২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২১:২১

হাজিদের সেবাতেই আত্মতৃপ্তি পান মৌসুমী হজকর্মীরা

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব

হাজিদের সেবাতেই আত্মতৃপ্তি পান মৌসুমী হজকর্মীরা

আমাদের সেবার কোন পরিধি বা সীমানা নাই। যার যার সাধ্য অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করছি। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু সমস্যা চলে আসে, যা অতীতে কখনো ফেস করিনি। এখন সাহস হয়ে গেছে, তাছাড়া আমাদের স্যারেরা যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছেন বলেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারছি।

এভাবেই নিজের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বলছিলেন বাংলাদেশ হজ মিশন মদীনার মৌসুমী হজকর্মী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আমিনুর রহমান। দীর্ঘ চার বছর যাবৎ খণ্ডকালিন চুক্তিভিত্তিক কাজ করা এই প্রবাসী আরও বলেন, টাকাটা এখানে আমার আমার কাছে মুখ্য নয়। দেশ থেকে লক্ষাধিক হাজি আসে; সেখানে অধিকাংশ বয়স্ক হাজি থাকেন; তাদের সেবা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি।

২০১৮ সালের হজ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লক্ষ ২৭ হাজার বাংলাদেশি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব আসেন, আর এই হাজিদের সেবা দেয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হয় সাড়ে ৪শ' নারী-পুরুষ মৌসুমী হজ কর্মী। যারা হজে পুরো সময় জুড়ে জেদ্দা, মক্কা, মদীনা, মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাধারণ প্রবাসী, বাংলাদেশি স্কুল এবং সৌদি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাবেক শিক্ষক এবং গৃহিনী।

বছরের অন্যান্য সময় তারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকলেও হজ মৌসুমের দুই/আড়াই মাস তারা নিয়োজিত থাকেন হাজিদের সেবা দেয়ার কাজে। হজকর্মী, গাড়িচালক, অনুবাদক, পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন তারা। দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজের বিপরীতে কাজের ধরণ অনুযায়ী ১১০ থেকে ১৩০ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত বেতন দেয়া হয়। মদীনায় আগে থেকেই চালু থাকলেও মক্কায় এ বছর প্রথমবারের মতো নিয়োগ দেয়া হয়েছে নারী হজকর্মী।

মদীনার হজকর্মীদের সুপারভাইজার রেজাউল করিম বলেন, এবারের হজকে সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের স্যারদের নির্দেশনা মোতাবেক দায়িত্ব পালন করেছি। বিভিন্ন বয়সের ভিন্ন ভিন্ন মতের হাজিরা হজ পালনে আসেন, আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করি তাদেরকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার।  

২ বছর যাবৎ হজকর্মী হিসেবে কাজ করা প্রবাসী শিক্ষার্থী ফাতিমা খলিলুর রহমান বলেন, নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করছি এই জন্য যে, আল্লাহর মেহমান হিসেবে সৌদি আরবে আসা নিজ দেশের মানুষদের সেবা করতে পারছি। গত বছরের চাইতে এ বছর আমাদের কাজের মান ভালো ছিলো। সরকার সুযোগ দিলে অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আল্লাহর মেহমানদের পাশে থেকে সেবা দেয়া অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তিনি।

এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমা আবুল খায়ের বলেন, 'হাজিদের সেবা করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। তাছাড়া এখান থেকে যা পাই সেটা দিয়ে আব্বুকে হেল্প করতে পারছি এটাকে বড় একটি পাওয়া বলে মনে করি।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মদীনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মৌসুমী হজ অফিসার এবিএম আমিন উল্লাহ্‌ নুরী বলেন, হজ অফিস, বিমান বন্দর, চেক পয়েন্ট, হাসপাতাল ও হোটেল, হারামা শরীফসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের হজকর্মীরা রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।  

"হাজিদের খিদদমত আমাদের ইবাদত, হাজীদের খিদমত আমাদের ইজ্জত"। এই শ্লোগানগুলো দিয়ে আমরা হজকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করি। ঠিকমতো কাজ করবে, ফাঁকি দিবে না এমন ওয়াদা করে তারা সকালে কাজে বের হয়। তারা এই কাজের লোক না হলেও তাদের সেবায় সন্তুষ্ট বলে জানান হজ মন্ত্রণালয়য়ের যুগ্ম সচিব আমিন উল্লাহ্‌ নুরী।  

হজ কাউন্সিলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান জানান, হাজিদের সুযোগ-সুবিধা দেখার জন্যে প্রায় সাড়ে ৪শ' হজকর্মী রয়েছেন। তাদের সবাই হাজিদের খেদমতে নিয়োজিত। এরা সবাই এখানকার প্রবাসী ও নিবেদিত প্রাণ। হজ মৌসুমে এখানে কাজ করে হজকর্মীরা একদিকে আর্থিকভাবে বেশ ভালো সন্মানী পান, তার চেয়ে বড় কথা, দেশের মানুষদের প্রত্যক্ষ সেবা তথা আল্লাহর মেহমানদের জন্য নিবেদিত প্রাণে কাজ করে নিজেরাও আনন্দ পান।

বিডি-প্রতিদিন/২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর