১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৩:১৯

নিউইয়র্কে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ সেমিনার

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে :

নিউইয়র্কে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ সেমিনার

‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অকথ্য-অবর্নণীয় নির্যাতন, বর্বরোচিত হামলা, নৃশংসতার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিভৎসরূপের প্রকাশ ঘটেছে। প্রাণ বাঁচাতে ১০ লাখের মত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসার পর মানবিকতার দরজা খুলে দিয়ে তাদেরকে আশ্রয় প্রদানের মধ্য দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সাহসিকতা আর মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, তার মধ্য দিয়েই বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। 

১৬০ মিলিয়ন মানুষের ভারে জর্জরিত বাংলাদেশ বিরাটসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় জাতিসংঘসহ সারাবিশ্বে বাঙালিদের তথা বাংলাদেশের সম্মান অনেক বেড়েছে। সময়োচিত এবং সাহসী এই সিদ্ধান্তের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বত্র প্রশংসিত হচ্ছেন’-এসব কথা বলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা। 

সোমবার সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উত্তর আমেরিকা শাখার উদ্যোগে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে চলমান সাংস্কৃতিক সংগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনারে সাদিয়া ফয়জুন্নেসা আরো বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মত তার কন্যা শেখ হাসিনাও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বলিষ্ঠ একজন নেতায় পরিণত হয়েছেন। ধর্মের নামে যে কোন ধরনের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং সাম্প্রদায়িক তৎপরতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছেন। বাংলার মাটিকে কোনভাবেই জঙ্গিবাদের উৎস স্থল হিসেবে পরিণত না করার ঘোষণাও দিয়েছেন।’

কন্সাল জেনারেল বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার মত জঘন্য অপতৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। এদের ব্যাপারে সামাজিক প্রতিরোধ রচনায় শিল্পী-সাহিত্যিক-লেখক-সাংবাদিক তথা সাংস্কৃতিক কর্মীদের অপরিসীম দায়িত্ব রয়েছে, যা তারা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে নব্ব্ইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনেই স্বাক্ষর রেখেছেন।’

সেমিনারের প্রধান আলোচক বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে কখনোই সাম্প্রদায়িকতার সাথে পরিচয় ঘটেনি। সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত থেকেছে। সাম্প্রদায়িক শব্দের সাথে বাঙালিদের পরিচয় ঘটে বৃটিশরা লেজ গুটিয়ে চলে যাবার সময়ে। দ্বিজাতি তত্ত্ব নামে উদ্ভট একটি তত্ত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটানো হয়। আর এটি ওরা করেছে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে, যাতে বাঙালিরা কখনোই সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে না পারে।’

৪৭ এ দেশ ভাগের পরই বাঙালিরা নানাভাবে অত্যাচারিত, বঞ্চিত, নিষ্পেষিত হতে থাকে। মায়ের ভাষার অধিকারও কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হয়। কিন্তু অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাঙালির লড়াইয়ে ধরাশায়ী হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর অসাম্প্রদায়িক চেতনার জয়গানে স্বাধীন একটি ভূখন্ড স্থান করে নেয় বিশ্বের মানচিত্রে। সেটি আগলে রাখতে সাংস্কৃতিক কর্মীরা সদা সোচ্চার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন চারুশিল্পী কামাল পাশা চৌধুরী।
সেমিনারের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনকালে জোটের উত্তর আমেরিকাস্থ আহবায়ক মিথুন আহমেদ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের মত বেশ কটি সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কোন রাজনৈতিক সংগঠনের ছত্রছায়া কিংবা মদদে। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক হলেও ভোটের রাজনীতিতে একধরনের জায়েজ হতে চলেছে। তবে সাংস্কৃতিক কর্মীরা সদা সোচ্চার রয়েছেন যে কোন ধরনের অসাম্প্রদায়িক তৎপরতা রুখে দিতে।’
প্যানেল আলোচকদের মধ্যে ছিলেন কন্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাবেক ডীন চিত্রশিল্পী মতলুব আলী, নাট্যশিল্পী রোকেয়া রফিক বেবী, প্রামাণ্যচিত্রি রওশনআরা নিপা, লেখক ফাহিম রেজা নূর। সকলেই দেশ ও প্রবাসে সাম্প্রদায়িক তৎপরতার বিরুদ্ধে সমগ্র জনগোষ্ঠিকে সজাগ রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজের সংকল্প ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রবাসীরা শেষপর্বে প্যানেলিস্টদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জেনেছেন। 

বিডি-প্রতিদিন/ই-জাহান

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর