল এই অভিযানের ১৫ বছর পূর্তির দিন। সে উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইম সেন্টারের ইউনিট চিফ মার্ক শেফার এ সংবাদদাতাকে এক বিবৃতিতে বলেন, আইস’র সহায়তায় গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ তদন্তে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন, আমরা এজন্য আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজারে প্রতিটি অফিস ও অন্যান্য অফিসের কর্মীদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন আইন ও সংস্থার সহায়তা পাচ্ছি। এ সেন্টারটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন মার্ক শেফার।

নির্বাচিত এজেন্ট, আইনজীবী, গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ, ফৌজদারি গবেষণা বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকদের সমন্বয়ে গঠিত সেন্টারের  ৫০ সদস্যের দলটি বর্তমানে তাদের জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োগ ঘটিয়ে মানবতা লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। এই সেন্টারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের হিউম্যান রাইটস ইউনিট এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, স্টেট অ্যান্ড ডিফেন্স।

নানা উদ্যোগের মাধ্যমে সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে মানবতালঙ্ঘনকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিরাপদ স্বর্গ হিসেবে গড়ে উঠা থেকে রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ সেন্টার।

হিউম্যান রাইটস ল সেকশনের চিফ লিসা কভেন বলেন, ১৫ বছর ধরে টিমের প্রতিটি সদস্য আমাদের মিশন সফলে কাজ করে চলেছে। তাদের আন্তরিকতা ও দায়বদ্ধতা ছাড়া এ সেন্টার এমন অসাধারণ কাজ করতে পারত না। আমরা অসংখ্য ব্যক্তি ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের সকলের প্রচেষ্টাই নিশ্চিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই মানবতা লঙ্ঘনকারীদের নিরাপদ স্বর্গ হয়ে উঠবে না।

২০০৩ সাল থেকে এ সেন্টার ১১০টি দেশের ৭৫ হাজারটি মামলা নিয়ে কাজ করেছে। বিভিন্ন দেশের ২৬০ সন্দেহভাজন মানবতাবিরোধীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে দিয়েছে। ৯০৮ জন চিহ্নিত ও সন্দেহভাজন মানবতাবিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করার পাশাপাশি আরো ১২২জনকে  দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। 

এ সেন্টার মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত অপরাধে ৪১০ জনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে সেন্টারটি ১৩৫টি তদন্ত পরিচালনার মাধ্যমে ৯৫ দেশের ১ হাজার সন্দেহভাজন মানবতাবিরোধীকে বের করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইম সেন্টারের বড় সাফল্য চার্লস টেইলর জুনিয়রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। লাইবেরিয়ায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৬টি মামলায় তার ৯৭ বছরের সাজা হয়েছে। এলসালভাদরের যুদ্ধে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের অপরাধে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ন্যাশনাল গার্ডের পরিচালক কার্লোস ভিডস, হোজে গার্সিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে ১৫ বছর ধরে হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইম সেন্টার মানবাধিকার রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। 

এ সাফল্যের স্বীকৃতিও পেয়েছে এ সেন্টার। ২০১৫, ২০১৬ সালে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন্সের সহকারী পরিচালক লুইস এ রুডি বলেন, মানবতা লঙ্ঘনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার মাধ্যমে হিউম্যান রাইটস ভায়োলেটর্স অ্যান্ড ওয়ার ক্রাইম সেন্টার যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর